প্রশাসনিক জটিলতায় ৫০ শিক্ষার্থীর পরীক্ষা অনিশ্চিত

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত শাহ মখদুম মেডিকেল কলেজে ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হওয়া ৫০ শিক্ষার্থীর পরীক্ষায় অংশ নেওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। আজ শনিবার থেকে ওই শিক্ষার্থীদের প্রথম প্রভিশনাল পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও প্রশাসনিক জটিলতায় তা সম্ভব হচ্ছে না। কলেজের অধিভুক্তি নবায়ন না করা এবং অনুমোদিত আসনের বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাঁদের পরীক্ষা নেওয়ার অনুমতি দেয়নি।
এ ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার শিক্ষার্থীরা নগরের খরখড়ি এলাকায় কলেজের ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেন এবং অধ্যক্ষের কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দেন। পরে তাঁরা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে কলেজ পরিদর্শকসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলেন।
জানা গেছে, ২০১৩ সালে শাহ মখদুম মেডিকেল কলেজ যাত্রা শুরু করে। কলেজের ট্রাস্টি বোর্ড ও পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও রাজশাহী-১ আসনের সাংসদ ওমর ফারুক চৌধুরী। কলেজে প্রথম ব্যাচে ১৮ জন ও দ্বিতীয় ব্যাচে ২৩ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়। তৃতীয় ব্যাচে কলেজ কর্তৃপক্ষ আসনসংখ্যা বৃদ্ধির আবেদন জানায়। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে পরিদর্শন শেষে ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষে ২৫ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করার অনুমোদন দেয়। কিন্তু কলেজ কর্তৃপক্ষ ৫০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করে। এ ঘটনায় ২০১৬ সালে ওই বর্ষের কার্যক্রম স্থগিত করে কলেজ কর্তৃপক্ষকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় বিশ্ববিদ্যালয়। জবাবে সন্তুষ্ট না হওয়ায় ওই শিক্ষাবর্ষের কার্যক্রম স্থগিতই রাখা হয়। ২০ মে প্রথম বর্ষ প্রভিশনাল পরীক্ষা বাবদ ওই শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে রেজিস্ট্রেশন ফি ও ফরম পূরণের টাকা আদায় করে কলেজ কর্তৃপক্ষ। এর আগে কলেজের অধিভুক্তির বিভিন্ন শর্ত পূরণ না করায় কলেজ কর্তৃপক্ষকে ২৫ লাখ টাকা জরিমানা করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। জরিমানার অর্থ পরিশোধ করে অধিভুক্তি নবায়নের নির্দেশনা ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের। কিন্তু কলেজ কলেজ কর্তৃপক্ষ সে নির্দেশনা না মেনেই ছাত্র ভর্তি করে। এমনকি তারা নির্দিষ্ট সময়ে জরিমানার অর্থও পরিশোধ করেনি।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ৭ মে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন উপাচার্য হিসেবে আবদুস সোবহান নিয়োগ পেলে মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ পরীক্ষার অনুমোদন চেয়ে আবারও আবেদন করে। ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ পরিদর্শক দপ্তরে সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে পরীক্ষা স্থগিত রাখার সিদ্ধান্তই বহাল থাকে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ পরিদর্শক বিধান চন্দ্র দাস বলেন, কলেজ কর্তৃপক্ষ আগের জরিমানার অর্থ পুরোপুরি পরিশোধ করেনি। ফলে ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষে তাদের অধিভুক্তি নবায়ন করা হয়নি। যেসব শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়েছে, তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিবন্ধিত নন। এ ছাড়া অনুমোদিত ২৫টি আসনের বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের এ মুহূর্তে পরীক্ষার অনুমতি দেওয়া সম্ভব নয়। কলেজ কর্তৃপক্ষ অধিভুক্তি নবায়ন করবে, তারপর ওই শিক্ষাবর্ষ চালু করা হবে। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা শিক্ষার্থীদের বিষয়ে মানবিক। তাঁদের শিক্ষাজীবনের দীর্ঘসময় যেন নষ্ট না হয়, তার জন্য আমাদের চেষ্টা থাকবে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষার্থীদের জিজ্ঞাসা, তাঁদের কী দোষ? তাঁরা কেন ছয় মাস সেশনজটে পড়বেন? কর্তৃপক্ষের ভুলের মাশুল তাঁরা কেন দেবেন? আর, ছয় মাস পর পরীক্ষা হবে, তারই বা কি নিশ্চয়তা আছে?
জানতে চাইলে, শাহ মখদুম মেডিকেল কলেজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মনিরুজ্জামান স্বাধীন বলেন, ‘স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে আমাদের ৫০ জন শিক্ষার্থী ভর্তির অনুমোদন আছে। সে অনুযায়ী আমরা ৫০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করেছি। কলেজের আসন কমবেশি অনুমোদন দেওয়ার এখতিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নেই। কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের একটি দূরত্বের কারণে এমনটি হয়েছে। আমরা আবেদন করেছি। আশা করছি, সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে আগামী নভেম্বরে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় বসতে পারবেন।’