ফটিকছড়িতে একটি স্টেডিয়াম নির্মাণ এবং সেমুতং গ্যাসক্ষেত্র থেকে ফটিকছড়িবাসীকে গ্যাস সরবরাহ দেওয়ার আশ্বাস ছাড়া আর কোনো প্রতিশ্রুতি দেননি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এতে ফটিকছড়ির মানুষ হতাশ। গত বৃহস্পতিবার বিকেলে ফটিকছড়ির সড়ক ও জনপথ বিভাগের মাঠে আয়োজিত এক জনসভায় প্রধানমন্ত্রী ভাষণ দেন। ওই দিন জনসভায় ফটিকছড়িবাসীর পক্ষ থেকে উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আফতাব উদ্দিন চৌধুরী প্রধানমন্ত্রীর কাছে এলাকার উন্নয়নসংক্রান্ত ১২ দফা দাবির একটি স্মারকলিপি দেন। দাবিগুলো জনসভায় পড়ে শোনানোর সিদ্ধান্ত ছিল। সময়ের স্বল্পতার কারণ দেখিয়ে তা পড়ে শোনানো হয়নি। ফটিকছড়ি উপজেলার চেয়ারম্যান আফতাব উদ্দিন চৌধুরী এ প্রসঙ্গে প্রথম আলোকে বলেন, ‘ফটিকছড়িবাসীর প্রাণের দাবিগুলো স্মারকলিপি আকারে প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দিয়েছি। দাবিগুলো বাস্তবায়ন করা হলে উপজেলার চেহারা পাল্টে যাবে।’ প্রধানমন্ত্রীর সামনে দাবিগুলো পাঠ করেননি কেন, এমন প্রশ্নের জবাবে আফতাব উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘সময়ের স্বল্পতার কারণে আমি দাবিগুলো পাঠ করতে পারিনি। প্রধানমন্ত্রী স্মারকলিপি হাতে নিয়েছেন। তিনি অবশ্যই আমাদের দাবি বিবেচনায় নিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।’ দলীয় সূত্র জানায়, ১২ দফা দাবির মধ্যে ফটিকছড়ি সদরের তিনটি কলেজ ও বিদ্যালয়কে সরকারীকরণ, বিভিন্ন রাস্তার সংস্কার ও নতুন রাস্তা নির্মাণ, ঘরে ঘরে গ্যাস সরবরাহ দেওয়া, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, ভুজপুরে নিহত তিন পরিবারের সদস্য ও আহতদের আর্থিক সহায়তার কথা উল্লেখ রয়েছে। এর মধ্যে ঘরে ঘরে গ্যাস সরবরাহ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। স্বাধীনতার পর ফটিকছড়িতে দীর্ঘ মেয়াদে নির্বাচিত সাংসদেরা বিরোধী দলে ছিলেন। এ কারণে এলাকার অবকাঠামোগত উন্নয়ন তেমন হয়নি। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফটিকছড়ি থেকে নির্বাচিত হন বিরোধীদলীয় প্রার্থী সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী। যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে তাঁর বিচার চলছে। বর্তমানে কারারুদ্ধ তিনি। তবে গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পরাজিত প্রার্থী এ টি এম পেয়ারুল ইসলামের দাবি, গত সাড়ে চার বছরে ফটিকছড়িতে ৩০০ কোটি টাকার উন্নয়নকাজ হয়েছে। ফটিকছড়ির বক্তপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. ফারুকুল আজম বলেন, ‘স্বাধীনতার ৪১ বছরে এই প্রথম কোনো প্রধানমন্ত্রী ফটিকছড়িতে এলেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে দু-একটি দাবি ছাড়া বাকিগুলোর ব্যাপারে কোনো আশ্বাসই আমরা পাইনি।’ ফটিকছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবু জাফর মাহমুদ বলেন, ‘গ্রামে বিদ্যুৎ সরবরাহ বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি পাইনি আমরা।’ ভুজপুরের ঘটনায় নিহত ফারুক ইকবালের স্ত্রী সানজিদা আফরিন বলেন, ‘চট্টগ্রাম নগর ও বিভিন্ন উপজেলার ১৩টি প্রকল্পের উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু ভুজপুরের ঘটনায় নিহত তিন ব্যক্তির পরিবারের জন্য কোনো অনুদান মেলেনি। আমরা পেয়েছি শুধু সান্ত্বনা।’ এদিকে স্থানীয় আওয়ামী লীগের বিবদমান দুটি পক্ষের বিরোধের কোনো নিষ্পত্তি হয়নি; বরং বিরোধ আরও বেড়েছে বলে মনে করেন দলীয় অনেকেই।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন গতকাল শুক্রবার বলেন, স্থানীয় আওয়ামী লীগ দ্বিগুণ উৎসাহে উজ্জীবিত। তারা ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবে। এলাকাবাসী ওয়াদা করেছেন, আগামী নির্বাচনে তাঁরা নৌকায় ভোট দিয়ে আসনটি নেত্রীকে উপহার দেবেন। উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি জামাল পাশা শওকত বলেন, ‘মনে করেছিলাম নেত্রীর উপস্থিতিতে বিরোধের নিষ্পত্তি হবে। কিন্তু তা না হওয়ায় দলের অনেক নেতা-কর্মী হতাশ।’