বাঁশ-বেত-মাটির পণ্য নিয়ে চলছে বৈশাখী মেলার প্রস্তুতি
লাল-সবুজ রঙে কুলা সাজানো। মাছ ধরার চাঁই, সঙ্গে মাছ রাখার বাঁশের ছোট ঝুড়ি, হাতপাখা, বাঁশিসহ অনেক কিছু সারি করে রাখা। মাটির বাহারি খেলনা ও তৈজসপত্রের স্তূপ। পয়লা বৈশাখের মেলার প্রস্তুতির জন্য পালপাড়া ও পাইকারদের ব্যস্ততা বাড়ছে।
স্বল্প পরিসরে হলেও বাংলা নববর্ষের প্রথম দিনে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে মেলা বসে। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে থেকে আসা অনেকে মেলার সামগ্রী কেনেন। কুমোরপাড়া হিসেবে এ সময় রায়েরবাজারের বেশ নামডাক ছিল। এখানেই তৈরি হতো বিভিন্ন মাটির সামগ্রী। ঢাকাসহ দেশের নানা জায়গায় এই কুমোরদের তৈরি জিনিস সরবরাহ হতো। বৈশাখে ব্যস্ততা বেড়ে যেত দ্বিগুণ। তবে এখন মেলার পরিমাণ কমে গেছে এবং পালরাও অনেকে আগের পেশায় নেই। গতকাল রায়েরবাজারের আখড়া মন্দিরের পাশে কথা হয় গোসাই পালের সঙ্গে। দোকানভর্তি মাটির জিনিস। এরই মধ্যে একজন খুচরা বিক্রেতা বস্তায় করে হাঁড়ি নিতে এসেছেন। গোসাই পাল বলেন, ‘খেলনা জিনিস কম হয়। হাঁড়ি, কলস, ফুলদানি, ঘর সাজানোর জিনিসই বেশি আনি। বৈশাখের সময় চাহিদা একটু বেশি থাকে।’ তিনি বলেন, রায়েরবাজারে এখন কোনো কিছু বানানো হয় না। সাভার, গাজীপুর থেকে তাঁরা নিয়ে আসেন।
প্রদীপ পালের একটি দোকান আছে রায়েরবাজারের সিটি করপোরেশন বাজারে। শিকায় ঝুলছে বড় আম, পাকা পেঁপে, বানরের আকৃতির মাটির ব্যাংক। দোকানটি মাটির পুতুল, হাতি-ঘোড়াসহ নানা খেলনা দিয়ে সাজানো। দোকানের কর্মচারী শাহাদাত বলেন, ঢাকার আশপাশে যে মেলা হবে, সেখানকার বিক্রেতারা এখন এখান থেকে পাইকারিতে মালামাল কিনছেন। বিক্রি বাড়বে চৈত্রের শেষ সপ্তাহে। দোয়েল চত্বর মাটির জিনিসপত্রের জন্য বেশ নাম করে নিয়েছে। গতকাল দেখা যায়, প্রতিটি দোকানের সামনেই সড়কের পাশে মাটির তৈরি জিনিস ছাড়াও বাঁশ ও বেতের নানা লোকজ সামগ্রী রাখা। বড় আকারের কুলাতে ‘১৪২৪’ লেখা।
পাটের শিকায় নানা নকশার হাঁড়ি ঝুলছে। বিক্রেতাদের কয়েকজন একতারা ও বাঁশি বাজিয়ে পথচারীদের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছেন। ছোট ঢোল, লাটিম, দুই চাকার গাড়ি, মাটি দিয়ে তৈরি ফলের ব্যাংক, তালপাতা ও বেতের হাতপাখায় চত্বরটিতে বৈশাখ আসার আগেই বৈশাখী মেলার আবহ সৃষ্টি হয়েছে। কিছুটা গ্রামীণ পরিবেশ। এত কিছুর সমারোহে অনেকেই একনজর দাঁড়িয়ে দেখছেন।