বাংলাদেশে বন ব্যবস্থাপনা ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

আজ ২১ মার্চ আন্তর্জাতিক বন দিবস। এ উপলক্ষে ১৭ মার্চ ২০১৫ প্রথম আলোর আয়োজনে ‘বাংলাদেশে বন ব্যবস্থাপনা: ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত আলোচকদের বক্তব্য সংক্ষিপ্ত আকারে এই ক্রোড়পত্রে প্রকাশিত হলো।
আলোচনায় সুপারিশ
. বাংলাদেশের ঢাকা, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ ছাড়া আর কোথাও শালবন নেই। যেকোনো উপায়ে একে রক্ষা করতে হবে
. বন সংরক্ষণের কৌশল পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার অংশ হতে হবে এবং জাতীয় বাজেটের অংশ হতে হবে
. পাহাড়ে বসবাসকারী মানুষের জীবিকার জন্য তিনটি কোল্ড স্টোরেজ, তিনটি পোশাকশিল্প ও তিনটি ফলের রস তৈরির কারখানা তৈরি করে দিতে হবে
. সামাজিক বনায়নের মতো প্রাকৃতিক বনকেও একটা আইনি কাঠামোর মধ্যে আনার ব্যবস্থা করতে হবে
. বন সংরক্ষণে গণমাধ্যমকে আরও ভূমিকা রাখতে হবে
আলোচনা
আব্দুল কাইয়ুম: দিন দিন দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে বনের ওপর বেশি চাপ পড়ছে। আবাসন ও অন্যান্য কারণে বন ধ্বংস হচ্ছে। আমরা হয়তো বন বৃদ্ধি করতে পারব না। কিন্তু ফলপ্রসূ বন ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বনের ঘনত্ব কার্যকরভাবে বাড়ানো যাবে। যেকোনো দেশের মোট আয়তনের ২৫ শতাংশ বনভূমি থাকতে হবে। আমাদের আছে মাত্র ১৭ শতাংশের কিছু বেশি।
‘আমাজন’ পৃথিবীর সবচেয়ে বড় গ্রীষ্মমণ্ডলীয় বন। ২০০৪-২০০৫ সাল পর্যন্ত এ বনের প্রায় ১৭ শতাংশ ধ্বংস করা হয়। পরে বিভিন্ন উদ্যোগের ফলে আমাজনের ৮৩ শতাংশ ক্ষতি কমানো গেছে। আমাদের দেশের জন্য এটি একটি উদাহরণ হতে পারে। আইন দিয়ে সবকিছু হবে না। স্থানীয় জনসাধারণের সম্পৃক্ততা, আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার, বন বিভাগের গঠনমূলক উদ্যোগ—সবকিছুর মাধ্যমে আমাদের বনকে রক্ষা করতে হবে। এখন আলোচনা করবেন মো. ইউনুছ আলী।
মো. ইউনুছ আলী: বাংলাদেশ পৃথিবীর একটি জনবহুল দেশ। এ দেশে রয়েছে তিন ধরনের ভূপ্রকৃতি। পাহাড়ি, উঁচু ও সমভূমি। পাহাড়ি ভূমি হলো ১২ শতাংশ। উঁচু ভূমি, বিশেষ করে ভাওয়াল-মধুপুর অঞ্চল ৮ শতাংশ। ৮০ শতাংশ সমভূমি। প্রাকৃতিক, অব্যবস্থাপনা, জীবিকা ইত্যাদি কারণে বন ধ্বংস হয়েছে। অনেক জায়গায় আবার বনায়ন করা হয়েছে। বৃহত্তর সিলেট, চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম হলো পাহিড় বনাঞ্চল। উঁচু ভূমিতে একসময় ছিল শালবন। দেশের ১ লাখ ২০ হাজার হেক্টর জমিতে শালবন ছিল। ১৯৪৭ সালের পর থেকে ব্যাপকভাবে এ বনের ক্ষতি করা হয়েছে। উপকূল অঞ্চলে আমাদের একমাত্র প্রাকৃতিক ম্যানগ্রোভ বন হলো সুন্দরবন। এখানে কেউ গাছ লাগায়নি। একান্তই প্রাকৃতিকভাবে এ বন গড়ে উঠেছে। সুন্দরবন থেকে শিক্ষা নিয়ে উপকূলীয় অঞ্চলে বনায়ন করেছি।
