ফায়ার সার্ভিসের প্রথম নারী স্টেশন অফিসার

চোখে দৃঢ় আত্মবিশ্বাস, আর বুকে অসীম সাহস তাঁদের। সবার সঙ্গে তাল মিলিয়ে পা ফেলছেন দুরন্ত গতিতে। সুশৃঙ্খল প্রতিটি পদক্ষেপ। কাছে না গেলে বোঝা যায় না তাঁরা তিনজন নারী। পুরুষের সঙ্গে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। তাঁরা তিনজন বাংলাদেশের প্রথম নারী ফায়ার সার্ভিস স্টেশন অফিসার বা স্টাফ অফিসার।
গতকাল রোববার সকালে মিরপুর ১০ নম্বর গোল চত্বরের পাশে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স ট্রেনিং কমপ্লেক্সে কথা হয় লিমা খানম, খালেদা ইয়াসমিন ও লাসমিন সুলতানার সঙ্গে। প্রশিক্ষণ শুরু হয় ভোর সাতটায়। আগুন নেভানো, আগুন থেকে নিজেকে রক্ষা, উদ্ধার, প্রাথমিক চিকিৎসাসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ চলে।
লাসমিনের বাড়ি ফরিদপুরের মধুখালীতে। বাবা নেই, মা গৃহিণী। তিন ভাই ও তিন বোনের অনেক আদরের লাসমিন। তাঁর মেজ ভাই সেনাবাহিনীতে আছেন। ফায়ার সার্ভিসে যোগ দিতে ভাই-ই উৎসাহিত করেন লাসমিনকে। লাসমিন রসায়নে স্নাতক পাস করেছেন।
>গতকাল সকালে মিরপুর ১০ নম্বর গোল চত্বরের পাশে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স ট্রেনিং কমপ্লেক্সে কথা হয় লিমা খানম, খালেদা ইয়াসমিন ও লাসমিন সুলতানার সঙ্গে
খালেদা ইয়াসমিন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর শেষ করে যোগ দিয়েছেন ফায়ার সার্ভিস স্টেশন অফিসার হিসেবে। তিনি বেলন, ‘সব জেনেই কঠিন ও গৌরবজনক এই পেশা বেছে নিয়েছি। প্রথম যেদিন প্রশিক্ষণ নিতে মাঠে নামি, সেদিন খুব ভয় হয়েছিল। কিন্তু মানুষের সেবায় নিয়োজিত—এই ভেবে মনে হলো, আমিও পারব।’ প্রশিক্ষণে এসে বাড়িতে সবাই মিলে টিভি দেখা এবং রাতে ভাত খাওয়ার সময় গল্প করার স্মৃতিই বেশি মনে পড়ে খালেদার।
লিমা খানম সমাজকর্মে স্নাতকোত্তর শেষ করেছেন। তিন ভাইয়ের একমাত্র বোন লিমা। ছোটবেলায় তাঁর ভাই পানিতে পড়ে গেলে তাকে উদ্ধার করেছিলেন লিমা। লিমা প্রথম আলোকে বলেন, প্রশিক্ষণের প্রথমে খুব কষ্ট হতো। এখন এই পরিবেশে ভালো লাগে। তবে মুঠোফোন ব্যবহার করার নিষেধাজ্ঞা থাকায় বাড়িতে কথা বলতে না পারায় মন খারাপ থাকে লিমার।
মাসুদা ঠাকুর এই নারীদের সার্বক্ষণিক প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করছেন। নারীদের সঙ্গে কমপ্লেক্সেই থাকেন। তিনি বলেন, নারীদের অংশগ্রহণ বাড়লে বিভিন্ন সময় দুর্যোগ মোকাবিলা করতে আরও বেশি সফল হবে ফায়ার সার্ভিস।
এই নারী স্টেশন অফিসারদের প্রশিক্ষণ চলছে এ বছরের ২৪ আগস্ট থেকে। ট্রেনিং কমপ্লেক্স অধ্যক্ষ মোজাম্মেল হক বলেন, ১৫৪ জন অফিসারের মধ্যে মেয়ে ৪ জন। কানিজ ফাতেমা নামের একজন অসুস্থ থাকায় প্রশিক্ষণে অংশ নিতে পারছেন না। মোজাম্মেল বলেন, ‘এই সেবা খাতে নারীদের আরও অংশগ্রহণ দরকার। তবে যোগদানে নিয়মাবলি কিছু পরিবর্তন করা হলে আরও নারী যোগ দেবে আশা করি। উচ্চতার মাপ চাওয়া হয়েছিল ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি। যে কারণে অনেক মেয়ে অংশ নিতে পারেনি। এটা পরিবর্তন করে ৫ ফুট ২ ইঞ্চি করলে অনেকে অংশ নিতে পারবেন।’