বন্দর চত্বরে ১৫১ গাড়ির জঞ্জাল

চট্টগ্রাম বন্দর চত্বরে এভাবে বছরের পর বছর ধরে পড়ে আছে খালাস না করা গাড়ি। গত শনিবার তোলা ছবি l সৌরভ দাশ
চট্টগ্রাম বন্দর চত্বরে এভাবে বছরের পর বছর ধরে পড়ে আছে খালাস না করা গাড়ি। গত শনিবার তোলা ছবি l সৌরভ দাশ

১৯৯৩ সালের ২৮ আগস্ট। চট্টগ্রাম বন্দরের জেটিতে ভিড়ে জাহাজ ‘এমভি কারাভি ভেরেট’। আমদানি করা শতাধিক গাড়ি ছিল জাহাজটিতে। এর মধ্যে একটি ট্রাক খালাস করেননি আমদানিকারক। এরপর ২২ বছর ধরে খোলা আকাশের নিচে পড়ে রয়েছে ট্রাকটি। জং ধরে লতাগুল্ম গজিয়ে ট্রাকটি বহু আগেই অকেজো হয়ে গেছে। বন্দরে পড়ে থাকা সবচেয়ে পুরোনো গাড়িও এটি।
বন্দরের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৯৩ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত আমদানি করা এ রকম ১৫১টি গাড়ি পড়ে আছে বন্দর চত্বরে। এর মধ্যে কার, মিনিবাস, ডাম্প ট্রাক, পিকআপ, জিপ, লরি ও প্রাইম মুভার রয়েছে। এসব গাড়ি ছাড়াও বন্দর চত্বরে ৩০ দিনের বেশি পড়ে থাকা গাড়ির সংখ্যা ১৬৮টি।
গত শনিবার বন্দরের গাড়ি রাখার চত্বর ঘুরে দেখা যায়, দীর্ঘদিন পড়ে থাকা গাড়িগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। কাস্টমস অকশন গোলায় রাখা গাড়িগুলোর অবস্থা আরও খারাপ। সেখানে গাড়ির শুধু কাঠামোটাই রয়েছে। যন্ত্রাংশও নষ্ট হয়ে গেছে।
পুরোনো গাড়ি আমদানিকারকদের সংগঠন বারভিডার মহাসচিব মাহবুবুল হক চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, নানা কারণে আমদানিকারকেরা ওই সব গাড়ি খালাস করতে পারেননি। এসব গাড়ির মধ্যে পাঁচ বছরের পুরোনো আমদানি নিষিদ্ধ গাড়ি যেমন রয়েছে, তেমনি বিশেষ কাজের জন্য আনা ও পর্যটন সুবিধার অপব্যবহার করে আনা গাড়িও রয়েছে। শুল্ক-সংক্রান্ত বিরোধেও অনেক গাড়ি খালাস করেন না আমদানিকারকেরা। তবে দীর্ঘদিন পড়ে থাকা এসব গাড়ি সরিয়ে বন্দরের জায়গা খালি করতে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া উচিত।
বন্দর কর্তৃপক্ষ প্রতিনিয়ত ৩০ দিনের বেশি পড়ে থাকা গাড়ির তথ্য হালনাগাদ করে কাস্টমস কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করে। কারাভি ভেরেট জাহাজে আসা ট্রাকটির আমদানিকারক তা খালাস না করায় ১৯৯৪ সালে এটি কাস্টমস কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়। ২২ বছর ধরে গাড়িটি পড়ে থাকায় বন্দর কর্তৃপক্ষ এই ট্রাক থেকে ভাড়া (চত্বরে গাড়ি রাখার জন্য) বাবদ কোটি টাকা পাওনা হয়েছে। তবে এই গাড়ির এখন আর নিলামে বিক্রি করার মতো অবস্থাও নেই।
চট্টগ্রাম বন্দরের পরিচালক (পরিবহন) গোলাম ছরওয়ার প্রথম আলোকে বলেন, ১৯৯৩ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত সময়ে আমদানি করা ১৫১টি গাড়ি বহু আগেই নিলামে তুলতে কাস্টমস কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়। প্রতিনিয়ত ৩০ দিনের বেশি পড়ে থাকা গাড়ির তালিকা কাস্টমস কর্তৃপক্ষকে দেওয়া হয়। কিন্তু নিলামে তুলে গাড়ি বিক্রি করতে পারছে না কাস্টমস।
বন্দরের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৯৭ সালের ২৩ আগস্ট বন্দরে ভেড়া এম ব্রাইট জাহাজ থেকে নামানো একটি কারও এখনো চত্বরে পড়ে আছে। এর চেসিস নম্বর সিবিআই ১২০৪৮১৮। গাড়িটির কাঠামোও ভেঙে গেছে।
জানতে চাইলে কাস্টমসের সহকারী কমিশনার (নিলাম) চপল চাকমা প্রথম আলোকে বলেন, নিয়মানুযায়ী বন্দরে ৩০ দিনের বেশি পড়ে থাকা কোনো পণ্য নিলামে তোলার প্রক্রিয়া শুরু করে কাস্টমস। পুরোনো গাড়ি নিলামে তোলার পর অনেক সময় আমদানিকারকেরা আদালতে রিট আবেদন করেন। আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকলে নিলামে তুলে বিক্রি করা যায় না। আবার নিলামে সবই বিক্রি হয় না। তবে যেসব পুরোনো গাড়ি অকেজো হয়ে আছে, সেগুলো সরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।