প্রতিশ্রুতিশীল বিজ্ঞানীদের প্রতিপালন করা উচিত

  • ২০২০ সালের তথ্য অনুসারে, প্রতিষ্ঠানে ৩৬৪ জন বিজ্ঞানী ছাড়াও ৩ হাজার ৯৪০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী কাজ করছেন।

  • ওই বছর বিজ্ঞানী ও গবেষকদের লেখা ৪৪৩টি প্রবন্ধ আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য, চিকিৎসা ও বিজ্ঞান সাময়িকীতে ছাপা হয়েছে।

  • একই বছরে প্রতিষ্ঠানের হাসপাতালে দেড় লাখ রোগী বিনা মূল্যে কলেরা ও ডায়রিয়ার চিকিৎসা নিয়েছেন।

৬০ বছর আগে কলেরা মহামারি শুরুর প্রাক্কালে সাউথ ইস্ট এশিয়ান ট্রিটি অর্গানাইজেশন ঢাকায় কলেরা রিসার্চ ল্যাবরেটরি নামে ছোট একটি পরীক্ষাগার স্থাপন করেছিল। সেটাই পরে আইসিডিডিআরবি। করোনা মহামারি চলাকালে এই ডিসেম্বরে আইসিডিডিআরবির ৬০ বছর পূর্ণ হচ্ছে। আইসিডিডিআরবি আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য গবেষণা প্রতিষ্ঠান। নীতিনির্ধারক ও পেশাজীবীরা স্বাস্থ্যের উন্নতিতে ও রোগ প্রতিরোধে আইসিডিডিআরবির তথ্য-প্রমাণ ও অভিজ্ঞতা ব্যবহার করেন। ৬০ বছরের ইতিহাসে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে এর নির্বাহী পরিচালকের দায়িত্বে এখন ড. তাহমিদ আহমেদ। তিনি মূলত পুষ্টিবিজ্ঞানী। দীর্ঘদিন কাজ করেছেন এই প্রতিষ্ঠানে। প্রতিষ্ঠান ও বিজ্ঞান গবেষণা কীভাবে চলে, তা নিয়ে ১ ডিসেম্বর ড. তাহমিদ আহমেদের মুখোমুখি হয়েছিলেন প্রথম আলোর বিশেষ প্রতিনিধি শিশির মোড়ল।
ড. তাহমিদ আহমেদ

প্রশ্ন :

আইসিডিডিআরবির ৬০ বছরের ইতিহাসে আপনিই প্রথম বাংলাদেশি পরিচালক। আপনি পরিচালক হওয়ায় বাড়তি কী সুবিধা হয়েছে?

ড. তাহমিদ আহমেদ: ১৯৮৫ সালে আমি মেডিকেল অফিসার হিসেবে আইসিডিডিআরবিতে যোগ দিয়েছিলাম। ৩৬ বছর এই প্রতিষ্ঠানে কাজ করছি। হাসপাতালে রোগী দেখা, গবেষণায় সহযোগিতা করা, গবেষণা করা, নতুন নতুন গবেষণার উদ্যোগ নেওয়া, ব্যবস্থাপনা, পরিচালনা—সবই আমি এখান থেকে শিখেছি। আমার অভিজ্ঞতা প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে নিতে সাহায্য করবে।

আন্তর্জাতিক অঙ্গনের অন্য কেউ নির্বাহী পরিচালকের দায়িত্ব নিতে পারতেন। দায়িত্ব নেওয়ার পর তাঁকে প্রতিষ্ঠানকে বুঝে উঠতেই এক-দেড় বছর সময় লেগে যেত। সবকিছু বোঝার পর তিনি হয়তো আর দেড় বছর কাজ করার সময় পেতেন। তখন সেটা প্রতিষ্ঠানের জন্য ভালো হতো না।

প্রশ্ন :

প্রতিষ্ঠানের পরিচালক হওয়ার পর নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টির জন্য প্রতিষ্ঠানের ভেতরে ও বাইরে কী বার্তা দিয়েছেন।