১৮৬৫ সালের বন আইন অনুযায়ী সুন্দরবনকে প্রথম সংরক্ষিত বন ঘোষণা করা হয়। এর অনেক আগ থেকে বিভিন্ন পাহাড়ি অঞ্চলকে সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে চট্টগ্রামের কিছু অঞ্চলের বন সংরক্ষণ করা হয়। কিন্তু ধীরে ধীরে মানুষ বনের ওপর নির্ভরশীল হয়েছে। ফলে বন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তখন বনকে রাজস্ব আহরণের উপায় হিসেবে মনে করা হতো। আশির দশক থেকে সামাজিক বনায়ন শুরু হয়। এখন বনের ওপর নির্ভরশীল মানুষদের সম্পৃক্ত করে সহব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বন রক্ষা করছি।
নিয়াজ আহমেদ খান: বাংলাদেশে বন সংরক্ষণের ঐতিহ্য আছে। দেশের পাবলিক সার্ভিসের প্রাচীনতম শাখা হলো বন বিভাগ। ১৮৫৫ সালে ব্রিটিশ চার্টারের মাধ্যমে এই বিভাগ শুরু হয়। ১৮৬৫ সালে এ বিভাগের যাত্রা শুরু হয়। কিন্তু এর অনেক আগে ১৮০৬ সালে বন সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। বন সংরক্ষণের এত দীর্ঘ ঐতিহ্য থাকা সত্ত্বেও কেন আমরা সংকটে পড়লাম? এর প্রধান কারণ হলো বন সংরক্ষণের পরিকল্পনা করা হয়েছে মানুষকে বাদ দিয়ে। বনকে কেবল রাজস্ব অর্জনের মাধ্যম হিসেবে দেখা হয়েছে। দ্বিতীয়ত, অনেক পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। কিন্তু এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয় অর্থ ও লোকবল বা অন্যান্য সমর্থন খুব বেশি ছিল না। একটা যথাযথ প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতার জায়গায় আমরা কখনো পৌঁছাতে পারিনি। প্রয়োজনীয় অর্থ ও মানসম্মত লোকবলের অভাব সব সময় থেকেছে।
নব্বইয়ের দশকের পর থেকে বন বিভাগের মধ্যে পরিবর্তন লক্ষ করা গেছে। তাঁরা বুঝেছেন মানুষকে সম্পৃক্ত করতে না পরলে বন সংরক্ষণ করা যাবে না। তাই বন সংরক্ষণের সঙ্গে সাধারণ মানুষ যুক্ত হয়েছে। কিন্তু এখনো আমাদের অনেক দূর যেতে হবে। আবার নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে অনেক সংস্কার এসেছে। বন সংরক্ষণের অনুকূলে অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত এরই মধ্যে নেওয়া হয়েছে।
সামাজিক বনায়নের বিধিমালা ২০০০ সাল থেকে শুরু হয়ে ২০১০ সালে এর গেজেট নোটিফিকেশন হয়। আইনের কিছু পরিবর্তন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বন বিভাগের দেড় শ বছরের ঐতিহ্য রয়েছে। বন সংরক্ষণের অন্যতম চ্যালেঞ্জ হলো বন বিভাগের ভাবমূর্তির সংকট। যেকোনো মূল্যে এ সংকট কাটিয়ে উঠতে হবে। এ বিভাগে অনেক বিশেষজ্ঞ আছেন। এঁদের ঠিকমতো কাজে লাগাতে হবে। তাহলে বন বিভাগের আরও উন্নয়ন ঘটবে।
ইশতিয়াক উদ্দিন আহমদ: বনের গুরুত্ব ঠিকভাবে বুঝছি কি না সেটি আজকে বড় প্রশ্ন। জীবনের জন্য মাটি, পানি খুব গুরুত্বপূর্ণ। আর বন হলো মাটি, পানি, জীবন-জীবিকা রক্ষার অন্যতম একটি উপাদান। বিভিন্ন কারণে ক্রমাগত বন ধ্বংস হচ্ছে। আজ বিশ্বব্যাপী এ প্রক্রিয়া চলছে। দেশে যারা বন অপরাধের সঙ্গে জড়িত, তাদের কোনো শাস্তি হয়েছে, এমন দেখি না। বরং তারা কোনো কোনো ক্ষেত্রে পৃষ্ঠপোষকতা পেয়ে থাকে। অপরাধ একটা সামাজিক ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। বন বিভাগের একার পক্ষে তা দূর করা সম্ভব না। এর জন্য প্রয়োজন রাজনৈতিক অঙ্গীকার। স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় প্রশাসনের ভূমিকা। এ ছাড়া দরকার স্থানীয় লোকজনের একনিষ্ঠ সম্পৃক্ততা। কিন্তু আজ কোনো পক্ষই ঠিকভাবে কাজ করছে না।
