প্রথাগত বিচারের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হবে পারিবারিক আদালত

পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় (সন্তু) লারমা বলেছেন, পারিবারিক আদালত পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রথাগত বিচারব্যবস্থার সঙ্গে সাংঘর্ষিক হবে। এটি নানা জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। গতকাল শনিবার বিকেলে রাঙামাটিতে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় তিনি এ আশঙ্কার কথা জানান।
তবে সভায় কয়েকজন বক্তা ভিন্নমত পোষণ করে বলেন, পারিবারিক আদালত স্থাপিত হলে নারীরা উপকৃত হবেন এবং স্বল্প খরচে মামলা পরিচালনা করা যাবে।
রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ সম্মেলনকক্ষে বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট) রাঙামাটি জেলা ইউনিট এ আলোচনা সভার আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে সহায়তা দেয় জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন।
ব্লাস্ট রাঙামাটি ইউনিটের পরিচালনা কমিটির সভাপতি পরিতোষ কুমার দত্তের সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় (সন্তু) লারমা বলেন, পারিবারিক আদালত স্থাপিত হলে পার্বত্য এলাকায় নানা জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। নারী-পুরুষের বৈষম্য আদালত বা আইন দিয়ে সমাধান করা যাবে না। সমাজিক সচেতনতা নারী-পুরুষের বৈষম্য দূর করতে পারে। সার্কেল প্রধান, হেডম্যান ও কার্বারি-ব্যবস্থা সামন্ততান্ত্রিক হলেও তাঁরা এখন সচেতন হচ্ছেন। সেভাবে তাঁরা বিচার পরিচালনা করেন।
প্রধান আলোচকের বক্তব্যে চাকমা সার্কেলের প্রধান রাজা দেবাশীষ রায় বলেন, নারী ও শিশু অধিকারের বিষয়ে প্রথাগত আইনের কোন ক্ষেত্রে বৈষম্যের সৃষ্টি হয় তা বের করে পরিবর্তন করা যায়। পিতৃতান্ত্রিক মানসিকতার ক্ষেত্রেও তা হতে পারে। তিনি বলেন, প্রথাগত আইনে করা বিচার সংবিধান ও আন্তর্জতিক মানবাধিকারের মানদণ্ডের নিচে হলে হবে না।
সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এবং তিন পার্বত্য জেলায় পারিবারিক আদালত স্থাপন বিষয়ে আদালতে আবেদনকারী ইদ্রিসুর রহমান বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রথাগত আইন সংবিধান স্বীকৃত আইন। এ আইনে এখানকার বিভিন্ন সম্প্রদায়ের বিরোধ মীমাংসা করা হয়। কিন্তু পার্বত্য এলাকার পাহাড়ি জনগোষ্ঠী ছাড়া অন্যান্য সম্প্রদায়ের বিদ্যমান পারিবারিক সমস্যা নিরসনে প্রথাগত আইনে সরাসরি প্রতিকার পাওয়ার সুযোগ নেই।
মতবিনিময় সভায় ব্লাস্টের রাঙামাটি জেলা ইউনিটের সমন্বয়কারী জুয়েল দেওয়ানের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য দেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সদস্য নিরূপা দেওয়ান, সরকারি কৌঁসুলি রফিকুল ইসলাম, শিক্ষাবিদ মংসানু চৌধুরী, রাঙামাটি আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক হ্লাথোই অং মারমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম হেডম্যান নেটওয়ার্কের সাধারণ সম্পাদক শান্তি বিজয় চাকমা, রাঙামাটি জেলা হেডম্যান অ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক থোয়াই অং মারমা, বান্দরবান জেলা হেডম্যান সমিতির সাধারণ সম্পাদক মং নু মারমা, নারী অধিকারের কর্মী টুকু তালুকদার, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের রাঙামাটি জেলা আন্দোলনের সম্পাদক মিনারা আরশাদ, সাবেক যুগ্ম জেলা জজ দীপনে দেওয়ান, সাবেক উপসচিব প্রকৃতি রঞ্জন চাকমা প্রমুখ।
সভায় তিন পার্বত্য জেলার অর্ধশতাধিক আইনজীবী, হেডম্যান, কার্বারি ও নারী অধিকার কর্মী অংশ নেন।
সভার শুরুতে ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন ব্লাস্টের উপপরিচালক মাহবুবা আক্তার। তিনি বলেন, পারিবারিক আদালত পার্বত্য তিন জেলায় স্থাপনের ব্যাপারে ব্লাস্টের পক্ষ থেকে উচ্চ আদালতে আবেদন করা হয়েছে। আদালত সরকারের কাছে তিন পার্বত্য জেলায় কেন আদালত স্থাপন করা হবে না, তা জানতে চেয়েছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে এবং আদালত স্থাপনের সুবিধা-অসুবিধা কী—এসব নিয়ে সবার মতামত জানতেই এই সভার আয়োজন করা হয়েছে।