বন্য প্রাণীদের সঙ্গে নিয়েই তাঁদের ‘সংসার’

আদনান আজাদ ও ফারজানা ইয়াসমিন
ছবি: জাহিদুল করিম

নায়ক, বন্য প্রাণী ফটোগ্রাফারসহ নানা পরিচয় থাকলেও একজন বন্য প্রাণীপ্রেমী হিসেবে পরিচয় দিতেই বেশি পছন্দ করেন আদনান আজাদ (আসিফ)। অন্যদিকে ফারজানা ইয়াসমিনের (রিক্তা) পরিচয় তিনি অভিনয়শিল্পী ও বন্য প্রাণী ফটোগ্রাফার। এই দুজন মানুষের নিজেদের মধ্যে পরিচয় এক যুগ ধরে। বর্তমানে তাঁরা স্বামী–স্ত্রী। সম্প্রতি হাতি রক্ষায় উদ্যোগের জন্য আলোচনায় এসেছেন এই দম্পতি।

দুই বছর আগে বিয়ে করেন আদনান ও ফারজানা। তবে আকিজ ওয়াইল্ডলাইফ ফার্ম লিমিটেডের ইনচার্জ হিসেবে দায়িত্ব পালনের জন্য আদনান আজাদ থাকেন কক্সবাজারে, আর ফারজানা থাকেন ঢাকায়। আর যে সময়টুকু একসঙ্গে থাকেন, তার বড় একটি সময় চলে যায় বন্য প্রাণীর পেছনে। হয় ছবি তুলতে সুন্দরবন ছুটছেন, না হয় সাপ বা অন্য কোনো বন্য প্রাণী উদ্ধারে ছুটছেন দুজন। আহত প্রাণীর চিকিৎসাসহ অন্যান্য কর্মযজ্ঞ তো আছেই।

বুধবার প্রথম আলো কার্যালয়ে বসে এই দম্পতি হাসতে হাসতে বললেন, বলতে গেলে বন্য প্রাণীদের সঙ্গে নিয়েই তাঁদের সংসারজীবন কাটছে। ভবিষ্যতে মা–বাবা হলে সন্তান নিয়েই বন্য প্রাণী রক্ষায় ছোটার সংকল্পও জানালেন বেশ দৃঢ়তার সঙ্গে।

সরকারের বন বিভাগের বন্য প্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের তথ্যই বলছে, চলতি মাসের প্রথম তিন সপ্তাহে দেশে সাতটি হাতি হত্যা করা হয়েছে। চলতি বছর এরই মধ্যে হাতি মৃত্যুর সংখ্যা ৩৩। বেশির ভাগ হাতিকেই হত্যা করা হচ্ছে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট করে।

এ ধরনের পরিস্থিতিতে হাতি রক্ষায় আদালতে ২১ নভেম্বর একটি রিট আবেদন করেছেন আদনান আজাদ, ফারজানা ইয়াসমিন এবং এই দম্পতির আরেক বন্ধু খান ফাতিম হাসান। তাঁরা বলছেন, হাতি রক্ষায় যত দূর যেতে হয়, তাঁরা যাবেন। হাতির নির্বিঘ্ন চলাচল নিশ্চিতে বৃহত্তর চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার এলাকায় বন বিভাগ থেকে হাতি চলাচলের জন্য চিহ্নিত ১২টি করিডর সংরক্ষণে নির্দেশনা চেয়ে রিটটি করা হয়েছে।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী খান খালিদ আদনান। ২২ নভেম্বর হাতি হত্যা বন্ধে অবিলম্বে পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। বন ও পরিবেশসচিব, প্রধান বন সংরক্ষক ও বন্য প্রাণী অপরাধ নিয়ন্ত্রণ ইউনিটের পরিচালকসহ বিবাদীদের প্রতি এ নির্দেশ দেওয়া হয়। নির্দেশনা বাস্তবায়নের অগ্রগতি জানিয়ে আদালতে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ এ আদেশ দেন। ২০১২ সালের বন্য প্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনে সরকার, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দিয়ে স্থানীয় জনসাধারণের মতামত গ্রহণ করে ঘোষিত যেকোনো এলাকা, রক্ষিত বা সংরক্ষিত বন এলাকার সীমানার বাইরে কিন্তু এর সংলগ্ন যেকোনো সরকারি বা বেসরকারি এলাকাকে বন্য প্রাণী চলাচলের উপযোগী বা বিশেষ উন্নয়ন সাধনের প্রয়োজনে বা ওই এলাকার যেকোনো ধরনের ক্ষয়ক্ষতি কমানো বা নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে ল্যান্ডস্কেপ জোন বা করিডর হিসেবে ঘোষণা করতে পারবে।