তাহমিদ আহমেদ: খাওয়ার স্যালাইন বা ওআরএস গবেষণার মূল কাজ হয়েছিল আইসিডিডিআরবিতে। এই প্রতিষ্ঠানের সুনাম আছে বিশ্বব্যাপী। সেই সুনাম বা মান ধরে রাখাই যথেষ্ট নয়, তাকে উত্তরোত্তর বাড়ানোর কথাই আমি বলেছি।

দুটি বার্তা পরিষ্কার। প্রথমত আমাদের প্রত্যেকের দক্ষতা বাড়াতে হবে। আর মনোনিবেশ করতে হবে বিজ্ঞানে।

আমাদের দেশে জনসংখ্যা বেশি। অনেক রোগের অনেক রোগী এ দেশে আছে। ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের এই সুবিধাটা আমাদের কাজে লাগাতে হবে। এই সুযোগ বিশ্বের অনেক দেশেরই নেই।

আইসিডিডিআরবি

প্রশ্ন :

আপনি কী এমন করতে চান, যাতে অন্য কারও চেয়ে ব্যতিক্রমী হবেন বা চলে যাওয়ার পরও আপনার কথা বিশেষভাবে মনে রাখা হবে।

তাহমিদ আহমেদ: আইসিডিডিআরবি বেশ জটিল জায়গা। আমার চেয়েও ভালো নির্বাহী পরিচালক এখানে ছিলেন। কিন্তু আইসিডিডিআরবিতে একধরনের শূন্যতা তৈরি হতে যাচ্ছে। ড. ফেরদৌসী কাদরী বলা যায় প্রায় অবসরে গেছেন। ড. কে জামান, ড. শামস-এল-আরেফিন অবসরে যাবেন। তাঁরা প্রত্যেকে আমার চেয়ে বড় মাপের বিজ্ঞানী, গবেষক। এই মাপের, এই মানের বিজ্ঞানী-গবেষকের অভাব দেখা দেবে। আমি একটি পরিবেশ তৈরি করতে চাই, যেন কোনো ধরনের শূন্যতা না দেখা দেয়।

বিশ্বের সেরা বিজ্ঞানীরা আছেন আমাদের সায়েন্টিফিক অ্যাডভাইজারি গ্রুপে। তাঁরা পরামর্শ দিয়েছেন ‘এ-টিম অ্যাপ্রোচ’-এ কাজ করার। নেতৃত্বের সংকট যেন না হয়, সে জন্য আমরা কাজ শুরু করেছি।

প্রশ্ন :

কোন ধরনের গবেষণায় বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। নতুন উদ্ভাবন? ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল? না কি জনস্বাস্থ্য বিষয়ে?

তাহমিদ আহমেদ: ২০১৯-২০২২ সালব্যাপী একটি কৌশলগত পরিকল্পনা আমাদের আছে। পরিকল্পনার মেয়াদ আগামী বছর শেষ হচ্ছে। এখন আমাদের সামনে বিকল্প দুটি। নতুন একটি কৌশলগত পরিকল্পনা তৈরি করা অথবা পুরোনো পরিকল্পনার সংশোধন ও মানোন্নয়ন করা। আমরা শেষেরটি বেছে নিচ্ছি।

এ ক্ষেত্রে আমরা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য বা এসডিজিকে সামনে রাখব। আমরা বাংলাদেশের অগ্রাধিকারকে গুরুত্ব দেব। মাতৃ ও শিশুস্বাস্থ্যের উন্নতি, নবজাতকের মৃত্যু হ্রাস, শিশু ও মাতৃ পুষ্টির উন্নতি—এগুলো অগ্রাধিকারের তালিকায় থাকবে।

মনে রাখতে হবে, সারা বিশ্বে প্রায় ২৫০ মিলিয়ন মা অপুষ্টিতে ভুগছেন। ৮০০ মিলিয়ন মানুষ ক্ষুধা নিয়ে দিন কাটায়। মানব ইতিহাসে এর আগে এত মানুষ ক্ষুধা নিয়ে বসবাস করেনি। এদের অনেকেই খাদ্য নিরাপত্তাবলয়ের বাইরে। হাতের কাছে যে খাদ্য আছে, তা দিয়ে অপুষ্টি দূর করার গবেষণা আমরা করব।

এর জন্য রসদ, পর্যাপ্ত দক্ষ জনবল ও অর্থায়ন দরকার। আমরা সেই দক্ষ জনবল তৈরি ও অর্থায়নের চেষ্টাও চালিয়ে যাচ্ছি।

প্রশ্ন :

ওআরএস গুরুত্বপূর্ণ উদ্ভাবন। ওআরএসের পর আর কোন উদ্ভাবনকে আপনি সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন?

