প্রতিবন্ধী দম্পতির আবার ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ

চোর গ্রেপ্তার করার পাশাপাশি আর্থিক সহায়তা নিয়ে প্রতিবন্ধী দম্পতি রিপন আহমদ ও জোসনা আক্তারের পাশে দাঁড়িয়েছে পুলিশ। ছবি: প্রথম আলো
চোর গ্রেপ্তার করার পাশাপাশি আর্থিক সহায়তা নিয়ে প্রতিবন্ধী দম্পতি রিপন আহমদ ও জোসনা আক্তারের পাশে দাঁড়িয়েছে পুলিশ। ছবি: প্রথম আলো

শারীরিক প্রতিবন্ধিতার চ্যালেঞ্জ নিয়েই তাঁরা দোকানটি শুরু করেন। দোকানের নাম 'রিপন স্টোর'। করোনাকালে অন্যদের মতো তাঁদেরও লোকসান গুনতে হয়। তিন মাস দোকান বন্ধ ছিল। সম্প্রতি সবশেষ সঞ্চয়টুকু দিয়ে নতুন মালামাল তুলে দোকান খোলেন। যেদিন দোকান খোলেন, সেদিন রাতেই চুরি হয় সব মালামাল।

সব হারিয়ে দিশেহারা সিলেটের এই শারীরিক প্রতিবন্ধী দম্পতির সামনে আবারও ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ এল। চোর গ্রেপ্তার করার পাশাপাশি আর্থিক সহায়তা নিয়ে এই দম্পতির পাশে দাঁড়িয়েছে পুলিশ।
সিলেট নগরের আখালিয়া এলাকায় প্রতিবন্ধী দম্পতি রিপন আহমদ ও জোসনা আক্তারের দোকানে চুরির ঘটনায় জড়িত তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল শুক্রবার দুপুরে সিলেট মহানগর পুলিশের মিডিয়া অ্যান্ড কমিউনিটি সার্ভিস বিজ্ঞপ্তি দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে।

যোগাযোগ করলে মহানগর পুলিশের (এসএমপি) মুখপাত্র ও অতিরিক্ত উপকমিশনার জ্যোতির্ময় সরকার এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, চুরির ঘটনায় প্রতিবন্ধী দম্পতির দায়ের করা সাধারণ ডায়েরি (জিডি) মামলায় রূপান্তর করে আটক তিনজনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। তিনি দাবি করেন, প্রতিবন্ধী দম্পতির দোকানে চুরির কথা পুলিশের কাছে স্বীকার করেছেন ওই তিনজন।
গ্রেপ্তার তিনজন হলেন মো. শুক্কুর আলী (১৮), আবু মিয়া (২০) ও মনির (২৫)। তাঁরা নগরীর আখালিয়ার নিহারিপাড়ার বাসিন্দা।

মহানগর পুলিশের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শুক্কুর আলী আখালিয়ার নিহারিপাড়ায় একটি ভাড়া বাসায় বাস করতেন। তাঁর বিরুদ্ধে চুরির বিভিন্ন অভিযোগ থাকায় গত বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে পাঁচটায় তাঁকে আটক করে কোতোয়ালি থানা হাজতে রাখা হয়। রাতে জিজ্ঞাসাবাদ করার সময় প্রতিবন্ধী দম্পতির দোকানে চুরি করার কথা তিনি স্বীকার করেন। তাঁর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গতকাল সকালে অভিযান চালিয়ে আবু মিয়া ও মনির নামের দুজনকে আটক করা হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, গ্রেপ্তার তিনজন গত ৬ জুলাই রাত ১০টার দিকে 'রিপন স্টোর' নামের দোকানে চুরির কথা স্বীকার করেছেন। দোকানে বিভিন্ন কোম্পানির ৭০ হাজার টাকার সিগারেট, ২০ হাজার টাকার ইলেকট্রিক সামগ্রী, বিভিন্ন কোম্পানির উন্নত মানের ১০টি লাইট (মূল্য ছয় হাজার টাকা), দুই কার্টন পেপসি ও সেভেন আপ, ক্যাশবাক্সের ২০ হাজার টাকাসহ ১ লাখ ১৭ হাজার ২০০ টাকার মালামাল চুরি হয়। এসব মালামাল উদ্ধার ও তিনজনের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে।
সিলেট নগরীর নিহারিপাড়ার বাসিন্দা রিপন ও তাঁর স্ত্রী জোসনা শারীরিক প্রতিবন্ধী। দুজনের উচ্চতা চার ফুটের কম। তবে কারও দয়ার পাত্র হয়ে বসে থাকেননি তাঁরা। কঠোর পরিশ্রম করে জীবন চালাতেন। এ জন্য সবার কাছে তাঁরা পরিশ্রমী দম্পতি হিসেবে পরিচিত। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে নগরের মদিনা মার্কেট এলাকার পাশে নিহারিপাড়ার মুখে ছোট্ট একটি দোকান দেন তাঁরা। দোকানটি করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে তিন মাস বন্ধ ছিল। সম্প্রতি দোকান খুলে সবশেষ সঞ্চয় দিয়ে নতুন মালপত্র তোলেন। যেদিন দোকানে নতুন মালপত্র তোলা হয়, সেদিন রাতেই চুরি হয়।
৫ জুলাই রাতে দোকানে চুরির ঘটনাটি ঘটেছিল। পরদিন সিলেটের কোতোয়ালি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন রিপন। কিন্তু ঘটনার দুই সপ্তাহ পরও চোর ধরা না পড়ায় চিন্তিত ছিলেন এ দম্পতি। টানা দুই সপ্তাহ বন্ধ ছিল দোকান। এ নিয়ে ২২ জুলাই প্রথম আলোয় 'ঘুরে দাঁড়ানো হবে না তাঁদের' শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হলে পুলিশ সক্রিয় হয় চোর ধরার জন্য।
প্রথম আলোয় প্রতিবেদন পড়ে রিপন-জোসনা দম্পতির দোকান থেকে যে নগদ ২০ হাজার টাকা চুরি হয়, পুলিশের চার কর্মকর্তা মিলে সেই টাকা দিয়ে ওই দম্পতিকে তাঁদের দোকান চালু করার অনুরোধ করেন। পুলিশ কর্মকর্তাদের ২০ হাজার টাকা রিপন-জোসনা দম্পতির হাতে ২৩ জুলাই হস্তান্তর করেছিলেন সিটি করপোশেনের স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর মখলিছুর রহমান কামরান। এরপর 'রিপন স্টোর' আবার খোলা হয়।
ব্যবসার পুঁজি হিসেবে ২০ হাজার টাকা হাতে পেয়ে রিপন ও জোসনা প্রথম আলো ও পুলিশের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
চুরির ঘটনার প্রায় এক মাস পর জড়িত তিনজন গ্রেপ্তার হওয়ায় স্বস্তি প্রকাশ করেছেন প্রতিবন্ধী এই দম্পতি। গতকাল দুপুরে যোগাযোগ করলে রিপন আনন্দের সঙ্গে বলেন, ‘কাম অই গেছে। চোর তিনটারে ধরছে পুলিশ। এই তিনটারে আমিও সন্দেহ করছিলাম। এখন শান্তিতে ব্যবসাপাতি করতে পারমু।’