এভাবে বনবাদাড়ে বন্য প্রাণী রক্ষায় কাজ করেন আদনান আজাদ ও ফারজানা ইয়াসমিন
ছবি: সংগৃহীত

আলাপের শুরুতেই আদনান আজাদ বললেন, অ তে অজগর ওই আসছে তেড়ে, হাতি মরলেও লাখ টাকা—পাঠ্যপুস্তকে এসব উল্লেখসহ প্রচলিত এ ধরনের কিছু বাক্য বন্য প্রাণী নিয়ে মানুষের মনে নেতিবাচক ধারণার জন্ম দিয়েছে। শহুরে রাস্তায় হাতি দিয়ে টাকা আদায় করার যে ব্যবসা চলছে, তাতেও হাতি নিয়ে মানুষের মধ্যে একধরনের নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়েছে। আর হাতি হত্যা নিয়ে সরকারের পরিসংখ্যান বিশ্বাসযোগ্য নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, লোকালয়ের আশপাশে হাতি মারা গেলে তা জানা যাচ্ছে, গহিন অরণ্যে যেগুলোকে হত্যা করা হচ্ছে, তার পরিসংখ্যান জানা যাচ্ছে না বা সরকার প্রকাশ করছে না। আর হাতির বিষয়ে সরকার যে আন্তরিক না, তা প্রমাণের জন্য খুব বেশি দূর যাওয়ার দরকার নেই। শেরপুরসহ বিভিন্ন জায়গায় হাতি মারা যাওয়ার পর বন্য প্রাণী নিয়ে কাজ করা বিশেষজ্ঞরা হাতির ছবি দেখেই বলে দিচ্ছেন হাতিটি নারী না পুরুষ। অথচ সরকারের পক্ষ থেকে ময়নাতদন্ত করে সম্পূর্ণ উল্টো তথ্য দেওয়া হচ্ছে। যাঁরা হাতিটি কাটাকুটি করেও নারী না পুরুষ, তা সঠিকভাবে বলতে পারছেন না, তাঁদের দেওয়া ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন কতটুকু বিশ্বাসযোগ্য, তা আপনারাই বলুন।

২৬২টি হাতি রক্ষায় সরকারের মহাপরিকল্পনায় ২০১৮ থেকে ২০২৭ সালের মধ্যে হাতির সংখ্যা দ্বিগুণ করার অঙ্গীকারের বাস্তবায়ন হয়নি। জনবল সংকট বা হাতি রক্ষা তাদের একার কাজ নয় বলে দায় এড়াচ্ছে বন বিভাগ। এ প্রসঙ্গে আদনান আজাদ বলেন, ‘বন বিভাগের কার্যক্রমে অনাস্থা প্রকাশ করছি। বলতে গেলে দীর্ঘমেয়াদি চিন্তা থেকেই হাতি রক্ষায় বাধ্য হয়েই আদালতের শরণাপন্ন হয়েছি। বন বিভাগ বা ১০টি এলাকা অবরোধ করা যেত, জিআই তার উপড়ানো যেত। কিন্তু লাভ হতো না। এখন রুলে বেআইনি হত্যা থেকে হাতির জীবন রক্ষায় আইনের বিধান অনুসারে বন বিভাগ থেকে চিহ্নিত ১২টি করিডর গেজেটের মাধ্যমে সংরক্ষিত করিডর হিসেবে ঘোষণায় নিষ্ক্রিয়তা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে। বেআইনিভাবে হত্যা থেকে হাতির জীবন রক্ষায় বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, সে বিষয়েও রুলে জানতে চাওয়া হয়েছে। বন বিভাগের লোকবল নেই, এটা বলে আর দায়িত্বে অবহেলা করার সুযোগ নেই। তাদের লোকবল নেই কেন, সে সমস্যা তাদের নিজস্ব।’

