প্রবাসী হলেও আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীকে সব সংকটে পাশে পেয়েছে বাঙালি

রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে রোববার অনুষ্ঠিত আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর স্মরণসভায় বক্তব্য দেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি
ছবি: সংগৃহীত

১৯৭৪ সালে প্রবাসে পাড়ি জমিয়েছিলেন সাংবাদিক ও কলাম লেখক আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য তাঁকে দেশের বাইরে পাঠিয়েছিলেন। দীর্ঘ প্রায় পাঁচ দশক তিনি প্রবাসে থাকলেও বাংলাদেশে প্রতিদিন ঘটে যাওয়া নানা ঘটনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। সব সংকটে বাঙালি তাঁকে পাশে পেয়েছে। আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর স্মরণসভায় এভাবে তাঁর কর্মের মূল্যায়ন করলেন আলোচকেরা।

আজ রোববার বিকেলে রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে এই স্মরণসভা হয়। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশ গবেষণা ইনস্টিটিউটের’ উদ্যোগে আয়োজিত এ সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি।

আবদুল গাফ্‌ফার চৌধুরীর লেখা ‘একুশের গান’ প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, এই গান বাংলা ভাষাভাষী সব মানুষকে একটি মোহনায় এনে দাঁড় করায়। এখন বিশ্বের মানুষের সামনে বাঙালির আত্মত্যাগের ইতিহাস, ভাষার জন্য সংগ্রামের অনন্য ইতিহাস তুলে ধরে এই গান। একুশের গান বিশ্বের সব ভাষাভাষী মানুষের মধ্যে নিজের মাতৃভাষার প্রতি ভালোবাসাও জাগ্রত করে।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মশিউর রহমানের সভাপতিত্বে সভার আলোচক ছিলেন সংসদ সদস্য আরমা দত্ত ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য হারুন-অর-রশিদ। অধ্যাপক হারুন-অর-রশিদ বলেন, বাঙালির জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য অন্তত দুই হাজার বছর ধরে এই জনপদের মানুষকে আন্দোলন-সংগ্রাম করতে হয়েছে, স্বপ্ন দেখতে হয়েছে, লড়াই করতে হয়েছে এবং বাংলা ভাষার উদ্ভাব ও বিকাশকে কেন্দ্র করে বাঙালি জাতিসত্তার বিকাশ ঘটেছে।

একুশের গান বাঙালির জাতীয় জাগরণের মূর্ত প্রতীক উল্লেখ করে হারুন-অর-রশিদ বলেন, জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আগে জাতিসত্তা বোধ সৃষ্টি ও জাগ্রত করতে হয়েছে। এই দীর্ঘ পথযাত্রায় অনেকে নানাভাবে অবদান রেখেছেন। কিন্তু একজন ব্যক্তি একটি গান রচনা করে এমন এক অবস্থার সৃষ্টি করেছেন, যা অতুলনীয়, যেটা দ্বিতীয়বার কারও পক্ষে রচনা করা সম্ভব হবে না।

স্মরণসভার শুরুতেই একুশের গান গেয়ে শোনান সরকারি সংগীত কলেজের শিক্ষার্থীরা। আবদুল গাফ্‌ফার চৌধুরীকে নিয়ে বক্তারা বলেন, তিনি সাংবাদিক, লেখক, কলামিস্ট, সাহিত্যিক, কবি, ঔপন্যাসিক, নাট্যকার, নির্দেশক, তথ্যচিত্র ও চলচ্চিত্র নির্মাতা ছিলেন। তিনি যদি আর একটি অক্ষরও না লিখতেন, শুধু যদি এই একটি গানও লিখে যেতেন, তাহলেও ঠিক এভাবেই তাঁকে স্মরণ করা হতো।

গত ১৯ মে যুক্তরাজ্যের একটি হাসপাতালে শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন আবদুল গাফ্‌ফার চৌধুরী। পরে দেশে এনে তাঁকে দাফন করা হয়।