প্রতিবন্ধী নারীদের ভিন্ন গল্প, ভিন্ন কষ্ট

শারীরিক প্রতিবন্ধিতার কারণে নানা প্রতিবন্ধকতা ঠেলে এগিয়েছেন শারমিন আক্তার। করোনাকালে নতুন সংকটে পড়েছেন রাজশাহী কলেজের সম্মান শেষ বর্ষের এই ছাত্রী। স্কুল ও কলেজশিক্ষার্থীদের বাসায় ব্যাচে পড়িয়ে মাসে ১৩-১৪ হাজার টাকা আয় করতেন তিনি। এখন করোনার কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় আর কেউ পড়তে আসে না। এপ্রিল থেকে আয় বন্ধ।

বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী মেয়েটি (১৭) বাসায় একা ছিল। গত ৯ অক্টোবর পাশের গ্রামের ছেলে তৌকির (২১) ঘরে ঢুকে তাকে ধর্ষণ করে। একপর্যায়ে মেয়েটির ভাই ও মামা ঘরে ফিরে ঘটনা দেখে হাতেনাতে ধরে ফেলেন তৌকিরকে। দেওয়া হয় পুলিশে। দুই মাস জেল খেটে আসামি জামিনে বেরিয়ে পরিবারটিকে হুমকি দিচ্ছে মামলা তুলে নিতে। ঘটনাটি নরসিংদীর পলাশ উপজেলার।

শারীরিক ও বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী এক নারী (৩৫) এক বাড়িতে গৃহকর্মী হিসেবে থাকার সময় গৃহকর্তার মাধ্যমে ধর্ষণের শিকার হন। অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়লে নানা চাপে গৃহকর্তা তাঁকে বিয়ে করতে বাধ্য হন। যে হতে পারত অবলম্বন, সেই সন্তান জন্ম নেওয়ার ১০ মাস পর মারা যায়। ওই নারীর দাবি, গলা টিপে তাঁর মেয়েকে হত্যা করা হয়েছে। ওই সংসারে তাঁর ঠাঁই হয়নি। ফিরে গেছেন নীলফামারী জেলার জলঢাকা উপজেলায় নিজ গ্রামে। এখন গ্রামে এর-ওর কাছে চেয়ে-চিন্তে দিন চলে।

হুইলচেয়ারে চলাচলকারী চাকরিজীবী রওনক জাহান (২৮) করোনাকালে ভিন্ন ধরনের কষ্টের শিকার হয়েছেন। ঢাকায় উইমেন উইথ ডিজঅ্যাবিলিটিস ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের (ডব্লিউডিডিএফ) প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত রওনক জাহান ২০১১ সালে ইডেন মহিলা কলেজে সম্মান প্রথম বর্ষে পড়ার সময় সিঁড়ি থেকে পড়ে পক্ষাঘাতগ্রস্তু হয়ে পড়েন। চলাফেরার সীমাবদ্ধতায় করোনাকালে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে তাঁকে অতিমাত্রায় অন্যের ওপর নির্ভর করতে হয়েছে। করোনার শুরুতে দীর্ঘ সময় দেখা হয়নি ঢাকার বাইরে থাকা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে।
করোনাকালে এমন ভিন্ন ভিন্ন গল্প প্রতিবন্ধী নারীদের। সামাজিক অবস্থান ও প্রতিবন্ধিতার ধরন অনুসারে তাঁদের গল্প ভিন্ন হলেও কারও কষ্ট কারও চেয়ে কম নয়।

সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিবন্ধিতা শনাক্তকরণ কর্মসূচির আওতায় পরিচালিত জরিপ অনুযায়ী দেশে প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ২১ লাখ ৬৭ হাজার ৭৩৬ জন। তাঁদের মধ্যে নারী প্রতিবন্ধীর সংখ্যা ৮ লাখ ৩৩ হাজার ২৬৯ জন। তবে বেসরকারি সংগঠনগুলোর মতে, দেশে প্রতিবন্ধী ব্যক্তির সংখ্যা দেড় কোটির বেশি। তাঁদের অর্ধেকসংখ্যক নারী প্রতিবন্ধী। তালিকাভুক্ত না হওয়ায় করোনাকালে বিপুলসংখ্যক প্রতিবন্ধী ব্যক্তি সরকারি সহায়তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। স্বাভাবিক শারীরিক সক্ষমতার নারীদের তুলনায় তাঁদের সহিংসতা-সংকটের শিকার হওয়ার অভিজ্ঞতা হয় দুই থেকে চার গুণ বেশি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগ থেকে মাস্টার্স পাস শরীফা চট্টগ্রামের গোলপাহাড় এলাকায় সরকারি কোয়ার্টারে থাকেন। স্বামীও দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। পরিবারে আরও রয়েছে মা ও কিশোর বয়সী দুই ছেলে-মেয়ে।

সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব এবং প্রতিবন্ধিতা শনাক্তকরণ কর্মসূচির পরিচালক আশরাফী আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, তালিকাভুক্ত হতে এলে কোনো প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে ফেরানো হয় না। সারা দেশে ৫৭২টি ইউনিটে এই শনাক্তকরণ চলমান প্রক্রিয়া। ২০১২ সাল থেকে চিকিৎসকের সনদের ভিত্তিতে মোট ১২ ধরনের প্রতিবন্ধিতার যেকোনো একটি শনাক্ত হলে কোনো নারী–পুরুষ ও শিশুকে প্রতিবন্ধী তালিকাভুক্ত করা হয়।

বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী মেয়েটির পরিবার ভয়ে

নরসিংদীর পলাশ উপজেলায় ধর্ষণের শিকার বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী মেয়েটিকে মামলার বিষয়ে সহায়তা দিচ্ছে সেন্টার ফর ডিজঅ্যাবিলিটি ইন ডেভেলপমেন্টের (সিডিডি) স্থানীয় সহযোগী সংগঠন স্পন্দন। আসামি তৌকির জামিনে মুক্ত হয়ে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে উল্লেখ করে থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন মেয়েটির মা। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তিনি মানুষের বাড়িতে কাজ করেন। তিন ছেলে–মেয়ের মধ্যে মেয়েটি ছোট। ঘটনার সময় তিনি অন্য বাড়িতে কাজে ছিলেন।

মেয়েটি ও তার পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে পুলিশকে ১৪ জানুয়ারির মধ্যে প্রতিবেদন দিতে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে চিঠি দিয়েছেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশন।
মামলাটির বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে পলাশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মো. নাসির উদ্দীন প্রথম আলোকে বলেন, জামিনের বিষয়টি আদালতের এখতিয়ারে। ইতিমধ্যে মামলার অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। এতে ধর্ষণের অভিযোগে তৌকিরকে একমাত্র আসামি করা হয়েছে।

বেসরকারি সংগঠন উইমেন উইথ ডিজঅ্যাবিলিটিস ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন (ডব্লিউডিডিএফ) বিভিন্ন পত্রিকা ও ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম থেকে প্রতিবন্ধী নারী ও শিশুদের নির্যাতনের তথ্য সংকলন করে। সংগঠনটির তথ্য অনুসারে, এ বছরের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত ৪৭ জন প্রতিবন্ধী নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। আর ১৬৭ জন প্রতিবন্ধী নারী তাঁদের পরিবারের সদস্যদের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের সহিংসতার শিকার হয়েছেন।

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের জেমস পি গ্র্যান্ট স্কুল অব পাবলিক হেলথের গবেষণা মতে, ৭৪ দশমিক ৩ শতাংশ নারী মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। ৩৩ দশমিক ২ শতাংশ শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এ ছাড়া ১০ দশমিক ৩ শতাংশ যৌন সহিংসতার শিকার হয়েছেন।

পাঁচ হাজার প্রতিবন্ধী ব্যক্তির ওপর জরিপ চালিয়ে গত নভেম্বরে এক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের জেমস পি গ্র্যান্ট স্কুল অব পাবলিক হেলথ। প্রতিবেদনে বলা হয়, ৭৪ দশমিক ৩ শতাংশ নারী মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। ৩৩ দশমিক ২ শতাংশ শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এ ছাড়া ১০ দশমিক ৩ শতাংশ যৌন সহিংসতার শিকার হয়েছেন।

‘কাহো কিছু দিলে খাই’

নীলফামারীর জলঢাকার বুদ্ধি ও শারীরিক প্রতিবন্ধী নারীর (৩৫) দুই পা সরু হওয়ায় ঠিকভাবে হাঁটতে পারেন না। গুছিয়ে কথা বলতে পারেন না বলে তাঁর হয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেন স্থানীয় দোকানি আবুল কালাম আজাদ এবং ডব্লিউডিডিএফের চেয়ারপারসন শিরিন আক্তার।

শিরিন জানান, ২০০৫ সালে ওই নারী ধর্ষণের ফলে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়লে স্থানীয়ভাবে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা হয়। পরে চাপে পড়ে ওই গৃহকর্তা সন্তান জন্ম নেওয়ার তিন মাস আগে ২০০৬ সালে ওই নারীকে বিয়ে করেন। ধর্ষকের সঙ্গে বিয়ে হলে যা পরিণতি হওয়ার, তা–ই হয়েছে। অতি নির্যাতন ও সন্তান মারা যাওয়ার পর তিনি নিজ গ্রামে ফিরে আসতে বাধ্য হন। গ্রামেও আরেক সমস্যা, ভাইবোন দরিদ্র। তাঁকে দেখার মতো কেউ নেই। করোনাকালে কেউ ব্যক্তি উদ্যোগে তাঁকে চাল–ডাল কিনে দিলে তাঁর অজান্তে পরিবারের সদস্যরা তা নিয়ে যায় বলে অভিযোগ রয়েছে।