বন খাত এখনো সেভাবে গুরুত্ব পায়নি। বন সংরক্ষণ ও রাজস্ব অর্জন দুটো পাশাপাশি চলতে পারে না। বাংলাদেশের ঢাকা, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ ছাড়া আর কোথাও শালবন নেই। যেকোনো উপায়ে একে রক্ষা করতে হবে। এই শেষ শালবনটুকুও বিভিন্নভাবে ধ্বংস করা হচ্ছে। এর মধ্যে ব্যক্তিমালিকানার কৃষিজমি রয়েছে। সরকারকে বলেছিলাম এটা হস্তান্তর না করতে। হস্তান্তরের জন্য বিভিন্নভাবে শালবন ধ্বংস হচ্ছে। এর অনেকাংশ এখনো সরকারিভাবে বন ঘোষণা হয়নি।
বনের সীমানা নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু মাঠপর্যায়ে
এর কোনো বাস্তবায়ন নেই। আমাদের জীবনের ক্ষেত্রে বনের গুরুত্ব বুঝতে পারলে যত কঠিনই হোক না কেন বনের সীমানা সবাইকে জানাতে হবে। বনের দুটি অংশ। উৎপাদনশীল বন ও সংরক্ষিত বন। উৎপাদনশীল অংশে দেশীয় প্রজাতির হারিয়ে যাওয়া বৃক্ষের চাষ করতে হবে। পার্বত্য এলাকায় ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীন অশ্রেণিভুক্ত একটি বন আছে। বন্য প্রাণীর জন্য এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইজারার মাধ্যমে এটি ব্যবহার হয়। এই বন কেটে যেভাবে বনায়ন করা হয় সেটি মোটেই ওই অঞ্চলের জন্য উপযোগী নয়। এসব বিষয় সবাইকে ভাবতে হবে।
কামরুল ইসলাম চৌধুরী: জলবায়ু পরিবর্তন আমাদের বিপর্যস্ত করে দেয়। জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে বন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বনকে জাতীয় পর্যায়ে গুরুত্বের তালিকায় আনতে হবে। বন জীব ও প্রাণবৈচিত্র্যের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এটা আমাদের জীবন-জীবিকার সঙ্গেও জড়িত। ফলে এখন বনকে গুরুত্ব না দিয়ে কোনো উপায় নেই। বনকে সফলভাবে ব্যবহারের উপায় বের করতে হবে। বিশ্বের তাপমাত্রা ক্রমাগতভাবে বাড়ছে। বন আমাদের বেশি তাপমাত্রা থেকে রক্ষা করতে পারে। বনকে হয়তো খুব একটা সম্প্রসারণ করতে পারব না। কিন্তু পরিচর্যার মাধ্যমে এর কার্যক্ষমতা অনেক বাড়াতে পারব। তাই রক্ষণাবেক্ষণের কাজে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। আমাদের অনেক ন্যাড়া পাহাড় আছে। সেগুলোর প্রাণ ফিরিয়ে আনতে পারি। যা আমাদের নেই সেটি নিয়ে ভাবলে হবে না। যা আছে সেটিকে আরও কীভাবে বাড়ানো যায় সেটা ভাবতে হবে। বন হচ্ছে মানুষের জন্য প্রাকৃতিক ঢাল।
সিডর কিন্তু সুন্দরবনের ওপর দিয়ে গেছে। সুন্দরবন না থাকলে জনপদের কী হতো আমরা জানি না। এমনভাবে মানুষ ও জনপদের ক্ষতি হতো যে কোনোভাবেই হয়তো পূরণ করতে পারতাম না। সব বন সংরক্ষণের কৌশল পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার অংশ হতে হবে। জাতীয় বাজেটের অংশ হতে হবে। বনকে মুনাফার ভিত্তিতে না দেখে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার ভিত্তিতে দেখতে হবে।