আদনান আজাদ বললেন, ২০১৬ সালে বন বিভাগ বৃহত্তর চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার এলাকায় হাতি চলাচলের জন্য ১২টি করিডর চিহ্নিত করে। কিন্তু এগুলো গেজেটের মাধ্যমে সংরক্ষিত এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হয়নি। অর্থাৎ এত দিনেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। ‘রিট করার মাধ্যমে বিড়ালের গলায় ঘণ্টি বাঁধার কাজটি আমরাই করলাম। এখন বন বিভাগ জবাবদিহির আওতায় থাকবে। আর জবাবদিহিতে কোনো গাফিলতি থাকলে আমরা তো আছিই ,’ বলেন আদনান আজাদ।

আলাপের পুরোটা সময় আদনান আজাদের স্ত্রী ফারজানা পাশে বসে আলাপে সায় দিচ্ছিলেন। জানালেন, মাসের ১৫ দিন ঢাকায় থাকেন আর ১৫ দিন স্বামীর কর্মস্থল কক্সবাজারে থাকেন। দীর্ঘদিনের চেনাজানা মানুষটির সঙ্গে পারিবারিকভাবেই বিয়ে হয়েছে। দুজনেরই আগ্রহের বিষয় বন্য প্রাণী, তাই এ নিয়ে কাজ করতে গিয়েও কোনো ঝামেলা হচ্ছে না। বেশ দৃঢ় গলায় এ দম্পতি জানালেন, দেশের অধিকাংশ বন্য প্রাণীর ছবি তাঁরা তুলেছেন। আদনান আজাদ যোগ করে বলেন, রিক্তা (স্ত্রী) এ পর্যন্ত বন্য প্রাণীর ছবি তুলে অনেক অ্যাওয়ার্ডও পেয়েছেন। তবে কোনো কোনো ছবি তুলতে গিয়ে দুই বছর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হওয়ার নজির আছে।

হাতি রক্ষায় আদালতের শরণাপন্ন হয়ে আলোচনায় এসেছেন আদনান আজাদ ও ফারজানা ইয়াসমিন দম্পতি
ছবি: সংগৃহীত

বন্য প্রাণীর ছবি তোলা প্রসঙ্গে এ দম্পতির বক্তব্য হলো, প্রাণীটির প্রতি মানুষের ভালোবাসা তৈরির জন্যই মূলত তাঁরা ছবি তোলেন, ফেসবুকে পোস্টও দেন। এখন বিলুপ্তপ্রায় বন্য প্রাণীর ছবি তোলার বিষয়টিতে তাঁরা গুরুত্ব দিচ্ছেন। নতুন যাঁরা বন্য প্রাণী নিয়ে কাজ করতে চান, তাঁদের জন্য এই দম্পতির পরামর্শ হলো—নিয়ম মেনে, বন্য প্রাণীসংক্রান্ত আইনটি জেনে সতর্কভাবে কাজ করতে হবে। কেননা, যাঁরা বন্য প্রাণী নিয়ে কাজ করেন, তাঁরা নিজেরাও প্রতি মুহূর্তে ঝুঁকির মধ্যে থাকেন। একটু অসতর্ক হলেই প্রাণীটা চলে যেতে পারে। তাই বন্য প্রাণীর সঙ্গে ছবি তুলে কেউ শুধু নাম কুড়াতে চাইলে তাঁদের এ কাজে আসারই কোনো দরকার নেই।