ওই নারী প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঘর নাই। বারান্দায় থাকি। ঠান্ডায় ঘুম ধরে না। কাহো কিছু দিলে খাই।’ তাঁর হয়ে স্থানীয় দোকানি আবুল কালাম আজাদ জানান, ওই নারীর প্রতিবন্ধী কার্ড আছে। আগে তিন মাস পর পর ভাতা পেতেন, এখন ছয় মাস পর পর পান।

প্রতিবন্ধীদের নিয়ে কাজ করেন এমন ব্যক্তিদের পর্যবেক্ষণ হচ্ছে, করোনাকালে প্রতিবন্ধী নারীদের নানা রকম চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে আর্থিক সংকট, যৌতুকের জন্য চাপ, ধর্ষণসহ শারীরিক-মানসিক নির্যাতনের মুখে পড়া, সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন ত্রাণসহায়তায় অন্তর্ভুক্ত হতে না পারা; আবার ত্রাণ বা অন্য কোনো সহায়তা পেলেও অনেক ক্ষেত্রে সেই সহায়তার ওপর নিজের নিয়ন্ত্রণ না থাকা।

শারমিন রাজশাহী ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজে মাধ্যমিক পর্যায়ে ভর্তি পরীক্ষায় ৬০০ শিক্ষার্থীর মধ্যে প্রথম হয়েছিলেন। তাঁকে দেখার পর স্কুল কর্তৃপক্ষ ভর্তি বাতিল করেন।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, অনেক প্রতিবন্ধী নারী ত্রাণসহায়তার অন্তর্ভুক্ত হতে পারেননি। এর কারণ হিসেবে তাঁরা বলেছেন, ত্রাণসহায়তা কোথায় দেওয়া হচ্ছে, কীভাবে দেওয়া হচ্ছে, সে সম্পর্ক তাঁরা জানেন না এবং অনেক সময় জানলেও নারী ও প্রতিবন্ধী হিসেবে ঘরের বাইরে গিয়ে তাঁদের জন্য সহায়তা নেওয়া সম্ভব হয়নি।

ডব্লিউডিডিএফের নির্বাহী পরিচালক আশরাফুন্নাহার জানান, তাঁরা করোনাকালে প্রতিবন্ধী নারীদের অভিজ্ঞতা জানতে বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিদের নিয়ে সম্প্রতি কয়েকটি সভা করেন। করোনাকালে নারী প্রতিবন্ধীরা খাদ্যসংকটে ভুগেছেন। সব জায়গায় সরকারি সহায়তা পৌঁছায়নি। অনেকে শ্বশুরবাড়ি ও নিজ পরিবারে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। প্রতিবন্ধী নারীরা আরও জানিয়েছেন, ত্রাণসহায়তা কোথায় দেওয়া হচ্ছে, কীভাবে দেওয়া হচ্ছে, সে সম্পর্ক তাঁরা জানেন না এবং অনেক সময় জানলেও নারী ও প্রতিবন্ধী হিসেবে ঘরের বাইরে গিয়ে তাঁদের জন্য সহায়তা নেওয়া সম্ভব হয়নি।

লড়াকু মেয়েটি নতুন লড়াইয়ে

শারমিন আক্তার জন্ম নেওয়ার পর কিছু আত্মীয়স্বজন তাঁর মা–বাবাকে বলেছিলেন রাস্তায় ফেলে দিয়ে আসতে। কারণ, এই মেয়ে তাঁদের বোঝা বাড়ানো ছাড়া কিছু করতে পারবে না। রাজশাহী ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজে মাধ্যমিক পর্যায়ে ভর্তি পরীক্ষায় ৬০০ শিক্ষার্থীর মধ্যে প্রথম হয়েছিলেন। তাঁকে দেখার পর স্কুল কর্তৃপক্ষ ভর্তি বাতিল করেন। উচ্চমাধ্যমিকে রাজশাহী সরকারি মহিলা কলেজের বিজ্ঞান বিভাগে পড়ার সুযোগ পেয়েছিলেন। কলেজ কর্তৃপক্ষ তাঁকে দেখার পর বিজ্ঞান বিভাগে পড়তে দেবে না বলে সাফ জানিয়ে দেয়। শেষ পর্যন্ত একটি সংগঠনের হস্তক্ষেপে ভর্তি হতে পারেন। এখন পড়ছেন রাজশাহী কলেজে ইংরেজি বিভাগে সম্মান শ্রেণিতে শেষ বর্ষে।
শারীরিক প্রতিবন্ধকতার কারণে ক্রাচে ভর দিয়ে চলাচল করেন শারমিন। বাসায় বিভিন্ন ব্যাচে ছাত্র পড়িয়ে সে টাকায় লেখাপড়াসহ পরিবারেরও আংশিক খরচ চালাতেন। করোনাকালে আর্থিক সংস্থানের সুযোগ হারানো শারমিন আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, বাবা ছোটখাটো ব্যবসা করেন। করোনার কারণে ব্যবসায় মন্দা চলছে। তিনি শিক্ষার্থী পড়িয়ে যা আয় করতেন, তা–ও এখন বন্ধ। কলেজে অনলাইন ক্লাস শুরু হয়েছে। টাকার জন্য মা–বাবার দ্বারস্থ হতে তাঁর খুব খারাপ লাগে।

ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন শরীফা

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১০ বছর ধরে টেলিফোন অপারেটর হিসেবে কাজ করেন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শরীফা তালুকদার (৩৪)। করোনাকালের শুরু থেকে এক দিনের জন্যও ছুটি কাটাননি। তিনি প্রথম আলোকে বললেন, ‘আমার সব সময় মনে হয়েছে, হাসপাতালের যেকোনো কাজই মানুষের জন্য সেবা দেওয়া। একজন চিকিৎসক যদি ঝুঁকি নিয়ে রোগীর সেবা দিতে পারেন, তাহলে আমি কেন পারব না?’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগ থেকে মাস্টার্স পাস শরীফা চট্টগ্রামের গোলপাহাড় এলাকায় সরকারি কোয়ার্টারে থাকেন। স্বামীও দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। পরিবারে আরও রয়েছে মা ও কিশোর বয়সী দুই ছেলে-মেয়ে।

সন্তানের জন্য মায়ের লড়াই

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগ থেকে পড়াশোনা শেষ করে একটি সংস্থায় বড় পদে চাকরি করতেন সুলতানা সেলিনা। দুই ছেলে। বড় ছেলের অটিজম শনাক্ত হয় আড়াই বছর বয়সে। ছেলের যত্ন নিতে ওই সময় তিনি চাকরি ছেড়ে দেন। ছেলেটির বয়স এখন ১৬ বছর। সুলতানা সেলিনা প্রথম আলোকে বললেন, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের স্কুলে ছেলে পড়ছে। করোনার কারণে স্কুলটি বন্ধ।

সাভারে তাঁর সংস্থা এক প্রশিক্ষণ কর্মসূচির মাধ্যমে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের দেখাশোনা করেন এমন ৫০০ জনকে অন্তর্ভুক্ত করেছেন। দেখা গেছে, সেখানের ৯৫ শতাংশই মা। আর বাকিরা হয় ভাই, দাদা বা অন্য কেউ।
এ এইচ এম নোমান খান, নির্বাহী পরিচালক, সেন্টার ফর ডিজঅ্যাবিলিটি ইন ডেভেলপমেন্টের (সিডিডি)

অটিজম ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের যত্ন নেওয়ার কাজটি বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মায়েদেরই করতে দেখা যায় বলে জানিয়েছেন সেন্টার ফর ডিজঅ্যাবিলিটি ইন ডেভেলপমেন্টের (সিডিডি) নির্বাহী পরিচালক এ এইচ এম নোমান খান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, সাভারে তাঁর সংস্থা এক প্রশিক্ষণ কর্মসূচির মাধ্যমে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের দেখাশোনা করেন এমন ৫০০ জনকে অন্তর্ভুক্ত করেছেন। দেখা গেছে, সেখানের ৯৫ শতাংশই মা। আর বাকিরা হয় ভাই, দাদা বা অন্য কেউ। তিনি বলেন, ওই মায়েরা একদিকে নিজের পুরো জীবন দিয়ে প্রতিবন্ধী সন্তানের যত্ন নেন। আবার প্রতিবন্ধী সন্তান জন্ম দেওয়ার কারণে অনেক মাকে অন্যের দোষারোপের মধ্যে দুর্বিষহ জীবন যাপন করতে হয়।

আইনি সুরক্ষা জানেন না অনেকে

প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষাবিষয়ক আইন, ২০১৩ অনুসারে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি তাঁর বিরুদ্ধে বৈষম্যমূলক আচরণের বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণ আদায় করতে পারবেন। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে আইনি সহায়তা চাইতে বাধা দিলে বা অন্য কোনোভাবে তাঁকে বঞ্চিত করলে অভিযুক্ত ব্যক্তির সাজা হিসেবে কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে। পাঠ্যপুস্তকসহ যেকোনো প্রকাশনা ও গণমাধ্যমে প্রতিবন্ধিতা সম্পর্কে নেতিবাচক শব্দ ব্যবহারও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। সাধারণ আইনের বাইরে এই বাড়তি সুরক্ষার বিষয়ে বেশির ভাগ মানুষ জানেন না।