বাংলাদেশে নতুন ‘ডাটা সুরক্ষা আইনে’ ব্যক্তিগত গোপনীয়তা ঝুঁকিতে: অ্যামনেস্টি

বাংলাদেশ সরকারের প্রস্তাবিত ‘ডাটা সুরক্ষা আইন’ ব্যক্তিগত গোপনীয়তার অধিকারকে ঝুঁকিতে ফেলবে বলে মনে করছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। ‘ডাটা সুরক্ষা আইন, ২০২২’–এর প্রস্তাবিত খসড়ার প্রতিক্রিয়ায় লন্ডনভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠনটির দক্ষিণ এশিয়ার ক্যাম্পেইনার সাদ হাম্মাদি এ কথা বলেন।

গতকাল বুধবার এক বিবৃতিতে সাদ হাম্মাদি বলেন, ‘মতামতের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া প্রস্তাবিত ডাটা সুরক্ষা আইনের খসড়া বাংলাদেশে জনগণের গোপনীয়তার অধিকার হরণ করার উদ্দেশ্যে একটি মারাত্মক আইন।’

তিনি বলেন, ব্যক্তিগত ডিভাইসে গোপনীয় বার্তা আদান-প্রদানে সরাসরি অথবা বাইরে থেকে নজরদারি অনুমোদনের মতো অনুপ্রবেশমূলক কর্মকাণ্ডের সুযোগ রেখে ও বৈধতা দিয়ে আইনটিতে অস্পষ্ট এবং ব্যাপকভাবে প্রয়োগযোগ্য বিধান যুক্ত করা হয়েছে। এতে পর্যাপ্ত বাছবিচার ছাড়াই কেবল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির আগাম ব্যবস্থার কথা বলে ব্যক্তিগত অধিকার লঙ্ঘন করা হয়েছে।

সাদ হাম্মাদি বলেন, ‘কর্তৃপক্ষের নেওয়া ব্যবস্থার কারণে কেউ কোনো ধরনের ক্ষতিগ্রস্ত হলে এর বিরুদ্ধে দেওয়ানি, ফৌজদারি এবং অন্য কোনো ধরনের আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ থেকে আইনটিতে দায়মুক্তি দেওয়া হয়েছে। বিদ্যমান ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কারণে অতীতে কীভাবে ব্যাপকভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে, সেটি বিবেচনায়, যে কপটতামূলক উপায়ে সরকার জনগণের ডিজিটাল জীবনাচারণ নিয়ন্ত্রণ করতে চায় প্রস্তাবিত আইনটি তার নতুন সংযোজন।’

তিনি বলেন, ‘দমনমূলক কর্মকাণ্ডকে উৎসাহিত করে আইনের এমন অস্পষ্টতা থেকে দূরে সরে আসার পরিবর্তে, প্রস্তাবিত আইনটি বাংলাদেশের সংবিধান এবং নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারবিষয়ক আন্তর্জাতিক চুক্তিসহ আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতার লঙ্ঘন। আর রাষ্ট্র এসব চুক্তির একটি পক্ষ।’

অ্যামনেস্টির দক্ষিণ এশিয়ার ক্যাম্পেইনার আরও বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশ সরকারে প্রতি জনগণের মালিকানা, অংশগ্রহণ, স্বচ্ছতা এবং জনগণের গোপনীয়তা ও তথ্যের অধিকার সুরক্ষা নিশ্চিতের আহ্বান জানাই। একই সঙ্গে কর্তৃপক্ষসহ কেউ যেন মানবাধিকার লঙ্ঘন করে জবাবদিহি থেকে দায়মুক্তি না পায়।’

আরও পড়ুন

বিবৃতিতে বলা হয়, জনগণের গোপনীয়তার অধিকার মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করার উদ্দেশ্যে প্রস্তাবিত ‘ডাটা সুরক্ষা আইন, ২০২২’ আইনটি করা হচ্ছে। এতে জনগণের ব্যক্তিগত তথ্যে সরাসরি এবং বাইরে থেকে প্রবেশে কর্তৃপক্ষকে সব ধরনের দায়মুক্তি দেওয়া হয়েছে।

প্রস্তাবিত আইনে বলা হয়েছে, বিদ্যমান সব আইনের ওপর প্রস্তাবিত আইনটি প্রাধান্য পাবে। ফলে বাংলাদেশের তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯–এর ওপর এটি প্রভাব ফেলবে। তথ্য অধিকার আইনটি বর্তমানে জনগণের তথ্য অধিকার সুরক্ষার মূল দলিল।
‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা’, ‘রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব’, ‘বিদেশি রাষ্ট্রের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক’—এ ধরনের অস্পষ্ট ও ব্যাপক আকারে প্রয়োগযোগ্য পরিভাষা জুড়ে দিয়ে নিজেদের সুবিধামতো যেকোনো পরিস্থিতিতে আইনটি ব্যবহারের অধিকার নিশ্চিত করে নিয়েছে সরকার।