বখাটেদের ঠেকাতে শিক্ষকদের 'পাহারা'

ক্লাস চলাকালে ক্যাম্পাসে বখাটেদের প্রবেশ ঠেকাতে চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলার স্থানীয় একটি বেসরকারি কলেজের শিক্ষকেরা দলে দলে ভাগ হয়ে পাহারা দিচ্ছেন। ১ জুলাই থেকে তাঁরা এ কার্যক্রম চালাচ্ছেন।

ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নাম মতলব ডিগ্রি কলেজ। মতলব দক্ষিণ উপজেলা সদরে এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি অবস্থিত। কলেজটির চার-পাঁচজন শিক্ষক বলেন, ১ জুলাই থেকে কলেজের একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হওয়া নবীন শিক্ষার্থীদের ক্লাস (শ্রেণি কার্যক্রম) শুরু হয়। এর আগে বেশ কয়েক দিন ধরে কলেজের ভেতর, ফটক ও ফটকের সামনে জটলা পাকিয়ে বখাটে ও বহিরাগত কিশোর-যুবকদের বেপরোয়া আনাগোনা দেখা গেছে। এতে কলেজের পরিবেশ ও শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছিল। ছাত্ররা ক্লাস ছেড়ে বখাটে ছেলেদের সঙ্গে আড্ডায় লিপ্ত হচ্ছিল। উত্ত্যক্তের শিকার হচ্ছিল ছাত্রীরা।

সূত্রটি জানায়, বখাটে ও বহিরাগত বখাটেদের এ অপতৎপরতা বন্ধে কলেজের শিক্ষক পরিষদ ও পরিচালনা পর্ষদের যৌথ উদ্যোগে ১ জুলাই থেকে শিক্ষকেরা দলে দলে ভাগ হয়ে কলেজের ভেতর ও আশপাশের এলাকায় পাহারা দিতে শুরু করেন। শনি থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত শিক্ষকদের মোট ছয়টি দল এ কার্যক্রমে অংশ নেয়। প্রতিদিন সকাল নয়টা থেকে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত ছয় সদস্যের একটি দল বখাটেদের ঠেকাতে পাহারা দিচ্ছে। প্রতিটি দলের নেতৃত্বে রয়েছেন কলেজের একজন জ্যেষ্ঠ শিক্ষক। পাহারার দায়িত্বে থাকা কোনো শিক্ষক ক্লাসে গেলে বা ব্যক্তিগত কাজে বাইরে গেলে তখন অন্য দলের শিক্ষক ওই দায়িত্ব পালন করেন। এসব কাজের তদারকি করছেন কলেজের অধ্যক্ষ।

গতকাল বুধবার সকাল ১০টায় সরেজমিনে দেখা যায়, কলেজের মূল ফটকের আশপাশে ছয়-সাতজন শিক্ষকের জটলা। অপরিচিত ও সন্দেহজনক কাউকে দেখলেই তাকে থামিয়ে পরিচয় জানছেন। সন্তোষজনক পরিচয় না পেলে তাকে কলেজের বাইরে পাঠিয়ে দিচ্ছেন। এ ছাড়া দু-তিনজন শিক্ষককেও শ্রেণিকক্ষের সামনে ‘টহল’ দিতে দেখা গেছে ওই সময়।

কলেজটির ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিষয়ের সহকারী অধ্যাপক মোজাম্মেল হক বলেন, তিনিসহ সাতজন শিক্ষক প্রতি মঙ্গলবার কলেজ এলাকায় টহল দিচ্ছেন। এতে কলেজের ভেতরে ও বাইরে থাকা বখাটেরা ঝামেলা করার সুযোগ পাচ্ছে না। শিক্ষার্থীরাও শান্তিপূর্ণভাবে কলেজে আসা-যাওয়া করতে পারছে।

কলেজের হিসাববিজ্ঞান বিষয়ের প্রভাষক মিজানুর রহমান বলেন, আগে বখাটেদের উৎপাতে পাঠদান করাই কঠিন ছিল। তাদের হইচই ও বেপরোয়া চলাফেরায় শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা বিব্রতবোধ করত। পাহারা চালুর পর সে সমস্যা কেটে গেছে।

কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী মিনহাজ ও সানজিদা আক্তার বলে, আগে বখাটেদের উৎপাতে কলেজে আসা-যাওয়া এবং ক্লাস করতে অসুবিধা হতো। বখাটেদের নানা মন্তব্য শুনতে হতো। শ্রেণিকক্ষের পাশে এসে বখাটেরা চেঁচামেচি করত, উঁকিঝুঁকি দিত। এখন সেই সমস্যা নেই।

অধ্যক্ষ আবদুস সামাদ বলেন, ক্লাস চলাকালে ক্যাম্পাসে সুন্দর ও স্বাভাবিক পরিবেশ নিশ্চিত করার লক্ষ্যেই এই টহলব্যবস্থা। কলেজের ৪১ জন শিক্ষকের পাশাপাশি কর্মচারীরাও এ কাজে সহযোগিতা করছেন। এতে ভালো ফল পাওয়া যাচ্ছে। কলেজে বহিরাগত ও বখাটেদের তৎপরতা বন্ধ হয়েছে। এ প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শহীদুল ইসলামের ভাষ্য, বখাটে প্রতিরোধে ওই কলেজের শিক্ষকেরা যে কার্যক্রম চালাচ্ছেন তা প্রশংসার দাবি রাখে। এটি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। এ ব্যাপারে প্রশাসনও শিক্ষকদের সহযোগিতা করবে।