ফুটবল মাঠে, করোনাকালে

কলসিন্দুেরর মেয়েদের অনুশীলন থেমে ছিল নাছবি: আনোয়ার হোসেন

করোনা মহামারির সময় ঘরবন্দী থেকে খবরের শিরোনাম হয়েছেন দেশ–বিদেশের অনেক খেলোয়াড়। ঠিক উল্টোটা ঘটেছে কলসিন্দুরের কিশোরী ফুটবলারদের ক্ষেত্রে। নিজেদের শৈশবের খেলার মাঠে নিয়মিত দল বেঁধে অনুশীলন করেছেন নারী ফুটবল দলের হয়ে খেলা কলসিন্দুরের কিশোরীরা।

খরস্রোতা নেতাই নদের পাড়ে তাঁদের শৈশবের খেলার মাঠ। কারও বাড়ি থেকে ১০ মিনিটের হাঁটাপথ, কারও বাড়ি থেকে ৩০ মিনিট। নেতাই নদের নড়বড়ে বাঁশের সাঁকো আর খেয়ানৌকায় পারাপার। কোনো যানবাহন চলে না। ওই পথ হেঁটে প্রচণ্ড গরমের মধ্যে অনুশীলন শেষ করে আবারও হেঁটে ফিরেছেন বাড়ি। তবু চলেছে সানজিদা, মারিয়া আর তহুরাদের ফুটবল অনুশীলন।

সানজিদা-মারিয়াদের কাছে জানা গেল, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হলে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) তাঁদের ছুটি দিয়ে বাড়ি পাঠানোর সময় বলেছিল, যতটা সম্ভব অনুশীলনের মধ্যে থাকতে হবে। তা না হলে ফিটনেস কমে যাবে। করোনা থেমে গেলে দেশে–বিদেশে অনেক খেলা। সেসব খেলায় বাংলাদেশের হয়ে খেলতে হবে।

ভারতের মেঘালয় সীমান্তবর্তী ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকা কলসিন্দুর। কলসিন্দুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের হয়ে টানা তিনবার বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব গোল্ডকাপে চ্যাম্পিয়ন হওয়া মেয়েরা এখন কলসিন্দুর উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে স্কুল ও কলেজ শাখায় পড়ছেন। তাঁরা জাতীয় দলসহ বাংলাদেশের বয়সভিত্তিক বিভিন্ন দলের হয়ে নিয়মিত দেশে–বিদেশে ফুটবল খেলছেন।

কামরান পারভেজ

বর্তমানে কলসিন্দুরের ১২ জন ফুটবলার নিয়মিত বাফুফের অধীনে অনুশীলন করেন। বাফুফের আবাসিক ক্যাম্পে থাকা কলসিন্দুরের ১২ কিশোরী ফুটবলার হচ্ছেন শিউলি আজিম, সানজিদা আক্তার, মার্জিয়া আক্তার, মারিয়া মান্দা, সাজেদা, তহুরা, নাজমা, বড় শামসুন্নাহার, ছোট শামসুন্নাহার, মাহমুদা, রোজিনা ও রূপা। করোনা সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর মার্চেই বাফুফের আবাসিক ক্যাম্প থেকে ছুটি দেওয়া হয় নারী ফুটবলারদের। ওই সময় থেকেই রূপা বাদে বাকি ১১ জন ফিরে আসেন কলসিন্দুরে। রূপা ঢাকায় বোনের বাসায় রয়ে যান।

নেতাই নদের নড়বড়ে বাঁশের সাঁকো আর খেয়ানৌকায় পারাপার। কোনো যানবাহন চলে না। ওই পথ হেঁটে প্রচণ্ড গরমের মধ্যে অনুশীলন শেষ করে আবারও হেঁটে ফিরেছেন বাড়ি।

করোনাভাইরাস সংক্রমণের ছুটি দেওয়ার সময় বাফুফের কর্মকর্তারা এই ফুটবলারদের প্রতিদিনের খাবারের তালিকা দিয়ে দেন। পাশাপাশি ন্যূনতম ফিটনেস ট্রেনিং করার কথাও বলেন।

নির্দেশনা মানা সহজ ছিল না। তবু দেশের টানে তাঁরা রোদ–বৃষ্টি মাথায় নিয়ে অনুশীলন করতেন নেতাই নদের পাড়ের মাঠটায়। নেতাই নদ খুব খরস্রোতা। ভারতের পাহাড়ি ঢলে নেতাই প্লাবিত হয়ে প্রতিবছর উপজেলাজুড়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি করে। এ বছরও ব্যতিক্রম হয়নি। এরপরও তাঁরা অনুশীলন চালিয়ে গেছেন।


কামরান পারভেজ প্রথম আলোর ময়মনসিংহ প্রতিনিধি