তাহমিদ আহমেদ: স্বাধীনতার সময় মোট প্রজনন হার ছিল ৬.৫। আইসিডিডিআরবি মতলবে দিশারি প্রকল্প বাস্তবায়ন করে দেখল, বাড়ি বাড়ি স্বাস্থ্যকর্মী পাঠিয়ে কীভাবে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহারের হার বাড়ানো যায়, টিএফআর কমানো সম্ভব হয়। পরবর্তী সময়ে মতলবের মডেলই সারা দেশে বাস্তবায়িত হয়।

একসময় মাতৃ ও শিশুমৃত্যুর বড় কারণ ছিল ধনুষ্টংকার। আইসিডিডিআরবি গবেষণায় দেখল, মাকে ধনুষ্টংকারের টিকা দিয়ে শিশুর ধনুষ্টংকার প্রতিরোধ করা সম্ভব। এটা সারা পৃথিবীতে ছড়াল। এ ছাড়া কলেরা টিকার ট্রায়াল, শিশুখাদ্যে সিসার উপস্থিতি শনাক্ত করা, পিয়ার কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে পুষ্টি পরিস্থিতির উন্নতি আইসিডিডিআরবির গুরুত্বপূর্ণ কাজ। জিংকের মাধ্যমে ডায়রিয়ার তীব্রতা কমানো, জীবন রক্ষা করা অনেক বড় উদ্ভাবন। আইসিডিডিআরবির বিজ্ঞানীদের উদ্ভাবিত শিশুদের নিউমোনিয়ায় ‘বাবল-সিপ্যাপ’–এর উদ্ভাবন ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। ইথিওপিয়া সরকারের অনুরোধে আমাদের বিজ্ঞানীরা এই প্রযুক্তি নিয়ে সেখানে কাজ করছেন।

প্রশ্ন :

যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউটস অব হেলথের (এনআইএইচ) মতো প্রতিষ্ঠান হওয়া কঠিন। তারপরও বৈশ্বিকভাবে আরও গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান হয়ে ওঠার জন্য কী সহায়তা বা পরিবর্তন দরকার।

তাহমিদ আহমেদ: এনআইএইচ কত নিখুঁতভাবে কাজ করে, তা দেখার কিছু সুযোগ আমার হয়েছে। তারা পরীক্ষিত পদ্ধতিগুলো কড়াকড়িভাবে অনুসরণ করে।

আমাদের বিজ্ঞানী দরকার। আর দরকার বিজ্ঞানটা ঠিকমতো হচ্ছে কি না, তা পর্যবেক্ষণ করা। ভালো বিজ্ঞানী যেখানে থাকুক, আমাদের নেওয়া উচিত। অন্যদিকে প্রতিশ্রুতিশীল বিজ্ঞানী-গবেষকদের ঠিকভাবে প্রতিপালন করা উচিত।

প্রশ্ন :

এনআইএইচের মতো প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে বাংলাদেশ সরকারের বা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কী করার আছে।

তাহমিদ আহমেদ: আমাদের বিজ্ঞানীরা কাজ করেন প্রকল্পভিত্তিক। সেই প্রকল্পের বরাদ্দের কিছু অংশ প্রশাসনিক ব্যয় হিসেবে ব্যবহৃত হয়। প্রকল্প শেষ হলে সেটা আর থাকে না। আমাদের বার্ষিক বাজেটের সিংহভাগ প্রকল্পভিত্তিক।

