লালমনিরহাটের শওকত আলীর (৬৫) কাছে সময়টা অভাবের। দিনমজুরি করে কোনোরকমে সংসার চলছিল। এর মধ্যে শিলাবৃষ্টিতে বসতঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মেরামত জরুরি হয়ে পড়ে। নিজের আর্থিক দুর্গতির কথা জানিয়ে তিনি অনেকের কাছেই সহায়তা চেয়েছিলেন। কিন্তু পাননি। বলেন, ‘কায় দিবে, সবারে তো এখে অবস্থা।’
প্রথম আলো বন্ধুসভার পক্ষ থেকে চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে যখন শওকত আলীর হাতে টিন ও ঘর মেরামতের অর্থ তুলে দেওয়া হয়, তখন তিনি আনন্দে আত্মহারা হয়ে যান। তিনি বলেন, ‘খাই না খাই, মাথা গোঁজার ঠাঁইটা তো হইল।’
বন্ধুসভার ‘সহমর্মিতার ঈদ’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে শওকত আলীকে এই সহায়তা দেয় হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধুসভা। দেশজুড়ে প্রতিবছরের মতো এবারও বন্ধুসভার উদ্যোগে পবিত্র ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে সহমর্মিতার ঈদ কর্মসূচি চালানো হয়। গত ২০ এপ্রিল শুরু করে এই কর্মসূচি চলে ১৯ মে পর্যন্ত।
বন্ধুসভার সদস্যরা এবার ৪ হাজার ৬৪৮ পরিবারকে ২৪ লাখ ১০৫ টাকার ঈদ উপহার দিয়েছেন। কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছে দেশ-বিদেশের ১৩০টি বন্ধুসভা। এর মধ্যে সর্বোচ্চসংখ্যক পরিবারকে অর্থসহায়তার ভিত্তিতে ১১টি বন্ধুসভাকে সেরা ঘোষণা করা হয়েছে। সেরা বন্ধুসভাগুলো হলো যশোর, গোয়ালন্দ, ক্যামব্রিয়ান স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ভৈরব, সিলেট, সিরাজগঞ্জ, রাজশাহী, চাঁদপুর, জামালপুর, ভোলা ও রাজবাড়ী।
এবারের উপহারের ধরন ছিল ভিন্ন ভিন্ন। কোনো কোনো বন্ধুসভা চাল-ডাল-তেল, কোনো বন্ধুসভা সেমাই-চিনি, আবার কোনো বন্ধুসভা সুগন্ধি চাল ও মাংস কিনে অসহায় মানুষকে উপহার দিয়েছে। এর বাইরেও নানাভাবে অসহায় মানুষকে সহায়তা করা হয়েছে।
কর্মসূচির অংশ হিসেবে যশোর বন্ধুসভার সাবেক সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন অসহায় এক নারীর বন্ধক থাকা ১২ কাঠা ফসলি জমি ছাড়িয়ে দেন। এতে ব্যয় হয় ৬০ হাজার টাকা। জমি বন্ধকমুক্ত হওয়ায় ওই নারী কেবলই কাঁদছিলেন। মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, কাজটি করে তিনি ওই অসহায় নারীর পরিবারের সদস্যদের মুখে যে হাসি দেখেছেন, তা অমূল্য।
এবারের ঈদে ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধুসভার সদস্যরা রেলস্টেশনের ভাসমান অসহায় কিছু মানুষকে রান্নার সরঞ্জামাদিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনে দিয়েছেন। ঈদে মানুষকে রান্না করেও খাইয়েছেন তাঁরা। ভৈরব বন্ধুসভার সহযোগিতায় শত পরিবার পোলাও-মাংস খেয়ে ঈদ উদ্যাপন করেছে।
সারা দেশে বন্ধুদের উদ্যোগে সহমর্মিতার ঈদ পালন করতে গিয়ে এমন অসংখ্য অসংখ্য ঘটনার দেখা পাওয়া গেছে। কর্মসূচি পালনকারী বন্ধুরা অনেক হৃদয়স্পর্শী ঘটনা লিখে পাঠিয়েছেন। বন্ধুরা বলেছেন, অসহায় মানুষকে সহযোগিতা করতে গিয়ে মনে হয়েছে জীবন কত সুন্দর! মানুষকে ভালোবাসাই সবচেয়ে বড় আনন্দ।
বন্ধুসভাগুলো তহবিল গড়ে তুলেছিল নিজেদের চাঁদা এবং পরিবার-পরিজন ও উপদেষ্টাদের অনুদানের মাধ্যমে। জাতীয় পর্ষদের সদস্যদের অনেকেও সহমর্মিতার হাত বাড়িয়ে দেন। ঢাকায় একজন উপদেষ্টার মাধ্যমে আসে তিন লাখ টাকা। বন্ধুদের কেউ একটি পরিবার, কেউ চারটি পরিবার, কেউ আরও বেশি পরিবারকে সহায়তার জন্য অর্থসহায়তা দেন, নিজেদের সাধ্য অনুযায়ী। এভাবেই ২৪ লাখ টাকার বেশি বিতরণ করা সম্ভব হয়।
প্রথম আলো বন্ধুসভার সভাপতি মুমিত আল রশিদের নেতৃত্বে সহমর্মিতার ঈদ কর্মসূচি সমন্বয়ের দায়িত্বে ছিলেন মোহতারিমা রহমান। বিভাগীয় পর্যায়ে কর্মসূচি সমন্বয়ে সহযোগিতা করেন জাতীয় পরিচালনা পর্ষদ ও ঢাকা মহানগর বন্ধুসভার সদস্যরা।