বাংলাদেশবিরোধী বক্তব্য কাজে লাগেনি

মো. তৌহিদ হোসেন

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের এবারের নির্বাচন বিশ্লেষণ করলে আমরা তিনটি প্রবণতা লক্ষ করি। প্রথমত হেরে যাওয়ার পরও বিজেপি পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে একটি শক্তিশালী বিরোধী দল হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। দ্বিতীয়ত গত লোকসভা নির্বাচনে বাম ফ্রন্ট ক্ষয়িষ্ণু হয়ে পড়েছিল। এবার বিধানসভার নির্বাচনে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট গড়লেও তাদের অবস্থান হয়েছে আরও শোচনীয়। তৃতীয়ত বিজেপির যতটুকু অর্জন, তার পুরোটাই হিন্দু ভোটারদের ওপর ভর করে এসেছে।

ভোটের প্রবণতা বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে কোচবিহার ও জলপাইগুড়ি বাদ দিয়ে দিনাজপুর থেকে মুর্শিদাবাদ পর্যন্ত কংগ্রেসের আধিক্য ছিল। এবার কংগ্রেস আর বাম জোটের সেই ভোট চলে গেছে তৃণমূলের দিকে। সার্বিকভাবে মুসলিম ভোটটাও গেছে তৃণমূলের দিকে। আবার হিন্দু ভোটের মেরুকরণ হলেও সবটা ভোট বিজেপির দিকে যায়নি।

ফল গণনার শুরু থেকেই মোটামুটি স্পষ্ট হয়ে যায়, পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতায় তৃণমূল কংগ্রেসই থাকছে। যদিও নন্দীগ্রামে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হেরে যাওয়া তৃণমূলের জন্য বড় একটি ধাক্কা। অবশ্য মমতা ভোট গণনায় কারচুপির অভিযোগ এনে আদালতে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। সাবেক সহকর্মী ও বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারীর কাছে মমতার হেরে যাওয়া বিজেপির হাইকমান্ডকে পরাজয়ের মধ্যেও কিছুটা স্বস্তি দেবে।

পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনের ভোটে প্রভাব ফেলতে হেন কোনো কাণ্ড নেই, যা বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব করেননি। ভোটের প্রায় পুরো সময়জুড়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ একরকম পশ্চিমবঙ্গেই পড়ে ছিলেন। তাঁদের চেষ্টা ছিল ভারতের অন্য অংশের মতো পশ্চিমবঙ্গেও বিজেপি ঢেউ ছড়িয়ে দেওয়ার। সামগ্রিকভাবে ভোটের ফলাফল বলে দিচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গের মানুষ বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের দৃষ্টিকটু হস্তক্ষেপ ভালোভাবে গ্রহণ করেনি। বিশেষ করে ভোটের মাঠে বাংলাদেশকে ঘিরে অমিত শাহর জঘন্য উক্তিগুলোকে তাঁরা ভালোভাবে নেননি। অর্থাৎ বিজেপি নেতৃত্বের বাংলাদেশবিরোধী বক্তব্য পশ্চিমবঙ্গের ভোটারদের আকৃষ্ট করেনি।

তিস্তাসহ দুই দেশের সমস্যা সমাধানের প্রেক্ষাপটে বলা যায়, অমীমাংসিত বিষয়গুলোর সুরাহা করতে হবে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে। পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকারের সঙ্গে নয়। তিস্তা সমস্যার সমাধান না হওয়ার জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনীহাকে দায়ী করা হয়। তবে এবারের নির্বাচনে বিজেপি জিতে গেলেই যে রাতারাতি সব সমস্যার সমাধান হয়ে যেত, তা নয়। তবে ইতিহাস, নৈকট্য—সব মিলিয়ে পশ্চিমবঙ্গকে ঘিরে আমাদের একধরনের অনুভূতি আর আকর্ষণ কাজ করে। সবকিছুর পরও পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আমি আশাবাদী। আসামের মতো পশ্চিমবঙ্গ যে পুরোপুরি বিজেপির দিকে ঝুঁকে পড়বে না, এ মুহূর্তে তো এটা বলা যেতেই পারে।