প্রধানমন্ত্রিত্ব আমার কাছে কেবল কাজের সুযোগ: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ বৃহস্পতিবার সামাজিক নিরাপত্তাবলয়ের বিভিন্ন ভাতা সরাসরি উপকারভোগীদের মুঠোফোনে পাঠানোর উদ্যোগের উদ্বোধন করেন।
ছবি: পিআইডি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমি যেদিন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে প্রথম শপথ নিয়েছিলাম, সেদিনই বলেছিলাম দেশের সেবক হিসেবে কাজ করব। প্রধানমন্ত্রিত্ব আমার কাছে আর কিছু না, কেবল কাজের সুযোগ, কাজের ক্ষমতাটার প্রাপ্তি।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ বৃহস্পতিবার সকালে সামাজিক নিরাপত্তাবলয়ের (এসএসএন) বিভিন্ন ভাতা সরাসরি উপকারভোগীদের মুঠোফোনে পাঠানোর উদ্যোগের উদ্বোধনকালে এসব কথা বলেন।

এখন থেকে ‘নগদ’ ও ‘বিকাশ’-এর মাধ্যমে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির বয়স্ক ভাতা, বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা এবং প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষা উপবৃত্তির টাকা সরাসরি উপকারভোগীদের মুঠোফোনে পাঠানো হবে।

তাঁকে বারবার ভোটে নির্বাচিত করায় দেশের জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা পুনর্ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মানুষের জন্য কাজ করব, মানুষের সেবা করব। আমার সরকার মানে মানুষের সেবক। সেই সেবক হিসেবেই কাজ করতে চাই।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য হ্রাসকল্পে সামাজিক নিরাপত্তাবলয়ের বিভিন্ন ভাতার টাকা সরাসরি উপকারভোগীর মুঠোফোনে প্রেরণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, ‘আমরা যে ভাতাটা যাকে দিচ্ছি, সেটা যেন সরাসরি সেই মানুষটার হাতে পৌঁছায়। মাঝে যেন আর কেউ না থাকে। অর্থাৎ অর্থটা যাঁদের প্রয়োজন, তাঁরাই পাচ্ছেন এবং তাঁদের যেভাবে খুশি তাঁরা ব্যবহার করতে পারবেন।’

এটা করার জন্য তাঁর সরকার দীর্ঘদিন ধরে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী এ ব্যবস্থা চালুর জন্য সরকারের সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়, আইসিটি মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানান।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় আয়োজিত অনুষ্ঠানে ভার্চ্যুয়ালি অংশগ্রহণ করেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা যখন বয়স্ক ভাতা চালু করেছিলাম, তখন এভাবে চিন্তা করেছিলাম—কেউ কেবল ভাতার ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ুক, সেটা আমরা চাইনি। ভাতা পাবেন কিন্তু যাঁদের কর্মক্ষমতা রয়েছে, তাঁরা কিছু কাজও করবেন। একেবারে ঘরে বসে থাকবেন না।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রাথমিকভাবে সে সময়ে অন্তত ১০ কেজি চাল ক্রয়ের সামর্থ্য অর্জনে ১০০ টাকা করে ভাতার প্রচলন করা হয়, যা বর্তমানে ৫০০ টাকা হয়েছে এবং ভাতাপ্রাপ্ত জনগণের সংখ্যাও অনেক বৃদ্ধি করা হয়েছে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এর মাধ্যমে আমাদের লক্ষ্যটা হচ্ছে দেশের কোনো মানুষ যেন নিজেকে অপাঙক্তেয় মনে না করে এবং এর মাধ্যমে প্রত্যেকের প্রতি রাষ্ট্রের যে কর্তব্য রয়েছে, সেটাই আমরা করতে চাই।’

অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. জয়নুল বারী স্বাগত বক্তৃতা করেন।

অনুষ্ঠানে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সামাজিক নিরাপত্তাবলয়ের কর্মসূচির ওপর একটি ভিডিও চিত্র প্রদর্শিত হয়।

ইতিমধ্যে ভাতাভোগীদের ডেটাবেইস তৈরি করা হয়েছে। কর্মসূচির আওতায় মোট ৮৮ লাখ ৫০ হাজার বিভিন্ন ভাতাভোগী—শিক্ষা উপবৃত্তি, প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীসহ প্রায় ৬৯ লাখজনের তথ্য জাতীয় পরিচয়পত্রের সঙ্গে সমন্বয় করা হয়েছে। ২০২১ সালের মধ্যেই সব ভাতাভোগীকে ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে ভাতা পৌঁছে দেওয়ার বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেছে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোটা অত্যন্ত কঠিন একটি কাজ। তারপরও সে কাজই জাতির পিতা করতে চেয়েছিলেন জীবনের সব রকম সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যকে তিনি দেখেননি। বারবার আঘাত এসেছে, মৃত্যুকে কাছ থেকেও দেখেছেন কিন্তু লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হননি। ফাঁসির আদেশ, গুলি, বোমা, কিছুই তাঁকে টলাতে পারেনি।’

শেখ হাসিনা বলেন, দেশকে এভাবে ভালোবাসার শিক্ষাটা তিনি পিতার কাছ থেকেই পেয়েছিলেন। কারণ, তাঁদের পরিবার নয়, দেশের মানুষই জাতির পিতার কাছে সব থেকে বড় ছিল। যে জন্য মাত্র ৫৪ বছর বয়সেই তিনি একবার করলেন পাকিস্তান সৃষ্টির আন্দোলন এবং এরপর লড়লেন বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য।

’৮১ সালে দেশে ফেরার পর মানুষের দুর্দশার যে চিত্র তিনি দেখেছিলেন, তা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘মানুষের পেটে খাবার ছিল না, বিদেশ থেকে পুরোনো কাপড় এনে মানুষকে পরতে দেওয়া হতো, তা-ও অনেকে পেত না। দিনের পর দিন দুর্ভিক্ষ চলেছে, মানুষের সারি দেখে মনে হতো যেন জীবন্ত কঙ্কাল—এই ধরনের একটা পরিবেশ আমার নিজের চোখেই দেখা।’

প্রধানমন্ত্রী সে সময় মাইলের পর মাইল হেঁটে বিভিন্ন গ্রাম-গঞ্জে গিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর স্মৃতিচারণা করে বলেন, ‘তখন থেকেই এই চিন্তাটা ছিল, কী করব ক্ষমতায় গেলে?’

‘কাজেই ’৯৬ সালে প্রথমবার ক্ষমতায় গিয়েই দেশের বয়োবৃদ্ধ, স্বামী পরিত্যক্তা এবং পরবর্তী সময়ে প্রতিবন্ধী এবং সে সময়ে সব থেকে অবহেলায় থাকা মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতার আওতায় নিয়ে আসার উদ্যোগ গ্রহণ করি,’ বলেন প্রধানমন্ত্রী।