সিলেটে পুলিশের এক সদস্যের যোগসাজশে শিশু আবু সাঈদকে (৯) অপহরণ করে হত্যার ঘটনায় মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সিলেটের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য গ্রহণের প্রথম দিন সাঈদের বাবা মতিন মিয়া, মামা আশরাফুজ্জামানসহ প্রতিবেশী আরও তিনজন সাক্ষ্য দিয়েছেন। ট্রাইব্যুনালের বিচারক আব্দুর রশিদ সাক্ষ্য গ্রহণ করেন।
আদালত সূত্র জানায়, মামলার বাদী হিসেবে প্রথমে সাক্ষ্য দেন সাঈদের বাবা মতিন মিয়া। তিনি আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়ানো আসামিদের শনাক্ত করে ঘটনার পূর্ব ও পরবর্তী সময়ের বর্ণনা দেন। আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করে তিনি দ্রুত বিচার সম্পন্ন করার আকুতি জানান। একইভাবে সাঈদের মামা আশরাফুজ্জামান সাঈদকে অপহরণ করে পাঁচ লাখ টাকা মুক্তিপণ আদায়ে তৎপরতার বিষয়ে আদালতকে জানান।
ট্রাইব্যুনালের বিশেষ সরকারি কৌঁসুলি (স্পেশাল পিপি) আবদুল মালেক প্রথম দিনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে সাংবাদিকদের বলেন, সাঈদের বাবা ও মামা ছাড়াও তাঁদের প্রতিবেশী ফিরোজ আহমদ, ওলিউর রহমান ও শফিকুর রহমান সাক্ষ্য দিয়েছেন। মামলার চার আসামির উপস্থিতিতে এ পাঁচজনের সাক্ষ্য গ্রহণের পর আদালত আগামী রোববার সাক্ষ্য গ্রহণের পরবর্তী তারিখ ধার্য করেছেন। মামলার মোট সাক্ষী ৩৭ জন।
নগরের শাহ মীর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র রায়নগরের দর্জিবন্ধ এলাকার বাসিন্দা আবু সাঈদকে গত ১১ মার্চ অপহরণ করে হত্যা করা হয়। ১৪ মার্চ নগরের ঝর্ণারপাড় এলাকায় সিলেট মহানগর পুলিশের বিমানবন্দর থানার কনস্টেবল (বর্তমানে বরখাস্ত) এবাদুর রহমানের বাসা থেকে বস্তাবন্দী অবস্থায় সাঈদের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
অপহরণ ও হত্যায় জড়িত এবাদুরসহ জেলা ওলামা লীগের সাধারণ সম্পাদক এন ইসলাম ওরফে রাকীব ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কথিত ‘তথ্যদাতা’ আতাউর রহমান ওরফে গেদা আটক হন। সাঈদের বাবার দায়ের করা মামলায় তিনজনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এ তিনজনই আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দিতে উল্লেখ করেন, মুক্তিপণ আদায়ের জন্য সাঈদকে অপহরণ করা হয়েছিল। তাঁদের চিনে ফেলায় হত্যা করা হয়।
এ ঘটনায় জড়িত জেলা ওলামা লীগের প্রচার সম্পাদক মহি হোসেন ওরফে মাসুম পলাতক ছিলেন। ২৩ সেপ্টেম্বর আদালতে মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করা হলে ৮ নভেম্বর পলাতক মাসুমের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়। ১০ নভেম্বর মাসুম আদালতে আত্মসমর্পণ করেন।
সিলেটের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে ১৭ নভেম্বর চার আসামির বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগ (চার্জ) গঠনের পর সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখ ধার্য করার মধ্য দিয়ে বিচার-প্রক্রিয়া শুরু হয়।