মোস্তফা ফিরোজ: বন আমাদের জাতীয় ঐতিহ্যের অংশ। পৃথিবীর প্রায় ৭ দশমিক ২ শতাংশ পাখি ও ২ দশমিক ৪ শতাংশ স্তন্যপায়ী প্রাণী পাওয়া যায় আমাদের দেশে। ভৌগোলিক অবস্থানের দিক থেকে বাংলাদেশ একটি বন্য প্রািণবান্ধব দেশ। কেবল বন নয়, আমাদের বিভিন্ন জলাশয়, চরাঞ্চল—সব জায়গায় বন্য প্রাণী আছে। বন্য প্রাণী সংরক্ষণের কথা বললে আমাদের সামনে আসে বাঘ, হরিণ, হাতি ইত্যাদি। অথচ গয়লা হাঁসসহ এমন কিছু প্রজাতি পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায় বাংলাদেশে। তিন দশক আগে বনের অবস্থান আজ থেকে অনেক ভালো ছিল। ক্রমেই বনের অবস্থা খারাপের দিকে যাচ্ছে। কিন্তু আমি ব্যক্তিগতভাবে এটা নিয়ে শঙ্কিত নই। কারণ আমাদের বনের মধ্যে এত বৈচিত্র্য আছে, যা পৃথিবীর আর কোথাও নেই। অত্যন্ত আশার কথা হলো, গত আড়াই দশক থেকে বন বিভাগের মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তন ঘটেছে। তারা বনের গুরুত্ব বুঝতে শিখেছে। বন সংরক্ষণের সব চেষ্টাই তারা করে। এর আগে বনকে শুধু রাজস্ব আয়ের উৎস হিসেবে বিবেচনা করা হতো। বন সংরক্ষণে তাদের কোনো মনোযোগ ছিল না।
১৯৯৪ সালে বন সংরক্ষণসংক্রান্ত একটি আন্তর্জাতিক সনদে স্বাক্ষরের পর বন ভাবনায় অনেক পরিবর্তন এসেছে। বন বিভাগের মানুষ এখন মন থেকে বিশ্বাস করে যে বন্য প্রাণী রক্ষা করতে হবে। চুনাতি বন্য প্রাণীদের একটি অভয়ারণ্য ছিল। কিন্তু ২০০০ সালের মধ্যে চুনাতির স্বাভাবিক বন নষ্ট হয়। ২০০০ সালের পর বন বিভাগসহ বিভিন্ন সংস্থা এখানে কাজ করার ফলে গত ১০ বছরে একটা বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে। তাই নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে উদ্যোগ নিলে আমাদের বন সম্পদের অকল্পনীয় পরিবর্তন আনা সম্ভব।
মাইকেল টমাস রবসন: জলবায়ু পরিবর্তনের পারস্পরিক সম্পর্কের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। ক্রমাগত বনভূমি ধ্বংস জলবায়ু পরিবর্তনকে ত্বরান্বিত করছে। বনভূমি জলবায়ূ পরিবর্তনের নির্দেশক হিসেবেও কাজ করে। সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বনভূমি থেকে জ্বালানি আহরণ করা সম্ভব, যা জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে পরিবেশদূষণ কমাতে সাহায্য করে। এ ছাড়া, বন, বায়ুমণ্ডল থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণ করে পরিবেশকে ভালো রাখে।
জলবায়ু পরিবর্তন ও বনভূমি একে অন্যের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। এফএও (ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচার অরগানাইজেশন) জাতিসংঘের একটি বিশেষায়িত সংস্থা। এ সংস্থা টেকসই জ্বালানি ব্যবস্থাপনা, জ্বালানি নিরাপত্তা ও পুষ্টির জন্য কাজ করেছে। প্রতিবছরই বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বনভূমি ধ্বংস ও কৃষিজমিতে রূপান্তরের ঘটনা ঘটছে। বাংলাদেশেও বনভূমি বিভিন্ন উৎপাদনমুখী কর্মকাণ্ডের জন্য পরিবর্তন হচ্ছে। বনের ভেতরের জলাভূমি রক্ষা করে স্থানীয় জনসাধারণ সহ-ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে আর্থসামাজিক অবস্থায় পরিবর্তন আনতে পারে। এফএও বরাবরই বন ও বনায়নের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী। আমরা সুদীর্ঘ দিন বনায়ন, বনজ সম্পদ ও বনভূমির জন্য একটি বৈশ্বিক রূপরেখা তৈরির লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি। এ জন্য এফএও বাংলাদেশে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে বনভূমির সামগ্রিক উপাত্ত সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করার কাজ করছে। বনের ওপর নির্ভরশীল জনগণের বিকল্প কর্মসংস্থান ব্যতীত ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য টেকসই বন ব্যবস্থাপনা সম্ভব নয়। তাই শুধু বন বিভাগ বা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় নয়, এ ব্যাপারে আমাদের সবাইকে যৌথভাবে কাজ করা উচিত।
গেরিট কোয়ালিটজ: জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য কার্বন ডাই-অক্সাইড দায়ী। এই গ্যাস নির্গমনের উৎস হিসেবে বন ও বনাঞ্চল বিশেষ ভূমিকা পালন করে। বাংলাদেশে বর্তমানে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের আওতায় বন অধিদপ্তরের সঙ্গে জিআইজেড যৌথভাবে দুটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। একটি প্রকল্পের আওতায় প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ, গণসচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রহণ, জীববৈচিত্র্য জরিপ, বিভিন্ন ধরনের বনায়নসহ টেকসই বন ব্যবস্থাপনার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। অপর একটি প্রকল্পের আওতায় সুন্দরবনসংলগ্ন তিনটি জেলার ঝুঁকিপূর্ণ উপকূলীয় বাঁধ এলাকার জনগণের অংশগ্রহণে টেকসই উন্নয়ন ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। সহ–ব্যবস্থাপনার আলোকে স্থানীয় জনগণের অংশগ্রহণে ঝুঁকিপূর্ণ উপকূলীয় বাঁধ এলাকা মেরামত ও তার ব্যবস্থাপনা, প্রশিক্ষণ প্রদান, স্থানীয় জনগণের বিকল্প আয়ের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ২০১৫ সালের শেষ দিকে দুটি প্রকল্পই সমাপ্ত হবে।
তা ছাড়া এ বছর অন্যান্য সহযোগী সংস্থা তথা ইউএসএআইডি, আইইউসিএন ও সিএনআরএসের সঙ্গে যৌথভাবে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়, বন অধিদপ্তর ও মৎস্য অধিদপ্তরের সহযোগিতায় সহ–ব্যবস্থাপনার ওপর একটি আঞ্চলিক সম্মেলন আয়োজন করতে যাচ্ছে। এ দেশে বন ব্যবস্থাপনাসংক্রান্ত নতুন প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে বন ব্যবস্থাপনা বিষয়টির কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক, যেমন: খাদ্যনিরাপত্তা, টেকসই জীবন-জীবিকা, বিশুদ্ধ পানির নিশ্চয়তা ইত্যাদির সঙ্গে সমন্বয় করতে হবে।
আবদুল্লাহ আব্রাহাম হোসেন: বন অধিদপ্তরের বিশেষ সমর্থন ও জিআইজেডের পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলাদেশে উন্নয়ন সহযোগিতার আওতায় দুটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। আগে উন্নয়ন সহযোগিতামূলক কার্যক্রম বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বন অধিদপ্তরের কোনো পদ্ধতি ছিল না। ইতিমধ্যে জিআইজেড আরও একটি নতুন প্রকল্প গ্রহণ করেছে। জাতীয় বননীতির আলোকে বাংলাদেশে বন ব্যবস্থাপনার যাত্রা শুরু হয়। ১৮৯৪ সালের জাতীয় বননীতি এ দেশের প্রথম ও সবচেয়ে পুরোনো জাতীয় বননীতি। বিভিন্ন সময়ে এ নীতি পরিবর্তন করা হয়েছে। সর্বশেষ চতুর্থবারের মতো ১৯৯৪ সালে জাতীয় বননীতি