প্রথম আলোর এক দিনের দায়িত্ব রূপকথার হাতে

কিশোরীদের স্বপ্নকে আরও বিস্তৃত করা, সক্ষমতা ও নেতৃত্বে অংশ নেওয়ার অধিকার প্রতিষ্ঠায় এমন প্রতীকী আয়োজন করে ইউনিসেফ।

রূপকথা রহমানকে ফুল িদয়ে স্বাগত জানান প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান। ১০ নভেম্বর দুপুরে কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো কার্যালয়ে।
ছবি: প্রথম আলো

‘আমি রূপকথা রহমান, এডিটর, প্রথম আলো।’ বার্তা বিভাগের সঙ্গে বৈঠকের শুরুতে এভাবেই পরিচয়পর্বের সমাপ্তি টেনেছিল রূপকথা। ১০ নভেম্বর প্রথম আলোর প্রতীকী দায়িত্ব ছিল ১৭ বছরের এই কিশোরীর হাতে।

রূপকথার মতো কিশোরীদের স্বপ্নকে আরও বিস্তৃত করার জন্য এবং মেয়েদের সক্ষমতা ও নেতৃত্বে অংশ নেওয়ার অধিকার প্রতিষ্ঠায় আওয়াজ তোলার জন্য এমন প্রতীকী আয়োজন করা হয়।

আজ ২০ নভেম্বর শনিবার বিশ্ব শিশু দিবস উপলক্ষে জাতিসংঘের শিশু তহবিল ইউনিসেফের আয়োজনে রূপকথা রহমানকে প্রথম আলোর এক দিনের সম্পাদক করা হয়।

ইউনিসেফের সহযোগিতায় বিডিনিউজ২৪ ডটকমের ‘হ্যালো’ বিভাগে ২০১৩ সাল থেকে শিশুসাংবাদিকতায় যুক্ত রূপকথা। অনেক প্রতিবন্ধকতা আছে জেনেও যাঁরা সাংবাদিকতাকেই পেশা হিসেবে ধারণ করতে চান, রূপকথা সেই গোত্রের। তাই সকালে সম্পাদকের দায়িত্ব নেওয়ার পর তার মধ্যে কোনো জড়তা ছিল না। আত্মবিশ্বাস নিয়ে বিভিন্ন বিভাগের কাজ ঘুরে দেখেছে, বৈঠক করেছে এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিজের মতামত জোরেশোরে জানান দিয়েছে।

রাজধানীর হোসেনি দালানসংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা বজলুর রহমান ও জোবায়েদা বেগমের দুই ছেলে–মেয়ের মধ্যে ছোট রূপকথা হলিক্রস স্কুল অ্যান্ড কলেজের দ্বাদশ (বিজ্ঞান) শ্রেণির ছাত্রী। উচ্চতর ডিগ্রি নিতে চায় সাংবাদিকতা ও সৃজনশীল লেখালেখির ওপর।

যেভাবে দিন কাটল

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রগতি ভবনে অবস্থিত প্রথম আলো কার্যালয়ে সকালে এসেই সম্পাদকের ভার নেয় রূপকথা। ওই সময় তার বক্তব্য ছিল ‘আজ আমার পরিকল্পনা একটি পত্রিকা হাউসে কাজ কীভাবে হয় সেটা দেখা।’ শুরুতে ফিচার বিভাগের বৈঠককক্ষে তার কাছে প্রথম আলো কীভাবে কাজ করে, সেটার একটি মাল্টিমিডিয়া চিত্র তুলে ধরা হয়। পরে বার্তা বিভাগে এলে ব্যবস্থাপনা সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফ বার্তা বিভাগের রিপোর্টিং, বিনোদন, অর্থনীতি, ক্রীড়া, ডেস্ক এবং অনলাইনের উপস্থিত কর্মীদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। সম্পাদকীয় বিভাগের কর্মীদের সঙ্গে রূপকথার পরিচয় করিয়ে দেন সহযোগী সম্পাদক আনিসুল হক। এরপর সম্পাদকীয় বিভাগের সঙ্গে বৈঠক করে রূপকথা।