আমরা মূল বা কোর ফান্ডে অর্থ পাই বাংলাদেশ, সুইডেন, কানাডা ও যুক্তরাজ্য সরকারের কাছ থেকে। প্রতিষ্ঠানের জায়গা দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। আমরা সব সময় সেই কৃতজ্ঞতা জানাই। প্রধানমন্ত্রী আমাদের প্রতিষ্ঠানে এসেছেন, এটা অনেক বড় আশীর্বাদ। কিন্তু সরকার তাদের সহায়তা আরও বাড়াতে পারে। সরকার অন্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আমাদের গবেষণার সুযোগ করে দিতে পারে।

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আমাদের মূল ফান্ডে অর্থ দিতে পারে। হাসপাতালে বছরে দুই লাখের বেশি রোগীকে বিনা মূল্যে চিকিৎসা দিই। এ ছাড়া ল্যাবরেটরিতে আমাদের খরচ অনেক বেশি। আমাদের মূল ফান্ডে সহায়তা বাড়লে আমাদের বিজ্ঞানীরা আরও স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ পাবেন।

প্রশ্ন :

বিজ্ঞানীকে বিজ্ঞান নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হয়। কিন্তু প্রকল্পভিত্তিক কাজ করতে হলে বিজ্ঞানীকে আর্থিক ব্যবস্থাপনার বিষয়ে যুক্ত হতে হয়, পারদর্শী হতে হয়। এটা তো বিজ্ঞানীর জন্য বাড়তি চাপ।

তাহমিদ আহমেদ: এটাই বাস্তবতা। কারও কাছ থেকে গবেষণার জন্য তহবিল পেতে হলে প্রকল্প তৈরি করতে হয়। তাতে ফলাফল কী পাওয়া যাবে, তা স্পষ্ট বলতে হয়। সেই সঙ্গে পুরো কাজের বাজেট দিতে হয়, তাতে লাইন আইটেম ধরে ধরে ব্যয়ের খাত উল্লেখ করতে হয়।

আইসিডিডিআরবিতে বিজ্ঞানী ও গবেষকেরা নবীন থাকা অবস্থায় এসব বিষয়ে প্রশিক্ষণ পেয়ে থাকেন। একজন মূল গবেষকের সঙ্গে নবীন গবেষকেরা যখন যুক্ত থেকে কাজ করেন, তখনই তাঁরা অর্থ ব্যবস্থাপনাও শিখে যান। এ ছাড়া আমাদের অর্থ বিভাগ এ ব্যাপারে বিজ্ঞানীদের সহায়তা করে।

এখানে অন্য একটি সুবিধার কথা উল্লেখ করা প্রয়োজন। অনেক দাতা সংস্থায় এখন বিজ্ঞানীরা কাজ করছেন। তাঁদের উপস্থিতিতে দাতাদের সঙ্গে কাজ করাটা অনেক সহজ হয়ে যাচ্ছে।

আবার অনেক ক্ষেত্রে দাতাদের নিজস্ব উদ্দেশ্য থাকে। তাদের নিজস্ব প্রেসক্রাইবড ফর্ম থাকে। তারা নির্দিষ্ট ধারায় কাজটি চায়। অনেক বিজ্ঞানীর গবেষণার লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য দাতাদের লক্ষ্য-উদ্দেশ্যের সঙ্গে মিলে যেতে পারে।

প্রশ্ন :

তা হলে তো বলতে হয়, সরকারি প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞানীদের কাজের ক্ষেত্রে অনেক সুবিধা আছে।

তাহমিদ আহমেদ: সুবিধা–অসুবিধা দুই–ই আছে। সরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করা বিজ্ঞানীদের অর্থ জোগাড় করতে হয় না। তাঁরা মাস গেলে বেতন পেয়ে যান।

অসুবিধাও কিছু আছে। যেমন একটি হয়তো গবেষণা চলছে। মাঝপথেই হয়তো কাউকে বদলি হয়ে যেতে হয়। এতে গবেষণা ক্ষতিগ্রস্ত হয়, বিজ্ঞানীও লাভবান হন না।

আমি ইন্দোনেশিয়ায় একটি সরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠানে ঢুকে চমৎকৃত হয়েছিলাম। তাদের আকার-আকৃতি, জনবল, বাজেট আমাদের চেয়ে অনেক বড় বা বেশি। কিন্তু তাদের আউটপুট আমাদের তুলনায় অনেক কম।

