প্রথম আলো সম্পাদকের নামে অভিযোগ গঠনে বিশিষ্টজনদের উদ্বেগ

সম্পাদক মতিউর রহমানসহ প্রথম আলোর পাঁচ কর্মীর নামে করা মামলাটি সংবাদপত্রের স্বাধীনতাকে সংকুচিত করার কাজে ব্যবহৃত হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন দেশের বিশিষ্ট নাগরিকেরা। এ ধরনের চেষ্টা থেকে সবাইকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন তাঁরা।


গত মঙ্গলবার গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে দেশের ১৮ জন বিশিষ্ট নাগরিক বলেন, ‘সম্প্রতি (১২ নভেম্বর) ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ছাত্র নাইমুল আবরারের দুঃখজনক মৃত্যুর ঘটনায় করা মামলায় সম্পাদক মতিউর রহমানসহ প্রথম আলোর পাঁচজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেছেন ঢাকার মহানগর দায়রা আদালত। মামলায় বিশেষ করে প্রথম আলোর সম্পাদকের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন আমাদের নানা কারণে বিস্মিত ও উদ্বিগ্ন করেছে।’


বিবৃতিতে বলা হয়, ‘গত বছরের ১ নভেম্বর ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে কিশোর আলো পত্রিকার বর্ষপূর্তির অনুষ্ঠানে মাঠে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যায় নাইমুল আবরার। ঘটনাটি অনাকাঙ্ক্ষিত ও দুঃখজনক। তবে সেটি প্রথম আলোর অনুষ্ঠান ছিল না। ছিল প্রথম আলোর অঙ্গপ্রতিষ্ঠান কিশোর আলোর বর্ষপূর্তি। প্রথম আলো সম্পাদক সে অনুষ্ঠানে উপস্থিতও ছিলেন না। দুর্ঘটনার পর নাইমুলের বাবা মুজিবুর রহমান থানায় অপমৃত্যুর মামলা করেন। এরপর তিনি আদালতে আলাদাভাবে আরেকটি নালিশি মামলা দায়ের করেন।’

বিবৃতিতে বিশিষ্টজনেরা বলেছেন, ‘আমরা মনে করি, দেশে সংবাদপত্রের স্বাধীনতার ওপর একের পর এক যেসব আঘাত আসছে এবং অতীতে মতিউর রহমানসহ দেশের মুক্তচিন্তার বরেণ্য সম্পাদকদের বিরুদ্ধে যেসব হয়রানিমূলক মামলা করা হয়েছে, সেগুলো থেকে এই মামলাকে আলাদা করে দেখার কোনো অবকাশ নেই। আমরা এই মামলায় প্রথম আলো সম্পাদকসহ সব অভিযুক্তের পরিপূর্ণ আইনগত প্রতিকার পাওয়ার অধিকার অবারিত রাখার দাবি জানাচ্ছি।’
বিশিষ্টজনেরা বলেছেন, ‘এ ধরনের মামলা সম্পাদক ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতাকে সংকুচিত করার কাজে ব্যবহৃত হতে পারে বলে আমাদের আশঙ্কা। এ ধরনের প্রচেষ্টা থেকে সবাইকে বিরত থাকার আহ্বান জানাচ্ছি।’


বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, গবেষক ও ভাষাসংগ্রামী আহমদ রফিক, কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এম হাফিজউদ্দিন খান, সেন্ট্রাল উইমেন্স ইউনিভার্সিটির উপাচার্য পারভীন হাসান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সাবেক অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক, সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার, মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল, সাবেক নির্বাচন কমিশনার ও লেখক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সাখাওয়াত হোসেন, অভিনেতা, নাট্যকার ও নাট্যনির্দেশক মামুনুর রশীদ, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধূরী, লেখক ও শিক্ষাবিদ সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক মইনুল ইসলাম, সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার, স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ তোফায়েল আহমেদ, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শাহদীন মালিক এবং বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।