প্রথম আলোর ছাপা সংস্করণ প্রকাশের জন্য দিনের শেষ ভাগে পরিকল্পনাগুচ্ছ নিয়ে সম্পাদকের সঙ্গে বৈঠক হয় বার্তা বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মীদের। রূপকথার ক্ষেত্রেও এ নিয়মের ব্যত্যয় হয়নি। সম্পাদকের কার্যালয়ের মূল বৈঠককক্ষে রূপকথার সঙ্গে বৈঠক করেন ফিচার সম্পাদক সুমনা শারমীন, উপসম্পাদক লাজ্জাত এনাব মহছি, হেড অব অনলাইন শওকত হোসেন, হেড অব রিপোর্টিং টিপু সুলতান, উপবার্তা সম্পাদক রাজীব হাসান প্রমুখ।

দিনটি ছিল টি-২০ বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ড-ইংল্যান্ডের সেমিফাইনাল ম্যাচ নিয়ে উত্তেজনার দিন। বৈঠকেও খেলার খবরে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়ার বিষয়টিই উঠে আসে। খেলা শেষ হতে হতে রাত সাড়ে ১১টা বেজে যাবে। ফলে রাতে ছাপা পত্রিকার প্রথম সংস্করণ প্রকাশের নির্ধারিত সময় পেরিয়ে যাওয়ার চাপ থাকার বিষয়টি তুলে ধরা হয় রূপকথাকে। সে দৃঢ়ভাবে বলে, ‘পরদিন খেলার পুরো রেজাল্টসহ পত্রিকা চাই।’

মুখোমুখি দুই সম্পাদক

বার্তা বিভাগের সঙ্গে দিনের শেষ বৈঠকের আগে বিকেল তিনটায় রূপকথা সাক্ষাৎ করে প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমানের সঙ্গে। প্রথম আলো সম্পাদক শুরুতে প্রতীকী সম্পাদককে ফুল দিয়ে বরণ করেন, প্রথম আলোর আইডি কার্ড পরিয়ে দেন এবং সম্পাদকের আসনে বসান।

রূপকথা জানতে চাইল মতিউর রহমানের কাছে, ‘আপনি সাংবাদিকতার মাধ্যমে পাঠককে মতামত দেওয়া ও প্রভাবিত করার সীমাকে কীভাবে দেখেন?’ মতিউর রহমানের জবাব ছিল, ‘আমরা তো মতামত দেব জনগণকে প্রভাবিত করার জন্যই। যাঁর পক্ষে যায়, তিনি খুশি হন। যাঁর বিরুদ্ধে যায়, তিনি খুশি হন না। মতামত দেওয়ার ক্ষেত্রে খেয়াল রাখি, যেন সেটা তথ্যভিত্তিক ও যৌক্তিক হয়। কাউকে ক্ষুদ্র বা অপমান না করি। অন্যদের চেয়ে বেশি চেয়ে না ফেলি।’

এক দিনের প্রতীকী সম্পাদকের দায়িত্ব পালন শেষে চলে যাওয়ার সময় রূপকথা ছিল আত্মবিশ্বাসী। সে বলল, ‘একটি পত্রিকা প্রকাশ, অনলাইনে তাৎক্ষণিকভাবে সংবাদ পরিবেশন ও হালনাগাদ করতে কতটা শ্রম দিতে হয়, তা গভীরভাবে জানলাম। দলবদ্ধভাবে কাজ করার মূল্যও আজ বুঝলাম।’

রূপকথা রহমানের এক দিনের প্রতীকী সম্পাদকের দায়িত্ব নেওয়ার পুরো আয়োজনটি সমন্বয় করেন প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ সহসম্পাদক মাহফুজুর রহমান।