বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় ৪ নেতাকে শীর্ষে রেখে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা প্রকাশ

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক
ছবি: প্রথম আলো

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে এসে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ বুদ্ধিজীবীদের নামের চূড়ান্ত একটি তালিকা প্রকাশ করেছ সরকার।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক আজ বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে ১ লাখ ৪৭ হাজার ৫৩৭ জন বীর মুক্তিযোদ্ধার তালিকা প্রকাশ করেন। ১৯১ জন শহীদ বুদ্ধিজীবীর নামের তালিকাও একই সঙ্গে প্রকাশ করা হয়।

বীর মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং জাতীয় চার নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, এম মনসুর আলী ও এ এইচ এম কামারুজ্জামানের নাম।

আরও পড়ুন

তালিকায় ঢাকা বিভাগের বীর মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা সবচেয়ে বেশি ৩৭ হাজার ৩৮৭ জন। চট্টগ্রাম বিভাগে ৩০ হাজার ৫৩ জন, বরিশাল বিভাগে ১২ হাজার ৫৬৩ জন, খুলনা বিভাগে ১৭ হাজার ৬৩০ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ১০ হাজার ৫৮৮ জন, রাজশাহী বিভাগে ১৩ হাজার ৮৯৯ জন, রংপুর বিভাগে ১৫ হাজার ১৫৮ জন, সিলেট বিভাগে ১০ হাজার ২৬৪ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন।

তৃণমূল থেকে যাচাই-বাছাইয়ের পর বীর মুক্তিযোদ্ধাদের চূড়ান্ত তালিকার প্রথমটি প্রকাশ করেছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। সেটা অপূর্ণাঙ্গই থাকছে।

মন্ত্রী মোজাম্মেল হক বলেন, ‘আমরা ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমে এন্ট্রি করেছি ১ লাখ ৮২ হাজার ৮৩৪ জন বীর মুক্তিযোদ্ধার নাম। তবে প্রায় ৩৫ হাজার জনের বেসামরিক গেজেট জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের অনুমোদন না থাকায় এ তালিকার বাইরে রাখা হয়েছে।’

বিজয়োল্লাসরত কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা, ১৯৭১।
ছবি: আনোয়ার হোসেন

ইতিমধ্যে এসব গেজেট নিয়মিতকরণের উদ্দেশ্যে ৪৩৪ উপজেলার প্রতিবেদন হাতে পেয়েছে মন্ত্রণালয়। যাচাই-বাছাই ও আপিল শুনানি শেষে চলতি বছরের ৩০ জুন বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নাম চূড়ান্ত তালিকায় প্রকাশ করা হবে বলে জানান মন্ত্রী।

সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী বলেন, যাঁরা মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন অথচ বিতর্কিত, তাঁদের নাম তালিকা থেকে বাদ যাবে না। তবে বিতর্কিতদের মধ্যে কেউ যদি কোনো খেতাব পেয়ে থাকেন, তা বাতিল করা হবে। তালিকায় বিতর্কিতদের নামের পাশে মুক্তিযুদ্ধ–পরবর্তী ‘অপকর্ম’ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য লেখা থাকবে।

তালিকায় বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি, সাবেক রাষ্ট্রপতি খন্দকার মোশতাক আহমদ এবং বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের নাম থাকা নিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘যদি বলি জিয়াউর রহমান যুদ্ধ করেননি, এটা তো ঠিক হলো না। তিনি তো সেক্টর কমান্ডার ছিলেন, যুদ্ধ করেছেন। পরবর্তীকালে কী কাজ করেছেন, সেটার শাস্তি হতে পারে।’ তিনি বলেন, খন্দকার মোশতাক মুজিবনগর সরকারে ছিলেন। তবে এটাও সত্য, তিনি বঙ্গবন্ধু হত্যার সঙ্গে জড়িত।

বুদ্ধিজীবীদের তালিকা প্রণয়ন প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল বলেন, ‘১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করলেও তাঁদের কোনো তালিকা করতে পারিনি। বিলম্ব হলেও সে তালিকা করা শুরু করেছি।’

স্বাধীনতার পর থেকে মুক্তিযোদ্ধার তালিকা নিয়ে বিতর্ক উঠেছে বারবারই। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৭ সালে মুক্তিযোদ্ধাদের যাচাই-বাছাইয়ের প্রক্রিয়া শুরু হলে নতুন করে প্রায় দেড় লাখ আবেদন আসে। কিন্তু যাচাই-বাছাই কমিটি গঠন থেকে শুরু করে পুরো প্রক্রিয়ায় ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ ওঠায় শেষ পর্যন্ত নতুন তালিকা প্রকাশ স্থগিত করতে হয় সরকারকে।