বাংলাদেশ কখনোই তলাবিহীন ঝুড়ি ছিল না: মসিউর রহমান

মসিউর রহমান

বাংলাদেশ কখনোই তলাবিহীন ঝুড়ি ছিল না বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অর্থনৈতিক উপদেষ্টা অর্থনীতিবিদ মসিউর রহমান। তিনি বলেছেন, ‘ইতিহাসে এর অনেক প্রমাণ রয়েছে। আর এখন ফুল–ফল–ফসলে উপচানো ঝুড়িতে পরিণত হয়েছে। এর তলা চিরস্থায়ীভাবে মজবুত হয়েছে।’

শুক্রবার বিকেলে ‘দ্য রোল অব নিক্সন-কিসিঞ্জার ইন দ্য ১৯৭১ পাকিস্তানি ওয়ার ক্রাইমস অ্যাগেইনস্ট বাংলাদেশ’ গ্রন্থের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে মসিউর রহমান এ মন্তব্য করেন। বাংলা একাডেমির কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে ড. নূরুন নবীর লেখা এ গ্রন্থের প্রকাশনা অনুষ্ঠান আয়োজন করে অনন্যা প্রকাশনী।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা বলেন, এই গ্রন্থে চারটি প্রধান প্রসঙ্গ রয়েছে। নূরুন নবী সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। সেই অভিজ্ঞতার বয়ান রয়েছে। তাঁর স্ত্রীর পরিবার শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নিয়েছিলেন ভারতে। শরণার্থীদের কষ্টকর জীবনের বিবরণ আছে। মুক্তিযুদ্ধ ও পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর গণহত্যা সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নিক্সন ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার যে অপপ্রচার চালিয়েছেন, তার তথ্যনিষ্ঠ প্রতিবাদ আছে।

মসিউর রহমান আরও বলেন, ইদানীং অনেকে পাকিস্তানি বাহিনীর গণহত্যা সম্পর্কে বিভ্রান্তিকর ব্যাখ্যা দিয়ে বিষয়টি হালকা করে দেখানোর চেষ্টা করছেন। তাঁদের মধ্যে অন্যতম শর্মিলা বোসের বিভ্রান্তিকর বক্তব্যের কড়া জবাব দিয়েছেন লেখক। নূরুন নবী দেখানোর চেষ্টা করেছেন, নিক্সন-কিসিঞ্জার পাকিস্তানিদের পক্ষ নিয়ে এ গণহত্যায় সহায়তা না দিলে এত ভয়াবহ গণহত্যা বাংলাদেশে ঘটত না। সে কারণে তিনি গণহত্যার অভিযোগে কিসিঞ্জারের বিচারের দাবি ও যৌক্তিকতা তুলে ধরেছেন। পাশাপাশি লেখক দেখিয়েছেন, একাত্তরে মার্কিন সরকারের দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে সে দেশের সাধারণ মানুষ ও ক্ষমতার সঙ্গে যুক্ত নন এমন অনেক রাজনীতিকের অবস্থান সম্পূর্ণ ভিন্ন ছিল।

ডেমোক্র্যাট সিনেটর এডওয়ার্ড কেনেডি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ছিলেন ও বলিষ্ঠ বক্তব্য দিয়েছেন। মেরিল্যান্ড বন্দর থেকে একটি জাহাজে করে পাকিস্তানে অস্ত্র পাঠানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। বিষয়টি জানতে পেরে সেখানকার সাধারণ মানুষ ছোট ছোট নৌযান নিয়ে জাহাজটি ঘিরে রাখেন ও তাতে অস্ত্র তুলতে বাধা দেন। নানা রকম চাপ ও হুমকি সত্ত্বেও তাঁরা সেখান থেকে সরে যাননি। ফলে সেই জাহাজে অস্ত্র তোলা সম্ভব হয়নি।

ইংরেজি ভাষায় বইটি লেখায় বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে মুক্তিযুদ্ধ ও গণহত্যা সম্পর্কে প্রকৃত তথ্য তুলে ধরার সুযোগ তৈরি হলো বলে মতপ্রকাশ করেন মসিউর রহমান।

অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মুহম্মদ নূরুল হুদা বলেন, লেখক নূরুন নবী একজন কৃতী বিজ্ঞানী ও বীর মুক্তিযোদ্ধা। মহান মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে অনেক বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা হয়েছে। এখনো তা অব্যাহত আছে।

সে কারণে ইতিহাসের সত্যাসত্য নির্ধারণে প্রমাণ দিতে হয়। বইটির বিশেষ বৈশিষ্ট্য, বস্তুনিষ্ঠ তথ্য–উপাত্ত দিয়ে লেখক বইটিতে প্রতিটি অভিযোগ খণ্ডন করে বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন। এ কারণে এটি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে একটি আকর গ্রন্থ হয়ে উঠেছে।
সভাপতির বক্তব্যে কবি আসাদ চৌধুরী বলেন, কিসিঞ্জারেরা বাংলাদেশ সম্পর্কে যে অপপ্রচার চালিয়েছিলেন, নৈতিকভাবে ও বাস্তবতায় তাঁদের পরাজয় ঘটেছে। বাংলাদেশ তার সক্ষমতা প্রমাণ করেছে।

অনুষ্ঠানে নূরুন নবী বলেন, একাত্তরে পাকিস্তানি বাহিনীর গণহত্যার প্রতিবাদে যখন সারা বিশ্ব সোচ্চার তখন নিক্সন-কিসিঞ্জার ছিলেন পাকিস্তানের পক্ষে। কাজেই তাঁরা এই গণহত্যার দায়ভার এড়াতে পারেন না।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন মুক্তধারা নিউইয়র্কের বিশ্বজিৎ সাহা। লেখক নূরুন নবী যুক্তরাষ্ট্র থেকে অনলাইনে যুক্ত হন।

এবার একুশের বই মেলায় পাওয়া যাবে বইটি।