বাঁশখালীতে শ্রমিক হত্যার নিন্দা জানিয়ে চীনা রাষ্ট্রদূতকে চিঠি

বাঁশখালীতে নিহতদের একজন মোহাম্মদ রেজা। তার লাশ নি‌য়ে মা‌য়ের আহাজা‌রি
ফাইল ছবি

চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে নির্মাণাধীন বিদ্যুৎকেন্দ্রে শ্রমিক হত্যার ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে বাংলাদেশে নিয়োজিত চীনা রাষ্ট্রদূতকে চিঠি পাঠিয়েছেন দেশের শীর্ষস্থানীয় একদল লেখক–অধ্যাপক, অধিকারকর্মী, সংস্কৃতিকর্মী ও রাজনৈতিক দলের নেতা।

আজ শুক্রবার লেখা ওই চিঠিতে তাঁরা বলেছেন, ঘটনার দিন পুলিশ আন্দোলনরত শ্রমিকদের ওপর গুলি চালিয়ে সাতজনকে হত্যা এবং অজ্ঞাতসংখ্যক শ্রমিককে আহত করে। পুলিশের গুলিবর্ষণ, হত্যা এবং শ্রমিকদের ওপর সহিংসতা ফৌজদারি অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের চেয়ে কম নয়। সবচেয়ে দুঃখজনক হচ্ছে স্থানীয় পুলিশ এই ঘটনায় সাড়ে তিন হাজার শ্রমিক ও স্থানীয় বাসিন্দাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়েছে।

হত্যাকাণ্ড, সহিংসতা এবং এ ঘটনায় চীনা দূতাবাসের নীরবতার প্রতিবাদ ও নিন্দা জানানো হয়েছে চিঠিতে। চারটি দাবি জানিয়েছেন তাঁরা। এসব দাবি হলো হতাহত শ্রমিকদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা; শ্রমিকদের হত্যা, জখম ও হয়রানির ঘটনায় দায়ী চীনা কোম্পানিগুলোর কর্মকর্তাদের চীনের আইন অনুযায়ী বিচার করা; আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া এবং এই প্রকল্পে জড়িত কোম্পানিগুলোকে জবাবদিহির আওতায় আনতে যৌথ উদ্যোগে চুক্তি প্রকাশ করা।
১৭ এপ্রিল বাঁশখালীর গন্ডামারায় নির্মাণাধীন বিদ্যুৎকেন্দ্রে আন্দোলনরত শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে সাতজনের মৃত্যু হয়। গুলিবিদ্ধ ১২ জন এখনো চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। রোজায় কর্মঘণ্টা কমানোসহ কয়েকটি দাবিতে আন্দোলন করছিলেন শ্রমিকেরা।

আরও পড়ুন

বাঁশখালী সদর থেকে ১০ কিলোমিটার পশ্চিমে এসএস পাওয়ার প্ল্যান্ট নামে এই বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মিত হচ্ছে। বাংলাদেশের শিল্প গ্রুপ এস আলমের সঙ্গে চীনা প্রতিষ্ঠান সেপকো থ্রি পাওয়ার কনস্ট্রাকশন করপোরেশন এবং এইচটিজি ডেভেলপমেন্ট গ্রুপ কোম্পানি লিমিটেড এই প্রকল্পে যুক্ত রয়েছে বলে চিঠিতে বলা হয়েছে।

মোট ৮১জন নাগরিক ওই চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি জাফরুল্লাহ চৌধুরী, মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল, সেন্ট্রাল উইমেনস ইউনিভার্সিটির উপাচার্য পারভীন হাসান, আলোকচিত্রী শহীদুল আলম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক আকমল হোসেন, অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, অধ্যাপক আসিফ নজরুল, অধ্যাপক গীতিআরা নাসরিন, গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আদিলুর রহমান খান, জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, নিজেরা করির সমন্বয়ক খুশী কবির, লেখক–অধিকারকর্মী সি আর আবরার, অধিকারকর্মী মো. নূর খান, ইলিরা দেওয়ান, শাহীন আনাম, গবেষক ও অধিকারকর্মী মেঘনা গুহঠাকুরতা, জাহাঙ্গীরনগরের নৃবিভাগের অধ্যাপক মির্জা তাসলিমা সুলতানা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ তানজিম উদ্দিন খান, নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক জোবাইদা নাসরিন।