বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক এগিয়ে নিতে জোর দুই পররাষ্ট্রসচিবের

দুই প্রতিবেশী দেশের পররাষ্ট্রসচিবেরা তাঁদের আলোচনার পর গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছেনছবি: প্রথম আলো

বাংলাদেশ ও ভারত তাদের অমীমাংসিত বিষয়গুলো সুরাহার পাশাপাশি সংযুক্তি, ডিজিটাল প্রযুক্তি ও পরিবেশবান্ধব জ্বালানি সহযোগিতা বাড়ানোর মাধ্যমে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার বিষয়ে আলোচনা করেছে।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন ও ঢাকা সফররত ভারতের পররাষ্ট্রসচিব হর্ষ বর্ধন শ্রিংলার মধ্যে এই আলোচনা হয়। দুই প্রতিবেশী দেশের পররাষ্ট্রসচিবেরা তাঁদের মধ্যকার আলোচনার পর গণমাধ্যমকে এসব তথ্য জানান।

দুই দিনের সফরে আজ সকালে ঢাকায় আসেন হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা। নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী, তিনি আজ দুপুরে পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে আলোচনা করেন। এরপর পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন তিনি।

সফরের দ্বিতীয় দিন কাল বুধবার ভারতের পররাষ্ট্রসচিব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। এদিনই তিনি দিল্লি ফিরে যাবেন।

বৈঠক সম্পর্ক পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘দ্বিপক্ষীয় বিভিন্ন বিষয়ে আমরা প্রায় ৫০ মিনিট আলোচনা করেছি। ভারতের সঙ্গে আমাদের অমীমাংসিত ও বহুমাত্রিক অনেক বিষয় রয়েছে। সেগুলো নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। সামনের দিনে কীভাবে এগিয়ে যাব, সেটা নিয়ে আলোচনা করেছি। এ বছর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশ সফর করেছেন। এ বছরই ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ বাংলাদেশে আসছেন, এটা একটা রেকর্ড। গতকাল আমরা মৈত্রী দিবস উদ্‌যাপন করেছি। সব মিলিয়ে দুই দেশের সম্পর্কে একটা স্বর্ণযুগ চলছে। সেখানে সংযুক্তিসহ সামনের দিনের যে বিষয়গুলো আছে, পরিবেশবান্ধব জ্বালানিতে সহযোগিতা, নতুন নতুন প্রযুক্তি—সেগুলো নিয়েও আমরা আলোচনা করেছি। কীভাবে আরও অগ্রসর হতে পারি, তা নিয়ে কথা বলেছি।’

মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘একইভাবে অমীমাংসিত বিষয় যেগুলো আছে, সেগুলোর কীভাবে সমাধান করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা করেছি। আমাদের সীমান্ত কীভাবে আরও শান্তিপূর্ণ করা যায়, সেটা নিয়ে আলোচনা করেছি। আমাদের বাণিজ্য বাড়ানো, করোনা মোকাবিলায় সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। করোনার আরও নতুন নতুন ভেরিয়েন্ট আসতে পারে। তাই এই সহযোগিতা অব্যাহত রাখতে হবে। বাংলাদেশ কখনোই নিরাপদ থাকবে না, যদি ভারত নিরাপদ না থাকে।’

ভারতের পররাষ্ট্রসচিব হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা বাংলায় গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে বলেন, ‘বাংলাদেশে আসতে পেরে আমি খুবই আনন্দিত। পররাষ্ট্রসচিবের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। আমি আজ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করব। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে দেখা করব। সন্ধ্যায় ভারতীয় হাইকমিশনারের বাসায় পুরোনো বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করব। কাল প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করব। ডিসেম্বর মাস বাংলাদেশ ও ভারতের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ ১৬ ডিসেম্বর উদ্‌যাপন উপলক্ষে বাংলাদেশে আসবেন।’

হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা বলেন, ‘দুই দেশের সম্পর্ক ভালোভাবে যাচ্ছে। দুই দেশের একসঙ্গে উদ্‌যাপন বিরল। বাংলাদেশ ও ভারতের জনগণ ১৯৭১ সালে জীবন উৎসর্গ করেছিল। স্বাধীনতার জন্য রক্ত দিয়েছিল। আপনাদের বিজয় দিবসের অংশ হতে পেরে আমরা গর্বিত। ভারতের রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির আমন্ত্রণে আসছেন। এটা তাঁর প্রথম বাংলাদেশ সফর। গত মার্চে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ঢাকায় এসেছিলেন। সেটি ছিল কোভিডের সময় তাঁর প্রথম বিদেশ সফর। এতে সম্পর্কের তাৎপর্য প্রতিফলিত। দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে আমরা সম্পর্কের সোনালি অধ্যায়ে প্রবেশ করেছি। দুই দেশের সহযোগিতার ক্ষেত্রে বড় কোনো বাধা নেই। কীভাবে সামনের দিনগুলোতে সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি, এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সবুজ ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি, ডিজিটাল সহযোগিতা নিয়ে কথা হয়েছে, যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যুক্ত। এতে দুই দেশের জনগণের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে।’

সংযুক্তি নিয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা জানান, ১৯৬৫ সালের আগের ছয়টি সংযুক্তির মধ্যে পাঁচটি চালু হয়েছে, ষষ্ঠটি আগামী বছর শেষ হবে। আখাউড়া-আগরতলা নতুন প্রকল্প আগামী বছর চালু হবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার খুব শিগগির দিল্লি সফরের বিষয়ে জানতে চাইলে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বলেন, ‘আমরা চাই তিনি ভারত সফর করুন। গত মার্চে ঢাকা সফরের সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাঁকে দিল্লি সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। এটি এখনো বহাল। দুই দেশের মধ্যে এ সফর সুবিধাজনক কোন সময়ে করা যায়, তা নিয়ে কূটনৈতিক পর্যায়ে আলোচনা হচ্ছে। তবে বর্তমানে করোনা পরিস্থিতির কারণে বিশেষ করে অমিক্রনের কারণে উদ্বেগ আছে। তবে যত শিগগির সম্ভব তিনি ভারত সফর করুন, আমরা এটা চাই।’