প্রবাসী ঋণে ধীরগতি

প্রতীকী ছবি

গত ২ মার্চ সৌদি আরব থেকে দেশে আসেন ২৭ বছর বয়সী কুমিল্লার মো. আইয়ুব। ছুটিতে এলেও আর যেতে পারেননি। নিজের পুকুরে মাছ চাষ করতে আগস্টের শুরুতে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকে ঋণ নিয়ে আলোচনা করতে যান। ব্যাংক থেকে বলা হয়, ভিসা বাতিলের কাগজ দেখাতে হবে। এমন অসম্ভব শর্ত শুনে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন তিনি।

সৌদি থেকে ছুটিতে এসে আটকে পড়া ময়মনসিংহের রিপন আহমেদ ব্যাংকের চাহিদামতো সব কাগজপত্র জমা দিয়েছেন। নিজেদের পারিবারিক দোকানে নতুন ধরনের ব্যবসা শুরু করতে চেয়েছেন তিনি। ব্যাংকের পক্ষ থেকে তদন্ত শেষে মৌখিক নিশ্চয়তাও দেওয়া হয়েছে তাঁকে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ব্যাংক বলেছে, নতুন করে ব্যবসা শুরুর পর ঋণের আবেদন করতে হবে। তিনি বলেন, হয়রানি করেছে ব্যাংক। চরম অভাবের মধ্যে ১৫ থেকে ১৬ হাজার টাকা খরচ করিয়ে ঋণ দেয়নি।

আইয়ুব, রিপনের মতোই অধিকাংশ প্রবাসীর অভিযোগ, ব্যাংকের কর্মকর্তারা ভালো করে কথা বলেন না। বিভিন্ন শর্ত পূরণ করতে কাগজপত্র তৈরি করে নিয়ে আসতে বলেন। ব্যবসা চালু করে অথবা প্রকল্প প্রস্তাবনা তৈরি করে নিয়ে আসতে বলে ব্যাংক। আর ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, প্রবাসীদের অধিকাংশই যথাযথ কাগজ নিয়ে আসতে পারেন না। অনেকের ক্ষেত্রে নাগরিক পরিচয়পত্রও পাওয়া যায় না। কিছু শর্ত তো মানতেই হবে। তাঁদের কথা বিবেচনা করে ইতিমধ্যেই শর্ত আরও শিথিল করা হয়েছে।

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত প্রায় দুই লাখ প্রবাসী দেশে ছুটিতে এসে আটকা পড়েন। এরপর এপ্রিল থেকে গতকাল পর্যন্ত আরও প্রায় দেড় লাখ প্রবাসী দেশে ফিরে এসেছেন। প্রতিদিন গড়ে আড়াই হাজার করে প্রবাসী ফিরে আসছেন বিভিন্ন দেশ থেকে। ফিরে আসা কর্মীদের পুনর্বাসনে ৭০০ কোটি টাকার তহবিল তৈরি করা হয়েছে। এ তহবিল থেকে প্রবাসী পুনর্বাসন ঋণ নামে ৪ শতাংশ সরল সুদে ২ থেকে ৫ লাখ টাকা পাবেন প্রবাসীরা। কৃষি, ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্পসহ বেশ কিছু খাতে এ ঋণ নিতে পারবেন প্রবাসীরা।

জানা গেছে, গত জুলাইয়ে ওয়েজ ওনার্স কল্যাণ বোর্ড থেকে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকে ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। আরও ৫০০ কোটি টাকা যুক্ত হবে। ১৫ জুলাই থেকে আবেদন সংগ্রহ করা হলেও ঋণ ছাড় হয়েছে খুবই কম। প্রথমে মার্চের পর যাঁরা দেশে ফিরেছেন, তাঁদের জন্য এ ঋণ গ্রহণের সুযোগ রাখা হয় নীতিমালায়। সম্প্রতি এটি সংশোধন করা হয়েছে। এখন জানুয়ারি থেকে দেশে ফেরা প্রবাসীরা এ ঋণসুবিধা নিতে পারবেন।

এ বিষয়ে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহতাব জাবিন প্রথম আলোকে বলেন, কোনো কঠিন শর্ত দেওয়া হয়নি। বোঝাপড়ায় হয়তো ঝামেলা হচ্ছে। এখন ধীরে ধীরে সহজ হয়ে আসছে। ঋণ বিতরণ শুরু হয়ে গেছে। এতে আরও অনেকে উৎসাহী হয়ে ব্যাংকে আসবেন।

প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের ব্রাহ্মণবাড়িয়া শাখা বলছে, এখন পর্যন্ত কোনো ঋণছাড় হয়নি ওই শাখা থেকে। কেউ কেউ এসে আলোচনা করেছেন। ব্যাংকটির মাদারীপুর শাখা বলছে, এখন পর্যন্ত দুজনের ঋণছাড় হয়েছে। আরও সাতটি আবেদন প্রক্রিয়াধীন। নরসিংদী শাখা বলছে, তাদের শাখায় আলোচনা করতে প্রবাসীরা আসছেন, কোনো ঋণছাড় হয়নি। টাঙ্গাইল শাখা বলছে, এখন পর্যন্ত ৮টি আবেদন জমা পড়েছে। একটি আগেই প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। এ সপ্তাহে আরও চারটি পাঠানো হবে।

ব্যাংকের বিভিন্ন শাখা কর্মকর্তারা প্রথম আলোকে জানান, শর্ত শিথিল করা ও জানুয়ারি থেকে আসা প্রবাসীদের ঋণের আওতায় আনায় ব্যাংকে আসা বাড়ছে। অনেকেই আলোচনা করে যাচ্ছেন। আবেদনও পড়ছে নিয়মিত। শিগগির ঋণ ছাড় হওয়া বাড়বে বলে তাঁদের ধারণা।

জানা গেছে, প্রবাসীদের সুবিধায় ঋণের শর্তে কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। এখন পাসপোর্ট বা আউটপাস (বহির্গমন ও আগমন সিলযুক্ত পাতাসহ), বিএমইটির স্মার্টকার্ড, চাকরিরত দেশের আইডি কার্ড, বৈধ পথে বিদেশ গমনের প্রমাণপত্র সত্যায়িত করার প্রয়োজন হবে না। আবেদনকারীর পাসপোর্ট বা আউটপাস ও বিএমইটির স্মার্টকার্ড বা চাকরিরত দেশের আইডি কার্ড বা বৈধ পথে বিদেশে গমনের প্রমাণপত্রের ফটোকপি দিলেই হবে। এখন জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিস থেকে প্রত্যয়নপত্র নিতে হচ্ছে না। আগে এটি বাধ্যতামূলক ছিল। এখন প্রশিক্ষণ/ অভিজ্ঞতার সনদ বাধ্যতামূলক না। দোকান/ গুদাম ভাড়ার ক্ষেত্রে ভাড়ার চুক্তিপত্র ও মালিকের অনাপত্তিপত্র বা নিজস্ব হলে মালিকানার প্রমাণপত্র জমা দিলেই চলবে। প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে ট্রেড লাইসেন্সের ফটোকপি দিতে হবে, ব্যক্তির ক্ষেত্রে দিতে হবে না।

গত সোমবার প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ বলেছেন, বেশি হারে প্রবাসী কর্মীকে সুবিধা দিতে ঋণের শর্তাবলি সহজ ও শিথিল করা হয়েছে। প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ নিয়ে এই ঋণের সদ্ব্যবহার করলে সুফল মিলবে।