বঙ্গবন্ধু কলেজের চমক

খুলনা নগরের নামকরা সব সরকারি-বেসরকারি কলেজকে পেছনে ফেলে এ বছরের এইচএসসির ফলাফলে সবার নজর কেড়ে নিয়েছে রূপসা উপজেলার গ্রামের একটি কলেজ। এর নাম সরকারি বঙ্গবন্ধু কলেজ। কলেজটি উপজেলার বেলফুলিয়া গ্রামে অবস্থিত।

শহরের নামকরা কলেজগুলোকে পেছনে ফেলে সেরা হওয়ার পেছনে রহস্য কী? এই প্রশ্নের জবাবে কলেজ থেকে জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থী নিপা বলেন, ‘ক্লাস, ক্লাস আর ক্লাস।’ তিনি বলেন, ‘আমি ভর্তি হওয়ার পর থেকেই ক্লাসের গুরুত্ব দেখে আসছি। কলেজ কর্তৃপক্ষ সব সময়ই ক্লাসে উপস্থিতির জন্য শিক্ষার্থীদের উৎসাহিত করছে। নির্ধারিত সংখ্যক ক্লাসে উপস্থিত না থাকলে শিক্ষার্থীসহ তাঁর অভিভাবককে ডেকে ক্লাস করার পরামর্শ দেওয়া হয়।’

এই কলেজটি পাসের হার ও জিপিএ-৫ পাওয়ার দিক দিয়ে খুলনার সরকারি মহিলা কলেজ, সরকারি এম এম সিটি কলেজ, সরকারি পাইওনিয়ার গার্লস কলেজ, সরকারি সুন্দরবন আদর্শ মহাবিদ্যালয়, মিলিটারি কলেজিয়েট স্কুল খুলনা এবং খুলনা পাবলিক কলেজকে পেছনে ফেলে দিয়েছে। সরকারি বঙ্গবন্ধু কলেজ থেকে এ বছর ৬৫১ জন পরীক্ষায় অংশ নেয়। এর মধ্যে একজন পরীক্ষা দেওয়ার সময় অসুস্থ হওয়ায় আর পরীক্ষা দিতে পারেনি। বাকি ৬৫০ জনই পাস করেছেন। পাসের হার ৯৯ দশমিক ৮৫, যা জেলার শীর্ষে। এ ছাড়া এই কলেজ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৩৩২ জন।

তবে এইচএসসি পরীক্ষায় শুধু জিপিএ-৫ পাওয়ার ক্ষেত্রে জেলার শীর্ষে অবস্থান করছে খুলনা সরকারি এম এম সিটি কলেজ। এ বছর ৪৮৮ জন জিপিএ-৫ পেয়েছেন এই কলেজ থেকে। ১ হাজার ৪৪১ জন পরীক্ষা দিয়ে পাস করেছেন ১ হাজার ৪১৬ জন। পাসের হার ৯৮ দশমিক ২৭।

২০১৩ সাল থেকে সরকারি বঙ্গবন্ধু কলেজ আলোচনায় আসতে থাকে। ওই বছর বোর্ডে ১৫তম স্থান পায় কলেজটি। ২০১৪ সালে নবম স্থান অর্জন করে। গত বছর থেকে বোর্ডে সেরা কলেজের তালিকা করা হয় না। তবে বিভিন্ন কলেজের ফলাফল বিশ্লেষণ করে শিক্ষকেরা দেখেছিলেন বোর্ডে এই কলেজের অবস্থান চতুর্থ।

কলেজের সূত্রে জানা গেছে, ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু কলেজের যাত্রা শুরু হয়। ২০১৩ সালে কলেজটিকে জাতীয়করণ করা হয়। বর্তমানে কলেজে এইচএসসিসহ তিনটি বিভাগে স্নাতক (সম্মান) ও ডিগ্রি পাস কোর্সে চার হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী রয়েছেন। শিক্ষকের সংখ্যা ৪২। কলেজ ক্যাম্পাসের পুকুরের মাঝখানে শিক্ষার্থীদের জন্য দারুণ একটি কমনরুম আছে। রুমের ছাদে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযোদ্ধাদের নান্দনিক ভাস্কর্য।

কলেজের অধ্যক্ষ সরদার ফেরদৌস আহম্মেদ বলেন, ‘বছর বছর প্রত্যাশা বাড়ছিল আরও ভালো করার। ভালো করার তাগিদ থেকেই আমরা শিক্ষার্থীদের উৎসাহিত করেছি। আমাদের কলেজে ২০-২৫ জন শিক্ষার্থীকে নিয়ে একেকটা গ্রুপ করা হয়। সেই গ্রুপের হাজিরার তদারকির জন্য একজন শিক্ষককে দায়িত্ব দেওয়া হয়। ১০টায় শিক্ষার্থীরা ক্লাসে ঢোকার পর একাডেমিক ভবনগুলোর গেটে নজরদারি রাখা হয়, যেন কেউ বাইরে যেতে না পারে।’