ফুলবাড়িয়ায় ১৪৪ ধারা

ময়মনসিংহের ফুলবাড়ী উপজেলায় কলেজ জাতীয়করণের আন্দোলনে দুজন নিহত হওয়ার ঘটনার উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে কড়া নিরাপত্তায় পুলিশ l ছবি: প্রথম আলো
ময়মনসিংহের ফুলবাড়ী উপজেলায় কলেজ জাতীয়করণের আন্দোলনে দুজন নিহত হওয়ার ঘটনার উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে কড়া নিরাপত্তায় পুলিশ l ছবি: প্রথম আলো

ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ায় কলেজ জাতীয়করণের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে দুজন নিহত হওয়ার পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে গতকাল সোমবার সকালে উপজেলা সদর এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত এ ধারা বলবৎ থাকবে বলে জানিয়েছে প্রশাসন।
গত রোববারের ওই সংঘর্ষের ঘটনায় ফুলবাড়িয়া থানায় গতকাল পুলিশের পক্ষ থেকে মামলা হয়েছে। সংঘর্ষের সময় পথচারী সফর আলী নিহত হওয়ার ঘটনায় তাঁর ভাই থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা করেছেন।
ফুলবাড়িয়া কলেজ জাতীয়করণ দাবি আদায় কমিটির আহ্বায়ক এস এম আবুল হাসেম বলেন, সংঘর্ষে নিহত ফুলবাড়িয়া কলেজের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদের লাশ জানাজার জন্য গতকাল সকালে প্রথমে কলেজ মাঠে নেওয়ার চেষ্টা করেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। কিন্তু পুলিশের পক্ষ থেকে নিষেধ করা হয়। পরে উপজেলা প্রশাসন মাইকে ঘোষণা দিয়ে উপজেলা সদরে সকাল থেকে ১৪৪ ধারা জারি করে।
ফুলবাড়িয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) লীরা তরফদার জানান, পরিস্থিতি বিবেচনায় জনগণের জানমালের সুরক্ষার স্বার্থে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত এ আদেশ বলবৎ থাকবে।
মামলার ব্যাপারে ফুলবাড়িয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রিফাত খান বলেন, পুলিশের কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে থানার এসআই রফিকুল ইসলাম অজ্ঞাতনামা ৪০০-৫০০ জনকে আসামি করে মামলা করেছেন। এ ছাড়া সংঘর্ষের সময় নিহত পথচারী সফর আলীর ভাই হজরত আলীও অপমৃত্যুর মামলা করেছেন।
নিহত শিক্ষকের দাফন সম্পন্ন: অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদের গ্রামের বাড়ি নান্দাইল উপজেলার কাদেরপুর গ্রামে গতকাল বেলা ১১টায় তাঁর জানাজা ও দাফন সম্পন্ন হয়। সকালে তাঁর বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, তাঁর পরিবারকে সান্ত্বনা দিতে সেখানে নান্দাইল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আবদুল মালেক চৌধুরী, ইউএনও মোহাম্মদ শাহানুর আলম, নান্দাইল পৌর মেয়র রফিক উদ্দিন ভূঁইয়া, গৌরীপুর সার্কেলের এএসপি মো. আক্তারুজ্জামান, স্থানীয় থানার পরিদর্শক (তদন্ত) খলিলুর রহমান হাওলাদার প্রমুখ সেখানে উপস্থিত রয়েছেন। এ সময় নিহত শিক্ষকের মেয়ে সাবিহা আজাদ বলেন, ‘আব্বু তো গতকাল সুস্থ অবস্থায় কলেজে গিয়েছিল। সবাই দেখেছে, পুলিশ বিনা দোষে আব্বুকে কলেজের ভেতর গিয়ে পিটিয়েছে। এখন আর মামলা করলে কী লাভ হবে, আব্বুকে তো আর ফিরে পাব না।’
ফুলবাড়িয়া উপজেলা সদর থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে জোরবাড়িয়া গ্রামেও গতকাল বিকেলে নিহত শিক্ষকের গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
তদন্ত কমিটি: সংঘর্ষে এক শিক্ষকসহ দুজন মারা যাওয়ার ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। গতকাল সচিবালয়ে এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এ কথা জানান। তিনি বলেন, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) শামসুল হুদাকে প্রধান করে তিন সদস্যের এ কমিটি করা হয়েছে। শিক্ষক নিহত হওয়ার ঘটনায় তিনি মর্মাহত বলেও জানান মন্ত্রী।
মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ময়মনসিংহ অঞ্চলের পরিচালক আব্দুল মোতালেব গতকাল দুপুরে ফুলবাড়িয়া কলেজ পরিদর্শন করেন। তিনি বলেন, অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের নির্দেশে কলেজটি পরিদর্শন করেন তিনি।
এ ছাড়া ঘটনা তদন্তে স্থানীয়ভাবে দুটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এর মধ্যে তিন সদস্যের একটি কমিটির প্রধান করা হয়েছে ময়মনসিংহের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আরিফুর রহমানকে। তিন সদস্যের অপর কমিটির প্রধান ময়মনসিংহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নুরে আলম।
এদিকে শিক্ষক নিহত হওয়ার ঘটনার প্রতিবাদে গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেছে বাংলাদেশ কলেজ শিক্ষক সমিতি। এতে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষকনেতা কাজী ফারুক আহমেদ, আসাদুল হক প্রমুখ।
সুজানগরে কলেজ জাতীয়করণের দাবিতে হরতাল: পাবনার সুজানগর উপজেলা সদরে নিজাম উদ্দিন আজগর আলী ডিগ্রি (এনএ কলেজ) কলেজ জাতীয়করণের দাবিতে গতকাল উপজেলায় সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালিত হয়েছে। এনএ কলেজ জাতীয়করণ রক্ষা কমিটি এই হরতালের ডাক দেয়। এতে উপজেলা সদরে দিনভর যানবাহন চলাচল, অফিস ও দোকানপাট বন্ধ থাকে।
{প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা; ময়মনসিংহ ও পাবনা অফিস এবং নান্দাইল (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি}