বগুড়ায় ৪০ শিক্ষার্থীকে আটক করে নৈতিক শিক্ষা দিলেন জেলা প্রশাসক!

স্কুল-কলেজের ক্লাস ফাঁকি দিয়ে রেস্টুরেন্টে বসে আড্ডা দেওয়া ঠিক নয়—এ বিষয়ে নৈতিক শিক্ষা দিতে বৃহস্পতিবার ৪০ জন শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়েছিল বলে দাবি করেছেন বগুড়ার জেলা প্রশাসক। আজ শনিবার সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ দাবি করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নূরে আলম সিদ্দিকী বলেন, বেশ কিছুদিন থেকে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করে আসছিলেন, স্কুল-কলেজ সময়ে ক্লাস ফাঁকি দিয়ে কিছু কোমলমতি শিক্ষার্থী রেস্টুরেন্টে বসে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছে। শিক্ষার্থীদের বিপথ থেকে ফেরাতে এবং কাউন্সেলিং করানোর জন্য ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে তাদের আটক করে নিয়ে আসা হয়। স্কুল ফাঁকি দিয়ে এভাবে বাইরে আড্ডা দেওয়া ঠিক নয়।

জেলা প্রশাসক বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের আমার সম্মেলনকক্ষে বসানো হয়। তাদের বোঝানো হয়েছে, এভাবে আড্ডা দিয়ে বেড়ালে ভবিষ্যতে অন্ধকার নেমে আসবে এবং আড্ডা সাফল্যের ক্ষেত্রে অন্তরায় হয়ে দাঁড়াবে। এসব বুঝিয়ে-সুজিয়ে শিক্ষার্থীদের বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়। কোনোভাবেই এসব শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়নি, ডেকে এনে কাউন্সেলিং করা হয়েছে।’

গত বৃহস্পতিবার একজন নির্বাহী হাকিমের নেতৃত্বে আর্মড পুলিশ সঙ্গে নিয়ে শহরের কয়েকটি ফাস্টফুড ও চাইনিজ রেস্টুরেন্টে এই অভিযান চালানো হয়। এ সময় স্কুল-কলেজ ফাঁকি দিয়ে রেস্টুরেন্টে বসে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেওয়ার অভিযোগে ৪০ জন কিশোর-কিশোরীকে আটক করে জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়। কয়েক ঘণ্টা পর অভিভাবকদের জিম্মায় তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু স্থানীয় কিছু দৈনিক ও অনলাইন পত্রিকা বিষয়টি নিয়ে সংবাদ পরিবেশন করে এবং শিক্ষার্থীদের ছবি প্রকাশ করে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও তা ভাইরালও হয়। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনার ঝড় ওঠে। অনেক অভিভাবক অভিযোগ করেছেন, তাহলে কি তাঁদের ছেলে-মেয়েরা রেস্টুরেন্টে বসে খেতে পারবে না?

এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য আজ বগুড়া সার্কিট হাউসে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। জেলা প্রশাসক নূরে আলম সিদ্দিকী বলেন, ডেকে আনা শিক্ষার্থীদের ছবি ও নাম পরিচয় কোনোভাবেই যাতে গণমাধ্যমে প্রকাশ না হয়, সে বিষয়ে সাংবাদিকদের অনুরোধ করা হয়েছিল। কিন্তু কিছু অনলাইন মাধ্যম ও পত্রিকায় বিষয়টি অতিরঞ্জিত করে খবর ছাপা হয়েছে। এটা নৈতিকতাবিরোধী কাজ। বরং সংবাদ প্রচার করে শিক্ষার্থীদের মানসিক ও সামাজিকভাবে হেয় করা হয়েছে।

রেস্টুরেন্ট আড্ডা দেওয়া যদি অপরাধ হয়, তবে রেস্টুরেন্টের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হলো না কেন? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে জেলা প্রশাসক বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। রেস্টুরেন্ট মালিকদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।