বন্য প্রাণী রক্ষায় দেশে বেসরকারিভাবে ২০০ থেকে ৩০০ সংগঠন কাজ করছে। হাতি বিশেষজ্ঞরাও আছেন। হাতি হত্যা বন্ধে সবাই সরব কি না, প্রশ্নের উত্তরে আদনান আজাদ বললেন, ‘আমারও তো প্রশ্ন, হাতি বিশেষজ্ঞরা কোথায়? বেশির ভাগ তো ফেসবুকেও সরব না। অনেকেই বন বিভাগের বিভিন্ন কমিটির সঙ্গে যুক্ত, তাই তাঁরা সেভাবে কথাও বলতে পারেন না। তবে হাতি রক্ষায় গুটিকয় যাঁরাই এগিয়ে এসেছেন, তাঁদের বড় সফলতা হচ্ছে, হাতি রক্ষায় মানববন্ধনসহ যেকোনো খবর প্রথম আলোসহ গণমাধ্যমগুলো গুরুত্বের সঙ্গে ছাপছে বা প্রকাশ করছে। রিট করার সময় প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের দুটো প্রতিবেদন আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলাম। প্রথম আলো অনলাইনে প্রকাশিত খবরটি আদালত আমলে নিয়েছেন। সামনের দিনগুলোতেও গণমাধ্যমের এ সহযোগিতা কাম্য।’

আরও পড়ুন

আদনান আজাদ ২০০৮ সাল থেকে সাপ উদ্ধার করছেন। বর্তমানে কাজ করছেন কুমির নিয়ে। আর এ কাজে সহকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তাঁর স্ত্রী ফারজানা। অভিনয় সূত্রে দুজনের পরিচয় হলেও আদনান আজাদের বন্য প্রাণী নিয়ে তোলা ছবি দেখেই প্রথম মুগ্ধ হয়েছিলেন ফারজানা। আর এখন বন্য প্রাণী নিয়ে সব কাজেই সঙ্গে থাকেন স্ত্রী। আদনান আজাদ স্ত্রীর সম্পর্কে বললেন, ‘ও এখন কোনো শুটিংয়ে গিয়ে আহত প্রাণী দেখলেও তা উদ্ধার করে যথাযথ প্রক্রিয়ায় অবমুক্ত করে।’

অভিনয়ের পাশাপাশি বন্য প্রাণী ফটোগ্রাফার হিসেবে পরিচয় রয়েছে আদনান আজাদ ও ফারজানা ইয়াসমিনের
ছবি: সংগৃহীত

আদনান আজাদ এ পর্যন্ত প্রায় ৯০টি বিজ্ঞাপন, ১৬টি সিনেমায় নায়ক হিসেবে এবং বিভিন্ন নাটকে অংশ নিয়েছেন। বান্দরবানের বিলুপ্তপ্রায় ধনেশ পাখি নিয়ে গ্রামীণফোনের একটি বিজ্ঞাপনেও অংশ নিয়েছেন সচেতনতা তৈরির জন্য। তবে বন্য প্রাণী নিয়ে কাজের পরিসর বাড়াতে অভিনয় কমিয়ে দিয়েছেন আদনান আজাদ। জানালেন, তাঁর নানি গরু, ছাগল পালতেন। কাক, পাখি নানির ঘাড়ে বসে থাকত। ছোটবেলায় নানির কাছে বড় হয়েছেন বলে তিনিও খেলনার বদলে গরু, ছাগল বা পাখির সঙ্গেই বেশি সময় কাটিয়েছেন। একসময় খাঁচায় পাখি পুষতেন। পরে ভাবলেন, খাঁচায় বন্দী করে পাখিকে তো যে কেউ যত্ন করতে পারে, তবে বন্য প্রাণীদের দেখার তো তেমন কেউ নেই। এভাবেই আস্তে আস্তে জড়িয়ে যান বন্য প্রাণীর কাজে।

