বাংলাদেশে অস্ত্র বিক্রি ও যৌথ উৎপাদনে তুরস্কের আগ্রহ

রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় বৈঠক শেষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন ও তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত সাভাসগলু সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন
ছবি: পিআইডি

বাংলাদেশে প্রতিরক্ষাসামগ্রী বিক্রির পাশাপাশি যৌথভাবে সমরাস্ত্র উৎপাদনে আগ্রহী তুরস্ক। প্রতিরক্ষা খাতে যৌথ উৎপাদনের লক্ষ্যে বাংলাদেশের সঙ্গে প্রযুক্তি বিনিময়ের জন্য তুরস্ক তৈরি রয়েছে। বাংলাদেশের স্বাস্থ্য, প্রতিরক্ষাসহ বিভিন্ন খাতে বিপুল বিনিয়োগের সুযোগ আছে বলে মনে করছে দেশটি।

আজ বুধবার দুপুরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে বৈঠকের পর তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত সাভাসগলু সাংবাদিকদের কাছে এ মন্তব্য করেন।

কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, তুরস্ক এখন বাংলাদেশে যুদ্ধে ব্যবহৃত হেলিকপ্টার ও ট্যাংক বিক্রি করতে চাইছে।

যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রকাশিত প্রতিরক্ষাবিষয়ক সাময়িকীর সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের পাশাপাশি বাংলাদেশকে অস্ত্র রপ্তানির নতুন বাজার হিসেবে বিবেচনা করছে তুরস্ক। তুরস্কের সরকারি কর্মকর্তা ও প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, তুরস্ক এই তিন দেশে নৌবাহিনীর জাহাজ, আধুনিক সমরাস্ত্র, ড্রোন ও সাঁজোয়া যান বিক্রি করতে আগ্রহী।

রাজধানীর বারিধারায় তুরস্কের চ্যান্সেরি কমপ্লেক্স উদ্বোধনের জন্য দুই দিনের সফরে গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঢাকায় আসেন মেভলুত সাভাসগলু। সফরের দ্বিতীয় দিনে তিনি ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে গিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। পরে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে গণভবনে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।

আমাদের প্রতিরক্ষা পণ্যের গুণগত মান অত্যন্ত ভালো, দাম অত্যন্ত সুলভ এবং এগুলো কিনতে কোনো শর্ত আরোপ করা হয় না। আমি নিশ্চিত বাংলাদেশ এ সুবিধাগুলোর সুযোগ নেবে।
মেভলুত সাভাসগলু

রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘আমরা তুরস্কের সঙ্গে বাণিজ্য, কোভিড-১৯, বহুপক্ষীয় সম্পর্ক বাড়াতে আগ্রহী। আমরা তুরস্কের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত। দুই পক্ষের জন্য সুবিধাজনক সময়ে দুই দেশে বঙ্গবন্ধু ও কামাল আতাতুর্কের আবক্ষ মূর্তি উন্মোচন করা হবে।’

মেভলুত সাভাসগলু বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এখন দক্ষিণ এশিয়ার উদীয়মান সূর্য। আর সব দেশের জন্য বাংলাদেশ আজ দৃষ্টান্ত। এশিয়া আর ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে তুরস্কের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার বাংলাদেশ। তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে স্বাস্থ্য, প্রতিরক্ষাসহ নানা খাতে বিপুল বিনিয়োগের সুযোগ আছে। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রকাশিত প্রতিরক্ষাবিষয়ক সাময়িকীর সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের পাশাপাশি বাংলাদেশকে অস্ত্র রপ্তানির নতুন বাজার হিসেবে বিবেচনা করছে তুরস্ক। তুরস্কের সরকারি কর্মকর্তা ও প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, তুরস্ক এই তিন দেশে নৌবাহিনীর জাহাজ, আধুনিক সমরাস্ত্র, ড্রোন ও সাঁজোয়া যান বিক্রি করতে আগ্রহী।

মেভলুত সাভাসগলু বলেন, ‘আমাদের প্রতিরক্ষা পণ্যের গুণগত মান অত্যন্ত ভালো, দাম অত্যন্ত সুলভ এবং এগুলো কিনতে কোনো শর্ত আরোপ করা হয় না। আমি নিশ্চিত বাংলাদেশ এ সুবিধাগুলোর সুযোগ নেবে।’

প্রতিরক্ষা খাতে বাংলাদেশের সঙ্গে প্রযুক্তি বিনিময়ের বিষয়ে জানতে চাইলে তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘প্রতিরক্ষা খাতে আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে যৌথভাবে উৎপাদনের পাশাপাশি প্রযুক্তি বিনিময়ের জন্য তৈরি আছি। আমরা সবটা উৎপাদন না করলেও নিজেদের চাহিদার ৭৫ শতাংশই উৎপাদন করছি।’

মেভলুত সাভাসগলু বলেন, ‘আমরা নিকট ভবিষ্যতে দুই দেশের বাণিজ্য ২০০ কোটি ডলারে নেওয়ার লক্ষ্য ঠিক করেছি, যা গত বছর ছিল প্রায় ১০০ কোটি ডলার। বাংলাদেশ এখন অনেকগুলো বড় প্রকল্প হাতে নিয়েছে। তুরস্কের নির্মাণ প্রতিষ্ঠানগুলো পৃথিবীতে অন্যতম শ্রেষ্ঠ হিসেবে বিবেচিত। চীনের পরেই তুরস্কের অবস্থান। এ খাতে আমরা একসঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী।’

রোহিঙ্গা বিষয়ে বাংলাদেশকে সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে জানিয়ে তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এ বিষয়ে যথেষ্ট করছে না। আমরা শুধু কথা শুনতে চাই না, আমরা কাজেও তার প্রতিফলন দেখতে চাই।’

ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরের বিষয়ে জানতে চাইলে মেভলুত সাভাসগলু বলেন, বাংলাদেশের এ বিষয়ে জাতিসংঘ এবং আইওএম, ইউএনএইচসিআরসহ বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করা উচিত।