বছরের একদিন নয়, বাবা দিবস হোক প্রতিটি দিন

মরুভূমির মধ্যে চলতে গিয়ে যদি আপনি পথিমধ্যে গাছ খুঁজে পান, আপনার অনুভূতি কেমন হবে? নিশ্চয় এত বেশি ভালো যে ভাষায় প্রকাশ দুরূহ। আপনি তার ডানাগুলোর নিচে শীতল ছায়া উপভোগ করবেন। সেই গাছটি যদি আপনাকে মরুভূমিতে চলা সারাটি পথ ছায়া দেয়? তাহলে আপনি বুঝতেই পারবেন না রৌদ্রের উত্তপ্ততা। ঠিক এমনই আমাদের প্রত্যেকের জীবনে একটি গাছ আছে। যিনি পৃথিবীর এই দূষিত সব বিষয় থেকে আগলে রেখেছেন। তিনি হচ্ছেন বাবা। নীরবে যুদ্ধ করে যাওয়া ব্যক্তিটির নাম বাবা। আপনার নিরবচ্ছিন্ন সুখের পূর্ণতা যে এনে দেয় সেই তো বাবা। বাবাকে ভালোবাসার কথা কখনো মুখে বলা হয়নি। বলা হয়নি কতখানি ভালোবাসি। যার বাবা বেঁচে আছে, সে–ই তো ভাগ্যবান।

কিন্তু, অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হলো, যখন বাবা একটু বৃদ্ধ হয়ে যায়। নিজেরা একটু বড় হই। বুঝতে শিখি দুনিয়াকে। তখনই ভুলে যাই মাথার ওপর ছায়া দিতে থাকা গাছটিকে। অত্যন্ত নিষ্ঠুর হয়ে যাই তার প্রতি। ভুলে যাই তার অতীত কর্মপ্রচেষ্টা। কত ত্যাগই না তিনি করেছেন আমাদের জন্য। নিজের সব দুঃখ-কষ্ট বুকে চেপে সন্তানের হাসিমাখা মুখ দেখার জন্য যে বাবা ব্যাকুল থাকতেন, সে না খেলে যিনি থাকতেন নির্ঘুম, সে না খেলে থাকতেন অনাহারে, অসুস্থ হলে ঠায় বসে থাকতেন শিয়রে। খাবার সময় নিজের প্লটে ছোট টুকরাটা নিয়ে আমাদের দিয়েছেন বড় টুকরা। ঈদের সময় নিজে নতুন জামা না কিনে পরিবারের সবার জন্য নতুন জামা কিনেছেন। পুরাতন জামা গায়ে গিয়েছেন ঈদগাহে। কত কিছুই না করেছেন আমাদের মুখে হাসি ফোটাতে। সন্তানের কোন আবদার রাখেননি অপূর্ণ।

কিন্তু হায়! যখন তারা বৃদ্ধ হয়ে যায়, আমরা তাদের মূল্যায়ন করছি না। রেখে আসছি বৃদ্ধাশ্রম নামক মানবতার নিকৃষ্ট কারাগারে। বাংলাদেশের মাটিতেও রয়েছে মানবতার এই নিকৃষ্ট কারাগার। বাংলাদেশের ছয়টি বিভাগে আছে ছয়টি বৃদ্ধাশ্রম। আরও বেসরকারি আছে কিছু। এগুলোকে বলা হচ্ছে অপ্রতুল। দিন দিন বাড়ছে বৃদ্ধাশ্রমে বৃদ্ধ ব্যক্তির সংখ্যা। আমরা ভুলে যাচ্ছি আমাদের বড় হওয়ার পেছনে তাঁদের ত্যাগের কথা। তাঁদের বিবেচনা করছি বিরক্তিকর পদার্থ বা বাড়তি ঝামেলা হিসেবে।

কিন্তু, আমরা গ্রামগঞ্জে প্রচলিত একটা প্রবাদবাক্য ভুলে যাই, ‘হাতি মরলেও লাখ টাকা।’ তাঁরা বৃদ্ধ হলেও তাঁদের মূল্যায়ন কমা উচিত নয়। বাবা শব্দটি ছোট, শুনতেও ছোট, লিখতেও ছোট কিন্তু এর গুরুত্ব পৃথিবীর চেয়ে বিশাল। বাবাকে নিয়ে কোনো ইতিহাস লেখা হয়নি। আমি মনে করি লেখা উচিত।

ইতিহাস কেউ লিখুক আর না লিখুক, বাবা তো বাবাই। তাঁর কোনো তুলনা নেই। আমার দৃষ্টিতে সব বাবা আমার দুচোখে দেখা পৃথিবীর সেরা মানব। তাই আর যেন কোনো মা–বাবাকে বৃদ্ধাশ্রমে থাকতে না হয়। মাতৃভূমি থেকে যেন বিলুপ্তি ঘটে বৃদ্ধাশ্রম নামক কারাগারের। আমরা প্রতিবছর জুন মাসের তৃতীয় রোববার বাবা দিবস পালন করে থাকি। বাবা দিবস বছরে মাত্র এক দিন যেন না হয়, বাবা দিবস হোক প্রতিদিন।


*শিক্ষার্থী, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়