আইসিডিডিআরবির বিজ্ঞানচর্চা বা গবেষণা প্রকল্পভিত্তিক। মূল গবেষকের নেতৃত্বে বিজ্ঞানী-গবেষকেরা দল বেঁধে কাজ করেন। একটি প্রকল্প শেষে তাঁরা আরেকটি প্রকল্প শুরুর চেষ্টা করেন। এসব প্রকল্প পেতে তাঁদের আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রতিযোগিতা করতে হয়। তাঁদের দক্ষতা যাচাই হয়। শুরু থেকে প্রকল্প পেতে ৮ থেকে ১২ মাস সময় লেগে যায়।

এসব কারণে আমাদের অনেক বিজ্ঞানী নিয়মিত গভীর রাত জেগে কাজ করেন। আমি নিয়মিত রাত দুটো-তিনটা পর্যন্ত কাজ করি। এটা আমি করে আসছি ২০-২৫ বছর যাবৎ।

প্রশ্ন :

এবার বিজ্ঞান নিয়ে আলোচনা হোক। আপনারা অনেক গবেষণা করছেন। কিন্তু গবেষণার ফলাফল সাধারণ মানুষ বা নীতিনির্ধারকেরা কতটা ব্যবহার করছেন?

আমরা আমাদের প্রচলিত ধারা থেকে বের হয়ে আসতে চাইছি। কোন গবেষণার প্রভাব কী, তা জানার একটা ব্যবস্থার দিকে আমরা যাচ্ছি।

বিজ্ঞানী এক প্রকল্প শেষে অন্য প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু করেন। তিনি দেখেন না বা দেখার চেষ্টা করেন না তাঁর গবেষণা প্রকল্পের নীতিগত প্রভাব কী আছে বা কতটুকু পড়েছে। এই প্রভাব দেখার বিষয়টি প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত থাকে না বলে তিনি বাড়তি সময় বা অর্থ ব্যয় করতে চান না বা করতে পারেন না।

গবেষণার প্রভাব মূল্যায়ন বা ইম্প্যাক্ট অ্যাসেসমেন্টের প্রাতিষ্ঠানিক বা কাঠামোগত উদ্যোগ আমরা নিয়েছি। এটি করবে আইসিডিডিআরবির বাইরের মানুষ। একটি দাতা সংস্থাও এতে যুক্ত হচ্ছে। এটা আইসিডিডিআরবির আগামী দিনের বড় অ্যাজেন্ডা।

প্রশ্ন :

আইসিডিডিআরবির ৬০ বছরকে আপনি কীভাবে মূল্যায়ন করবেন।

তাহমিদ আহমেদ: আইসিডিডিআরবি বাংলাদেশে অবস্থিত। ওআরএস সারা বিশ্বের প্রায় সাত কোটি জীবন রক্ষা করেছে। সারা বিশ্বের জন্য এটি বাংলাদেশের বড় উপহার। অল্প খরচে লাগসই প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছেন এখানকার বিজ্ঞানীরা। গবেষণা, উদ্ভাবন ও গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশের বাইরে দক্ষ জনবল গড়ে তুলতে পেশাজীবী, বিজ্ঞানী, গবেষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে নিয়মিত। প্রতিবছর দুই থেকে আড়াই লাখ মানুষ আইসিডিডিআরবির মতলব ও ঢাকা হাসপাতালে বিনা মূল্যে চিকিৎসা নেন।

আগামী বছরগুলোতে অসংক্রামক রোগ বা এনসিডি নিয়ে কাজে জোর দেবে আইসিডিডিআরবি। এনসিডি সমস্যাগুলো গভীরভাবে বোঝার চেষ্টা করা হবে। এ বিষয়ে ওষুধের ট্রায়াল করার কথাও ভাবা হচ্ছে। মূল উদ্দেশ্য থাকবে মানুষকে অল্প মূল্যের ওষুধ দেওয়ার উদ্যোগে যুক্ত থাকা।