প্রাণিত করে প্রতিটি দিন

আমাদের আহ্বানে লেখা পাঠিয়েছেন পাঠকেরা। কোভিড–১৯ অতিমারির শঙ্কা ও অনিশ্চয়তার দিনে প্রথম আলোয় প্রকাশিত কোনো খবর থেকে স্বস্তি, আনন্দ, সাহস বা প্রেরণা পেয়ে থাকলে লিখে জানাচ্ছেন সে কথা। লেখা পাঠানোর ঠিকানা: [email protected]

কোভিড-১৯ বা এ রোগের উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের লাশের দাফন ও সৎকার করে আলোচিত হন মাকসুদুল আলম খোন্দকার
ফাইল ছবি

শুরুতে করোনাভাইরাসের অতিমারি এসেছিল সবাইকে চরম হতাশা আর অনিশ্চয়তায় নিমজ্জিত করে। সেই অনিশ্চয়তায় শুরুর দিকে করোনা নিয়ে ছড়াতে থাকে নানা বিভ্রান্তিকর তথ্য আর গুজব। সেসব বিভ্রান্তিকর খবরের প্রতিক্রিয়ায় দেশে অমানবিকতার ছবি মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। করোনা রোগীর যখন প্রয়োজন স্বজনের ভালোবাসা আর বিশেষ যত্ন, ঠিক তখনই খবর পাওয়া যাচ্ছিল, তাকে রাস্তায় ফেলে যাচ্ছেন স্বজনেরা।

এ রকম হতাশায় ভরা অপ্রত্যাশিত সংকটের কালে গত ২৬ এপ্রিল প্রথম আলোয় মানসুরা হোসাইনের একটি রিপোর্ট পড়ে অভিভূত হলাম। চোখের কোণে অশ্রু টলমল করে উঠল আনন্দে। খবরটির শিরোনাম ছিল, ‘এই দুর্দিনে কাউন্সিলর খোরশেদ ভাই দৌড়াইয়্যা আসছেন।’ ৭৫ বছর বয়সী হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক কৈলাস বণিকের মেয়ে নিয়তি বণিকের মুখের কয়েকটি কথাকে খবরটির শিরোনাম করা হয়েছে।

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জনপ্রতিনিধি মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদের মানবদরদি কর্মপ্রচেষ্টার বর্ণনা সেই প্রতিবেদনটি। কৈলাস বণিক আজীবন মানুষকে চিকিৎসা দিয়ে গেছেন। অথচ করোনায় মারা গেছেন সন্দেহে বৃদ্ধ সেই মানুষটির মৃত্যুর পর কেউ আর মৃতদেহের কাছে ঘেঁষছিলেন না। অথচ তিনি করোনা রোগী ছিলেন না। পরিবারটির এই বিপদের মুহূর্তে ছুটে যান জনপ্রতিনিধি খন্দকার খোরশেদ। শ্মশানে তাঁর সৎকারের ব্যবস্থা করেন। শুধু সেটিই নয়, এ রকম আরও বহু করোনা ও যক্ষ্মা রোগীর চিকিৎসা, মৃতদেহ পরিবহন ও সৎকার তাঁর উদ্যোগে হয়েছে। নিজের ও পরিবারের ঝুঁকি নিয়ে এ কাজ করেছেন তিনি। সেই রিপোর্টে দেশবাসী চিনেছেন কাউন্সিলর খোরশেদকে। আমরাও নিজের দিকে ফিরে তাকিয়েছি।

সত্যি বলতে কি, প্রতিদিন সকালে প্রথম আলো হাতে নিয়ে যতক্ষণ সময় কাটাই, সারা দিনের মধ্যে সেটিই সবচেয়ে ভালো সময়। ছুটিতে গ্রামের বাড়ি বা অন্য কোথাও চলে গেলেও হকারকে বলা থাকে প্রতিদিন দরজার নিচ দিয়ে পত্রিকা দিয়ে যেতে। একবার তো দীর্ঘ এক মাস ছুটি কাটিয়ে বাসায় ফিরে দরজার তালা খুলেও দরজা ঠেলে সরানো যাচ্ছিল না। কী কারণ? পত্রিকার স্তূপ জমে গেছে।

৩১ জুলাই ২০২০ প্রথম আলোর আরেকটি সচিত্র সংবাদ পড়েও চোখে পানি চলে এসেছিল। করোনা যখন আমাদের মানবিকতাকে প্রশ্নে জর্জরিত করে তুলছিল, ঠিক তখনই এল সেই খবরটি। শিরোনাম, ‘অর্থি কেন কাঁদছিল’। ফটোসাংবাদিক রাফিদ ইয়াসারের তোলা ছবি আর লেখা। গৃহপালিত গরুর সঙ্গে ছোট্ট মেয়ে অর্থির গলা জড়িয়ে ধরে কান্নার ছবিটি ছুঁয়ে গিয়েছিল লখোকোটি মানুষের অন্তর। অর্থি আর গরুটি একসঙ্গে বেড়ে উঠেছে। গরুটিকে সে ঘাস খাইয়েছে, পানি খাইয়েছে। মাঠে নিয়ে গেছে চরাতে। একটা আত্মিক সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল তাদের মধ্যে। কোরবানির হাঁটে গরুটি বেচতে এসেছিল অর্থি, দাদার সঙ্গে। গরুটিকে ক্রেতার হাতে তুলে দেওয়ার সময় অর্থি আর নিজেকে সামলে রাখতে পারেনি। ভেঙে পড়েছে কান্নায়, গরুটির গলা জাপটে ধরে। মানুষে-প্রাণীতে ভালোবাসার এমন প্রাণস্পর্শী ছবি আর সংবাদ প্রথম আলোতেই সম্ভব।

আরেকটি ছবির কথা বলে শেষ করছি লেখাটি। ছবিটি ছাপা হয়েছে প্রথম আলোর ১০ আগস্ট সংখ্যার শেষ পৃষ্ঠায়। সাভারের বিরুলিয়া গ্রামের বন্যার ছবি। তুলেছেন আশরাফুল আলম। ছবিতে দেখা যাচ্ছে, বন্যার পানি ঘরের ভেতরে ঢুকে গেছে। একটি ছেলে সেই পানিতে ঘরের আসবাব পরিষ্কার করছে। সংকটকেই কাজে লাগানোর এই প্রতীকময় ছবিতে মুগ্ধ হয়ে গেলাম।

এভাবেই প্রথম আলো পাঠকদের প্রাণিত করে চলেছে দিনের পর দিন।

গত ২১ সেপ্টেম্বর প্রথম আলোয় পড়লাম, দৈনিক সংবাদপত্র ও সংবাদমাধ্যমের ফেসবুক পেজগুলোর তালিকায় অনুসারীর সংখ্যাবিচারে প্রথম আলো এখন বিশ্বে শীর্ষ দশে রয়েছে। এই তালিকা করেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম গবেষণা প্রতিষ্ঠান সোশ্যাল–বেকার। এভাবেই পিছিয়ে থাকা এ দেশকে বহু ক্ষেত্রে এগিয়ে নিয়েছে প্রথম আলো

প্রথম আলো এভাবেই আমাদের অর্জনের ভান্ডার সমৃদ্ধ করতে থাকুক।