সিলেটের বন্যাকবলিত এলাকায় সাপ ও জোঁকের বিচরণ বেড়েছে। সাপের ভয়ে অনেকে রাতে ঘুমোতে পারছে না। ভুক্তভোগী ব্যক্তিরা জানিয়েছে, দীর্ঘস্থায়ী বন্যা দেখা দেওয়ায় মূলত এসব প্রাণীর উপদ্রব বেড়েছে।
এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও অতিবৃষ্টির কারণে প্রায় এক থেকে দেড় মাস ধরে সিলেটের নয়টি উপজেলায় বন্যা দেখা দিয়েছে। এর আগে সিলেটে এত দীর্ঘস্থায়ী বন্যা কখনো হয়নি। বন্যায় এলাকার ঝোপ ও বনজঙ্গল তলিয়ে যাওয়ায় সাপের নিরাপদ আবাস নষ্ট হচ্ছে। এ কারণে নানা প্রজাতির বিষধর ও নির্বিষ সাপ খাদ্য ও বাসস্থানের জন্য লোকালয়ে চলে আসছে।
ফেঞ্চুগঞ্জের গয়াসী গ্রামের মঞ্জু মিয়া বলেন, ‘লোকালয়ে এসে সাপ কোথাও ডিম ফোটাচ্ছে কি না, সে চিন্তায় আমরা অস্থির। সাপের দংশন এড়াতে কী করণীয়, সেটাও তো ঠিকমতো জানি না।’
বন্যাদুর্গত এলাকার দুজন বাসিন্দা জানিয়েছেন, বন্যাকবলিত অধিকাংশ উপজেলার পাশেই ভারতীয় সীমান্ত এলাকা। এ কারণে সেখান থেকে বন্যার জন্য অতি বিষধর প্রজাতির সাপও প্রচুর পরিমাণে সিলেট অঞ্চলে ঢুকেছে। বিচরণকারী সাপের মধ্যে ঢোঁড়া ও গোখরা সাপ লোকালয়ে প্রচুর পরিমাণে দেখা যাচ্ছে। সাপের ভয়ে সিলেটের অনেক জায়গায় জেলেরা পানিতে মাছ ধরতেও সাহস পাচ্ছেন না। এমনকি পানিতে ভেসে ভেসে এসব সাপ জনবসতিতেও ঢুকে পড়েছে।
বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শনের সময় স্থানীয় মানুষেরা জানায়, বিয়ানীবাজার উপজেলার আঙ্গারজুর, কাকরদিয়া ও মেওয়া; ফেঞ্চুগঞ্জের গয়াসী, পিটাইটিকর, গুচ্ছগ্রাম, বাঘমারা, মানিককোনা, বেলকোনা, সুলতানপুর, গঙ্গাপুর, লামা গঙ্গাপুর ও উপজেলা সদর; গোলাপগঞ্জের মীরগঞ্জ, নূরজাহানপুর, ইসলামপুর ও কালীকৃষ্ণপুর; ওসমানীনগর উপজেলার লামা তাজপুর, সৈয়দপুর, সুন্দিখলা ও ইব্রাহিমপুর গ্রামে বন্যার পানিতে ভেসে আসা সাপ মারার একাধিক ঘটনা ঘটেছে। এসব এলাকায় জোঁকের বিচরণও বেড়েছে।
সিলেট জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. নূরুল ইসলাম বলেন, ঘরে কার্বলিক অ্যাসিড ছিটিয়ে রাখলে সাপের উপদ্রব থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।
সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. রাহাত আনোয়ার প্রথম আলোকে বলেন, ‘সাপের উপদ্রব এড়াতে বন্যাকবলিত এলাকার লোকজনকে সাবধানে থাকার জন্য সচেতন করা হচ্ছে। এ ছাড়া যদি এ-সংক্রান্ত কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে, তাহলে সহায়তা দিতে সংশ্লিষ্ট উপজেলার হাসপাতাল এবং ভ্রাম্যমাণ মেডিকেল টিমও তৎপর রয়েছে।’
গো-খাদ্যের তীব্র সংকট
বন্যাকবলিত এলাকায় দেখা দিয়েছে গো-খাদ্যের তীব্র সংকট। এ ছাড়া লোকালয়ে পানি উঠে পড়ায় গবাদিপশু রাখার সমস্যা দেখা দিয়েছে। গোয়ালঘরে পানি উঠলেও কোনো রকমে গরু-মহিষসহ নানা পোষা প্রাণীকে থাকতে হচ্ছে। তাই এসব প্রাণী বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রাথমিক তথ্যানুযায়ী, জেলায় বন্যা উপদ্রুত এলাকায় ২ লাখ ৭৩ হাজার গরু, ১৩ হাজার ৬০০টি মহিষ, ৪৯ হাজার ৮০০টি ছাগল, ৬৫ হাজার ৯১০টি ভেড়া, ৩ লাখ ৬৮ হাজার ৪০০টি মোরগ ও ১ লাখ ৬৭ হাজার ৮০০টি হাঁস আছে। এর মধ্যে ১ হাজার ১১৭টি গবাদিপশু ও ১২ হাজার ৬০০টি হাঁস-মুরগিকে বিভিন্ন রোগের জন্য টিকা দেওয়া হয়েছে। চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে ১ হাজার ৫৫০টি গবাদিপশু ও ৭ হাজার ২৬০টি হাঁস-মুরগিকে।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. নূরুল ইসলাম গতকাল মঙ্গলবার প্রথম আলোকে বলেন, বন্যা উপদ্রুত এলাকায় গবাদিপশু ও অন্যান্য প্রাণীর চিকিৎসা নিশ্চিত করতে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়গুলো কাজ করে চলেছে। এ ছাড়া বন্যাকবলিত ৮ উপজেলায় ১২টি ভেটেরিনারি ভ্রাম্যমাণ মেডিকেল টিমও গঠন করে দেওয়া হয়েছে। ওই টিমও চিকিৎসা সহায়তা দিচ্ছে।