ফারজানা যশোরের মেয়ে। আর আদনান আজাদ বগুড়ার ছেলে। এই দুজনের মতে, বিশালদেহী হাতি মেরে সাফ করে ফেলা হচ্ছে, তাহলে দেশের অন্যান্য বন্য প্রাণী কেমন আছে, তা তো সহজেই অনুমেয়। কুমিরের ফার্মসহ বন্য প্রাণী নিয়ে যাঁরা কাজ করছেন, তাঁদের জন্য জীবনবিমার ব্যবস্থা না থাকায় এ খাত নিয়ে মানুষ দীর্ঘ মেয়াদে কাজ করতে আগ্রহ পাচ্ছেন না বলে জানালেন আদনান আজাদ। বললেন, ‘২০১৮ সালে কুমিরের আঘাতে পায়ের লিগামেন্ট ছিঁড়ে যায়, সেই ব্যথা এখনো মাথাচাড়া দেয় প্রায় সময়ই। কুমির নিয়ে কাজ করতে গিয়ে আমার কিছু হয়ে গেলে আমার পরিবারকে কে দেখবে? এ বিষয়গুলোও তো সরকারকে ভাবতে হবে।’

পরম মমতা নিয়ে দুর্গত বন্য প্রাণীর কাছে ছুটে যান আদনান আজাদ ও ফারজানা ইয়াসমিন দম্পতি
ছবি: সংগৃহীত

বন্য প্রাণিবিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচার এশিয়ান বন্য প্রজাতির হাতিকে ‘মহা-বিপন্ন’র তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে।

চলতি বছরের ১২ আগস্ট বিশ্ব হাতি দিবসের প্রতিপাদ্য ছিল, হাতি করলে সংরক্ষণ, রক্ষা পাবে সবুজ বন। এ প্রতিপাদ্য সামনে রেখে সরকারিভাবে দেশেও দিবসটি পালিত হয়েছে। চলতি বছরের ৩ মার্চ বন অধিদপ্তরে বিশ্ব বন্য প্রাণী দিবস উদ্‌যাপন উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন বলেছিলেন, হাতি ও অন্যান্য বন্য প্রাণীর আবাসস্থল সংরক্ষণ ও করিডরের মাধ্যমে বন্য হাতির নিরাপদ চলাচল নিশ্চিত করতে একটি সম্ভাব্যতা যাচাই প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। আন্তদেশীয় হাতি সংরক্ষণ কার্যক্রম জোরদার করতে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে একটি প্রটোকল সই হয়েছে।

কাগজে–কলমে বা বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতায় সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে যে বক্তব্যগুলো দেওয়া হচ্ছে, তা কতটুকু বাস্তবায়িত হচ্ছে, সে বিষয়টি আপাতত আদনান আজাদ, ফারজানা ও খান ফাতিম হাসান রিটকারী তিনজন নজরদারিতে রেখেছেন।

আদনান আজাদ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমরা আদালতে রিট করার জন্য বসে আছি, সেদিনও কক্সবাজারে একটি বন্য হাতির মৃত্যু হয়েছে। হাতির থাকার বনের জায়গাটুকুও মানুষ দখল করছে। ফলে হাতির ক্রোধ বাড়ছে। মানুষের সঙ্গে দ্বন্দ্ব–সংঘাত বাড়ছে। এই সংঘাত কমাতে করণীয় কী হতে পারে, তা সরকারই বাতলে দিয়েছে। আইনেও বন্য প্রাণী হত্যা জামিন–অযোগ্য অপরাধ। কিন্তু আইনের প্রয়োগ হচ্ছে না। যেভাবে হাতি মরছে, তাতে একসময় এ দেশে আর হাতি বলে কিছু থাকবে না। তাই আমরা পথে নেমেছি। সমস্যা সমাধানের আগে আমরা ঘরে ফিরব না। বন বিভাগ বা সরকার আমাদের শত্রু মনে করতে পারে, কিন্তু আমরা চাই হাতি হত্যা বন্ধ হোক।’