বরগুনায় সাতজনের মৃত্যু
ঘূর্ণিঝড় মহাসেনের তাণ্ডবে বরগুনার বিভিন্ন এলাকা লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। মারা গেছেন অন্তত সাতজন। তাঁদের
চারজন গাছ চাপা পড়ে, একজন বজ্রপাতে এবং বাকি দুজন আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার সময় হুড়োহুড়ি করতে গিয়ে
মারা যান।
জেলায় ছয়টি উপজেলার ৪২টি ইউনিয়নে ঝড়ের তাণ্ডবে এক হাজারের বেশি বসতঘর, পাঁচটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান
সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে। উপড়ে পড়েছে অসংখ্য গাছপালা। প্রবল বর্ষণ ও জোয়ারের পানিতে ভেসে গেছে জেলার
প্রায় ৭০০ মাছের ঘের ও তিন হাজারের বেশি পুকুরের মাছ। জেলার বেশির ভাগ এলাকা হাঁটুপানির নিচে
নিমজ্জিত রয়েছে। জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিভাগ এবং মৎস্য বিভাগ প্রাথমিকভাবে ক্ষয়ক্ষতির সত্যতা নিশ্চিত
করেছে।
ঘূর্ণিঝড়ে নিহত ব্যক্তিরা হলেন বেতাগী উপজেলার পূর্ব রানীপুর গ্রামের সৈয়দ আলী (৭৫), বকুলতলী গ্রামের
শিশু আমির হোসেন (৬); তালতলী উপজেলার ছোট আমখোলা গ্রামের চান মিয়া (৬০); বামনা উপজেলার
বুকাবুনিয়া ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুরা গ্রামের আনোয়ার হোসেন (৬০), একই ইউনিয়নের নাদিরা আকতার (২৬),
বামনা সদর ইউনিয়নের সফিপুরের মোশারেফ হোসেন (৬৫) ও পাথরঘাটা উপজেলার ঘুটাবাছা গ্রামের হনুফা
বেগম (২৫)। গত বুধবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে ঝড়ে উপড়ে পড়া গাছের নিচে চাপা পড়ে সৈয়দ আলী
এবং সকালে মারা যান আনোয়ার হোসেন, মোশারেফ হোসেন ও হনুফা বেগম। এ ছাড়া গতকাল বৃহস্পতিবার
সকালে আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার পথে বজ্রপাতে মারা যায় আমির। হুড়োহুড়ি করে আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার সময় পড়ে
গিয়ে গুরুতর আহত হয়ে মারা যান চান মিয়া ও নাদিরা। নাদিরা তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন।
জেলা ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কেন্দ্রের কর্মকর্তারা জানান, গতকাল সকাল ছয়টার দিকে বরগুনাসহ দক্ষিণ উপকূলে
প্রচণ্ড শক্তি নিয়ে আঘাত হানে মহাসেন। প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে তাণ্ডব আর তুমুল বৃষ্টি ঝরিয়ে ঘূর্ণিঝড়টি দুর্বল
হয়ে সকাল নয়টার দিকে মেঘনা নদীর মোহনার দিকে ধাবিত হয়। মহাসেনের প্রভাবে বুধবার মাঝরাত থেকেই
বরগুনায় দমকা ও ঝোড়ো হাওয়া বইতে শুরু করে। একই সঙ্গে প্রবল বৃষ্টিপাত শুরু হয়। বুধবার দিবাগত রাত
আড়াইটার দিকে বরগুনায় বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। বরগুনা ও পাথরঘাটা শহর তিন ফুট পানির নিচে
তলিয়ে যায়।
খেপুপাড়া আবহাওয়া সতর্কীকরণ কেন্দ্রের প্রধান কর্মকর্তা প্রদীপ কুমার চক্রবর্তী জানান, ঘূর্ণিঝড়টি বরগুনা ও
পটুয়াখালীতে হানা দেয়। এ সময় বাতাসের গতিবেগ ছিল প্রায় ১০০ কিলোমিটার। প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে চলে
ঝড়ের তাণ্ডব। এ সময় ২৮৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়।
প্রাথমিক হিসাবে, ঝড়ের ছোবলে তালতলী, পাথরঘাটা ও বরগুনা সদর উপজেলায় এক হাজারের বেশি
বসতঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। জেলায় প্রায় ৭০০ মাছের ঘের এবং তিন হাজারের বেশি পুকুরের মাছ জলোচ্ছ্বাসে
ভেসে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। বরগুনার ৩২৪টি আশ্রয়কেন্দ্রে এ পর্যন্ত প্রায় ৬৫ হাজার লোক আশ্রয়
নিয়েছে। পায়রা নদীতে ফেরি চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সারা দেশের সঙ্গে বরগুনার সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন
হয়ে পড়েছে। নদীতে নোঙর করা অবস্থায় একটি ফেরি ডুবে গেছে।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা প্রকাশ চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে বরগুনায় এ পর্যন্ত সাতজনের মৃত্যুর
খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে এবং সহস্রাধিক বসতঘর বিলীন হওয়ার খবর পেয়েছি। তবে আমরা পূর্ণাঙ্গ ক্ষয়ক্ষতির
তালিকা প্রস্তুত করার কাজ করছি।’