বগুড়া-১ আসনে উপনির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত বিএনপির

বগুড়া-১ (সারিয়াকান্দি-সোনাতলা) শূন্য আসনের উপনির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। করোনাভাইরাস সংক্রমণ ও বন্যায় মানুষের দুর্ভোগ উপেক্ষা করে নির্বাচন কমিশন (ইসি) ভোট গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়ায় এই উপনির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার এই সিদ্ধান্ত নেয় কেন্দ্রীয় বিএনপি।

বগুড়া-৬ আসনের সাংসদ ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম মো. সিরাজ (জি এম সিরাজ) প্রথম আলোকে বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, আজ রোববার সন্ধ্যায় দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সভাপতিত্বে বিএনপির স্থায়ী কমিটির ভার্চ্যুয়াল বৈঠকে বগুড়া-১ ও যশোর-৬ আসনে নির্বাচনে অংশগ্রহণ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।

জি এম সিরাজ আরও বলেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণ মহামারি ও বন্যার মধ্যে নির্বাচন কমিশনের দুটি আসনে ভোট গ্রহণের ঘোষণা অযৌক্তিক ও অগ্রহণযোগ্য মনে করে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটি। এ জন্য বিএনপি বগুড়া-১ আসনে উপনির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না।

সাংসদ বলেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণে দেশে জাতীয় সংকট বিরাজ করছে। করোনা মহামারিতে এখন মানুষের মৃত্যুর মিছিল চলছে। চিকিৎসা মিলছে না। নমুনা পরীক্ষার পর্যাপ্ত সুযোগ নেই। নমুনা দিতে গিয়ে রোগী-স্বজনেরা সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে মার খাচ্ছেন, লাঞ্ছিত হচ্ছেন। বন্যায় লাখো মানুষ পানিবন্দী। মানুষ নানা সংকটে দিশেহারা। এ রকম পরিস্থিতিতে নির্বাচনের কোনো পরিবেশ নেই। জাতীয় সংকটের এমন সময়ে উপনির্বাচনে ভোট গ্রহণের নামে ভোটারবিহীন কেন্দ্রে ব্যালট কেটে বাক্স ভরানোর অশুভ ফন্দি আটা হচ্ছে।

নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৪ জুলাই এই আসনের ভোট গ্রহণ করা হবে। ইসির ঘোষণার পর আজ রোববার থেকে নৌকায় ভোট চেয়ে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী সাহাদারা মান্নান প্রচারণায় নামলেও মাঠে নেই ধানের শীষের প্রার্থী আহসানুল তৈয়ব জাকির।

আহসানুল তৈয়ব জাকির প্রথম আলোকে বলেন, করোনা মহামারি আর বন্যার দুর্ভোগে মানুষের মধ্যে ভোটের নামে প্রহসনের নাটক মঞ্চায়নের প্রস্তুতি চলছে। নির্বাচনী এলাকার বন্যাদুর্গত অর্ধলক্ষাধিক মানুষ চরম কষ্টে দিন কাটাচ্ছে। দুর্গত এলাকায় ত্রাণ নেই, আশ্রয়হীন মানুষ খোলা আকাশের নিচে দিন কাটাচ্ছে। দুই উপজেলায় দেড় শতাধিক মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত। অনেকেই মহামারিতে মারা গেছেন। করোনায় বিপর্যস্ত মানুষ। বন্যায় বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে দুই উপজেলার ৯ ইউনিয়নের ৭০ হাজার পানিবন্দী মানুষের। বসতবাড়ি হারিয়ে চরম দুর্ভোগ-কষ্টে খোলা আকাশের নিচে অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটছে দুর্গত মানুষের। অনেক ভোটকেন্দ্র জলমগ্ন রয়েছে। এ রকম পরিস্থিতিতে মানুষের কাছে ভোট চাইতে যাওয়া বিব্রতকর।

রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, ইসির তফসিল অনুযায়ী ২৯ মার্চ এই আসনের ভোট গ্রহণের কথা ছিল। করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতিতে ২১ মার্চ ভোট গ্রহণ স্থগিত ঘোষণা করা হয়।

২০০৮ থেকে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচন পর্যন্ত এই আসনে তিন দফা আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সাংসদ হন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও প্রয়াত নেতা আবদুল মান্নান। গত ১৮ জানুয়ারি তাঁর মৃত্যুজনিত কারণে আসনটি শূন্য হয়। পরে নির্বাচন কমিশন ২৯ মার্চ ভোট গ্রহণের দিন ধার্য করে তফসিল ঘোষণা করে। ৯ মার্চ প্রতীক বরাদ্দ পেয়ে প্রচারণা শুরু করেন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা।

নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীরা হলেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও সাবেক সাংসদ আবদুল মান্নানের স্ত্রী সাহাদারা মান্নান (নৌকা), বিএনপি মনোনীত প্রার্থী এ কে এম আহসানুল তৈয়ব জাকির (ধানের শীষ), জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোকছেদুল আলম (লাঙ্গল), বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের প্রার্থী নজরুল ইসলাম (বটগাছ), বাংলাদেশ প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দলের (পিডিপি) মো. রনি (বাঘ) এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী ইয়াসির রহমতুল্লাহ (ট্রাক)।

মার্চে দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ দেখা দেওয়ায় প্রার্থীদের প্রচারণায় ছেদ পড়ে। বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ থেকে নির্বাচন স্থগিতের দাবি তোলা হয়। ২১ মার্চ নির্বাচন স্থগিত ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন।

নৌকার প্রার্থী সাহাদারা মান্নান প্রথম আলোকে বলেন, ছয় মাস ধরে এলাকায় নির্বাচিত সাংসদ নেই। উন্নয়ন কর্মকাণ্ড স্থবির হয়ে রয়েছে। লোকজন তাঁদের চাওয়া, দাবির কথা কাউকে জানাতে পারছেন না। স্থগিত ভোট গ্রহণের ঘোষণায় উচ্ছ্বসিত ভোটাররা। তাঁরা নির্বাচিত সাংসদ চান। বন্যা-নদীভাঙনের সঙ্গে লড়াইয়ে অভ্যস্ত মানুষ। করোনা-বন্যায় ভোটের ওপর কোনো প্রভাব ফেলবে না। ভোটার উপস্থিতি আশাতীত হবে।