প্রাধান্য পাচ্ছে প্রয়াত কিবরিয়া ও ফরিদ গাজীর ভাবমূর্তি

শাহ এ এম এস কিবরিয়া
শাহ এ এম এস কিবরিয়া

হবিগঞ্জ-১ (নবীগঞ্জ-বাহুবল) আসনের নির্বাচনে দলের চেয়ে ভোটারদের কাছে সাবেক অর্থমন্ত্রী প্রয়াত শাহ এ এম এস কিবরিয়া ও সাবেক সাংসদ দেওয়ান ফরিদ গাজীর ভাবমূর্তি প্রধান ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রয়াত এই দুই নেতার দুই ছেলে দুই জোট থেকে এবার নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন।

শাহ এ এম এস কিবরিয়ার ছেলে অর্থনীতিবিদ রেজা কিবরিয়া জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী। তিনি ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর আগে তিনি গত ১৮ নভেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে ড. কামাল হোসেনের হাত ধরে গণফোরামে যোগ দেন। এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী গাজী মোহাম্মদ শাহ নওয়াজ। তিনি এ আসনের টানা তিনবারের সাংসদ (১৯৯৬ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত) দেওয়ান ফরিদ গাজীর ছেলে। শাহ নওয়াজ এই প্রথম নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।

নির্বাচনের শেষ মুহূর্তে এসে এ আসনের ভোটারদের কাছে রেজা কিবরিয়া ও গাজী মোহাম্মদ শাহ নওয়াজের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হয়ে উঠেছেন প্রয়াত শাহ এ এম এস কিবরিয়া ও দেওয়ান ফরিদ গাজীর বিগত দিনের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড। বিশেষ করে শাহ এ এম এস কিবরিয়া অর্থমন্ত্রী থাকাকালে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক নির্মাণ করা হয়। এর সবচেয়ে বেশি সুফল ভোগ করছে জেলার নবীগঞ্জ ও বাহুবল উপজেলার মানুষ। এ ছাড়া বৃন্দাবন কলেজের স্নাতক (সম্মান) কোর্স চালু, হবিগঞ্জে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ও কিবরিয়া পৌর মিলনায়তন স্থাপন এবং পুরো জেলার যোগাযোগের ক্ষেত্রে অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি তাঁর সততা ও নিষ্ঠার বিষয়গুলো উঠে আসছে ভোটারদের মুখে মুখে। ভোটাররা মনে করেন, তিনি নির্মমভাবে হত্যাকাণ্ডের শিকার না হলে দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পরিণত হতো এ অঞ্চল।

এ ছাড়া দেওয়ান ফরিদ গাজী সাংসদ থাকাকালে এলাকায় তাঁর নানা উন্নয়ন এবং তাঁর সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের বিষয়গুলোও ভোটারদের কাছে শেষ মুহূর্তের আলোচনায় আসছে।

রেজা কিবরিয়া তাঁর নির্বাচনী এলাকার অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি শিক্ষার মানোন্নয়নে আধুনিক কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন, মানুষের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা, শিশু ও মাতৃত্বকালীন সেবাসহ স্বাস্থ্যসেবার আধুনিকীকরণ, একটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় এবং হাসপাতাল স্থাপন, অবহেলিত চা-শ্রমিকদের ভূমি অধিকার, স্বাস্থ্য ও শিক্ষার অধিকার বাস্তবায়ন এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে শিশুদের বিনোদন খেলার মাঠ এবং ক্রীড়া কমপ্লেক্স স্থাপন করাসহ সাতটি উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাস্তবায়নের ঘোষণা দিয়েছেন।

আর গাজী মোহাম্মদ শাহ নওয়াজ গ্রামকে শহরে উন্নীত, শতভাগ বিদ্যুতায়নের চেষ্টা, ঘরে ঘরে গ্যাসসুবিধা বাস্তবায়ন, ব্যক্তি উদ্যোগে কলকারখানা স্থাপনে উৎসাহিত করা, হাওরাঞ্চলের উন্নয়ন, চা-শ্রমিকদের স্বার্থরক্ষাসহ স্থানীয় ১১টি ইস্যু বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

নবীগঞ্জ শহরের বাসিন্দা ফয়সল চৌধুরী বলেন, শাহ এ এম এস কিবরিয়া ও দেওয়ান ফরিদ গাজী—দুজনই এ এলাকার কৃতীসন্তান। দলের চেয়ে তাঁদের মূল্যায়ন করেই এ এলাকার ভোটাররা ভোট দেবেন। তবে বাবাদের ভাবমূর্তির সঙ্গে যে প্রার্থী যোগ্য হিসেবে বিবেচিত হবেন, তাঁকেই ভোটাররা বেছে নেবেন।

একই এলাকার ভোটার কলেজছাত্রী নাসরিন আক্তার বলেন, শাহ এ এম এস কিবরিয়া যেমন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ব্যক্তি ছিলেন, তেমনি তাঁর ছেলেও একই মানের ব্যক্তি। ভোটাররা যোগ্যতাকেই প্রাধান্য দেবেন বলে তিনি মনে করেন।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী ও গণফোরাম সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য রেজা কিবরিয়া বলেন, তাঁর বাবার স্বপ্নগুলো বাস্তবায়ন করতে তিনি এ আসন থেকে নির্বাচন করছেন। তিনি বলেন, নবীগঞ্জ ও বাহুবল উপজেলা শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও অবকাঠামোগতভাবে অনেক পিছিয়ে আছে। এ দুটি উপজেলাকে নিয়ে তাঁর বেশ কিছু পরিকল্পনা রয়েছে। ভোটাররা যদি তাঁকে সুযোগ দেন, তিনি এ দুই উপজেলাকে দেশের মডেল হিসেবে দাঁড় করাবেন।

আওয়ামী লীগের প্রার্থী গাজী মোহাম্মদ শাহ নওয়াজ বলেন, তাঁর বাবার সময় এ এলাকার মানুষ যে সুযোগ-সুবিধা ভোগ করেছেন, তা অন্য কোনো সাংসদ দিতে পারেননি। এলাকার মানুষকে তাঁর বাবা ভালোবাসতেন। তেমনি মানুষও তাঁর বাবাকে ভালোবাসেন। তিনি মনে করেন, এবারের নির্বাচনে ভোটাররা তাঁর বাবার ভাবমূর্তি বিবেচনায় নিয়ে তাঁকে মূল্যায়ন করবেন।

এ আসনের অপর প্রার্থীরা হলেন লাঙ্গল প্রতীকের মোহাম্মদ আতিকুর রহমান (জাতীয় পার্টি), মই প্রতীকের চৌধুরী ফয়সল শোয়েব (বাসদ), গামছা প্রতীকের মো. নুরুল হক (কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ), মোমবাতি প্রতীকের জুবায়ের আহমেদ (বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট)। এবং হাতপাখা প্রতীকে আবু হানিফা আহমদ হোসেন (ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ)।