প্রস্তাবিত গণমাধ্যমকর্মী আইনের ৩৭টি ধারাই সাংবাদিকদের মর্যাদাবিরোধী

প্রস্তাবিত গণমাধ্যমকর্মী আইনের ৫৪টি ধারার মধ্যে অন্তত ৩৭টি ধারাই সাংবাদিকদের মর্যাদা ও স্বার্থবিরোধী বলে মন্তব্য করেছেন সাংবাদিক নেতারা
ছবি: খালেদ সরকার

প্রস্তাবিত গণমাধ্যমকর্মী আইনের ৫৪টি ধারার মধ্যে অন্তত ৩৭টি ধারাই সাংবাদিকদের মর্যাদা ও স্বার্থবিরোধী। একে ‘কালো আইন’ আখ্যা দিয়ে তা সংশোধনের জন্য সাংবাদিকদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন সাংবাদিক নেতারা।
আজ বুধবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ‘ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি’র (ডিআরইউ) নসরুল হামিদ মিলনায়তনে আয়োজিত মুক্ত আলোচনা থেকে এ আহ্বান জানানো হয়।

আলোচনায় বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সাবেক সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, ‘সাংবাদিকতা বিশেষ ধরনের পেশা। তাই আমরা এমন আইন চাই, যাতে সাংবাদিকদের বিশেষ অধিকার প্রাধান্য পাবে।’ প্রস্তাবিত আইনের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে তিনি বলেন, ২০১৮ সালে যখন এই আইনের খসড়া তৈরি করা হয়, তখন তাতে ২৩টি ধারা ছিল। এখন সেখানে ৫৪টি ধারা করা হয়েছে। সার্বিক পর্যবেক্ষণে এই সাংবাদিক নেতা ১৯৭৪ সালের আইনে ফিরে যাওয়া এবং সেখানে ইলেকট্রনিক মিডিয়াকে যুক্ত করার দাবি জানান। এ ছাড়া বিদ্যমান শ্রম আইনের মাধ্যমে সাংবাদিকদের গ্র্যাচুইটি, ওয়েজ বোর্ড এবং ট্রেড ইউনিয়নের অধিকার নিশ্চিত করা সম্ভব বলে তিনি জানান।

বিএফইউজে—বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব দীপ আজাদ বলেন, ‘আমরা আমাদের অধিকার ও মর্যাদা ক্ষুণ্ন হয়, এমন কোনো আইন পাস হতে দেব না।’

বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সাবেক সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, ‘আমরা এমন আইন চাই, যাতে সাংবাদিকদের বিশেষ অধিকার প্রাধান্য পাবে
ছবি: খালেদ সরকার

আলোচনায় ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের একাংশের সভাপতি আবদুল কাদের গণি চৌধুরী প্রস্তাবিত আইনের শিরোনামসহ বিভিন্ন ধারার সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, প্রস্তাবিত আইনের ৫৪টি ধারার মধ্যে ৩৭-৩৮টি ধারাই সাংবাদিকদের স্বার্থবিরোধী। আইনটি দেখে মনে হয়, মালিকপক্ষ খসড়াটি লিখে দিয়েছে। সাংবাদিকদের সুবিধা কমানোর প্রস্তাব সম্পর্কে তিনি বলেন, আগে বিনোদন ছুটি ছিল তিন বছরে ৩০ দিন, প্রস্তাবিত আইনে সেটি ১৫দিন করা হয়েছে। ওয়েজ বোর্ড বাস্তবায়নের বাধ্যবাধকতা রাখা হয়নি। তাঁর দাবি, সাংবাদিকদের সুরক্ষার বদলে জুলুমের জন্য প্রস্তাবিত আইনটি করা হয়েছে।

প্রস্তাবিত আইনের খসড়া তৈরিতে ‘কালো হাত’–এর উপস্থিতি আছে বলে আলোচনায় অভিযোগ করেন ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন একাংশের সাধারণ সম্পাদক আকতার হোসেন। তিনি বলেন, প্রস্তাবিত খসড়ায় ট্রেড ইউনিয়ন থাকবে না, কল্যাণ সমিতি থাকবে। অনুমতি ছাড়া সমিতিতে যোগ দিলে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা ছয় মাসের কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। এই খসড়া আইনকে সাংবাদিকদের ‘মুক্তির সনদে’ রূপান্তর করতে তিনি সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান তিনি। পাশাপাশি সাংবাদিকদের সাপ্তাহিক ছুটি দুই দিন করার ক্ষেত্রে সবাইকে সোচ্চার হতে বলেন এই নেতা।

‘প্রস্তাবিত গণমাধ্যম আইন: সাংবাদিকতার সংকট ও বাস্তবতা’ শীর্ষক এই মুক্ত আলোচনাটির আয়োজন করেছিল ডিআরইউ। এতে সংগঠনটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক কবির আহমেদ খান বলেন, সরকারি চাকরিজীবীদের সাপ্তাহিক কর্মঘণ্টা ৪০, আর প্রস্তাবিত আইনে সাংবাদিকদের জন্য সেটি ৪৮ ঘণ্টা করা হয়েছে। তিনি এটি কমিয়ে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী ৩২ ঘণ্টা করার দাবি জানান।

মুক্ত আলোচনায় প্রস্তাবিত আইনকে ত্রুটিপূর্ণ ও অসম্পূর্ণ বলে মন্তব্য করেন ডিআরইউর সাবেক সভাপতি রফিকুল ইসলাম আজাদ। আইনটি ত্রুটিমুক্ত করতে সাংবাদিকদের মধ্যে ঐকমত্যের কোনো বিকল্প নেই। সবাইকে আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত থাকারও আহ্বান জানান তিনি। সংগঠনটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক রাজু আহমেদ বলেন, ‘আমরা আমাদের অধিকার নিয়ে সচেতন না। এই আইন পাস হলে আমাদের পেশা এই আইনের মাধ্যমেই নির্ধারিত হবে।’

আলোচনায় সঞ্চালনা করেন ডিআরইউয়ের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম হাসিব। তিনি বলেন, মুক্ত আলোচনার মাধ্যমে যেসব প্রস্তাব আসবে, সেগুলো একত্র করে সংসদীয় কমিটির কাছে পাঠানো হবে। তিনি সংগঠনটির সদস্যদের আগামী শনিবারের মধ্যে লিখিত আকারে তাঁদের প্রস্তাব জমা দেওয়ার আহ্বান জানান।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনটির সভাপতি নজরুল ইসলাম মিঠু। তিনি বলেন, কোনো সুবিধা দেওয়ার পর নতুন করে তা কমানো হয় না। কিন্তু প্রস্তাবিত আইনে আগের সুবিধা কমানো হয়েছে। তিনি প্রস্তাবিত আইনের দফা অনুযায়ী কী কী সংশোধন করা যায়, সেই প্রস্তাব দেওয়ার জন্য সাংবাদিকদের আহ্বান জানান।