প্রণয়ন করা হয়। এর আলোকে বর্তমানে বন ব্যবস্থাপনা গড়ে উঠেছে। সামাজিক চাহিদা ও দেশের আর্থসামাজিক অবস্থা বিবেচনা করেই এসব বননীতি সংশোধন করা হয়েছে। বননীতির উদ্দেশ্যসমূহ পর্যালোচনা করলেই এ দেশের বন ব্যবস্থাপনার ধারাবাহিক পরিবর্তনগুলো লক্ষ করা যাবে। আন্তর্জাতিকভাবেই বনের ভূমিকা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ বিষয়ে বিগত ২০১৩ ও ২০১৪ সালের আন্তর্জাতিক বন দিবস পালনের সময় জাতিসংঘের মহাসচিব তাঁর ভাষণে বিভিন্ন তথ্য–উপাত্ত প্রদানের মাধ্যমে তুলে ধরেছেন। বাংলাদেশে বনের গুরুত্ব অপরিসীম। বনের গুরুত্ব বৃদ্ধির সঙ্গে জাতীয় বননীতির গুরুত্ব বৃদ্ধি পায়।
জাতীয় অভিজ্ঞতা ও প্রত্যাশার সঙ্গে তাল মিলিয়ে ভবিষ্যতে বলিষ্ঠ বন ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার জন্য বিভিন্ন পর্যায়ে কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি প্রয়োজন। জিআইজেড উন্নয়ন সহযোগিতার আওতায় এ বিষয়ে কাজ করে যাচ্ছে। আশা করা যায় যে জিআইজেডের গৃহীত কার্যক্রম সঠিক পথে অগ্রসর হচ্ছে এবং এ ধারা অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে এ দেশে জলবায়ু পরিবর্তনের যেকোনো প্রভাব মোকাবিলা করা যাবে।
অসিত রঞ্জন পাল: সবাই মনে করে বন ব্যবস্থাপনা একমাত্র সরকারের কাজ। ফলে জনগণকে কখনো আমলে আনা হয়নি। জনগণকে সম্পৃক্ত না কের বনকে ধ্বংসের দিকে নিয়েছে। তিন দশক ধরে এ ধারণার পরিবর্তন এসেছে। এখন জনগণকে সঙ্গে নিয়েই কাজ হচ্ছে। কিন্তু সব ক্ষেত্রে জনগণকে ফলপ্রসূভাবে সম্পৃক্ত করা যায়নি। মধুপুর একটা বিশাল বন। এটি প্রায় ধ্বংসের দিকে যাচ্ছিল। মধুপুর এলাকায় ৫৭টি গ্রামে ৪৫ হাজার লোক বাস করে। এখানে বাঙালি, আদিবাসীসহ কয়েকটি সম্প্রদায়ের মানুষ আছে। তাদের ঘরবাড়ি তৈরি, জ্বালানি কাঠসহ সব ধরনের কাঠ মধুপুর বন থেকে আসত। প্রতিবছর ছয় লাখ গাছ কাটা পড়ত। আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম, যারা গাছ কাটে তাদের দিয়ে কীভাবে বন সংরক্ষণ করা যায়। গাছ কাটা অপরাধের সঙ্গে জড়িত এমন ৭০০ জনকে ১৯টি বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিলাম। যাতে তারা এর মাধ্যমে জীবিকা অর্জন করতে পারে। আজ চার বছর একটা গাছও কাটা যায়নি। এখন ৪৮ প্রজাতির পাখি পাওয়া যাচ্ছে। চারটি নতুন প্রজাতি এসেছে যারা আগে কখনো মধুপুরে ছিল না। এখন মেছো বাঘ, হরিণ ইত্যাদি প্রজাতির প্রাণী এখানে দেখা যায়। বাংলাদেশে প্রতি বর্গকিলোমিটারে ১ হাজার ১০০ জন বাস করে। পাহাড়ি এলাকায় প্রতি বর্গকিলোমিটারে ১০০ জন বাস করে।
পাহাড়ি বনাঞ্চলে ১০ গুণ সুযোগ রয়েছে। পাহাড়ি বনাঞ্চলের বৈশিষ্ট্য মধুপুরের মতোই। এরা তাদের প্রয়োজনীয়
সব কাঠ পাহাড় থেকে সংগ্রহ করে। এখানে প্রচুর আনারসসহ বিভিন্ন ফলমূল হয়। পাহাড়ে বসবাসকারী মানুষের জীবিকার জন্য তিনটি কোল্ড স্টোরেজ, তিনটি পোশাকশিল্প ও তিনটি ফলের রস তৈরির কারখানা করে দিতে হবে। তাহলে পাহাড়ি বনাঞ্চল রক্ষা পাবে। সংশ্লিষ্ট সবাইকে এসব বিষয় গুরুত্বের সঙ্গে ভাবতে হবে।
আনিসুল হক: বিভিন্ন বিপর্যয়ে বনের গুরুত্ব বারবার বুঝেছি। বন না থাকলে সিডরে আরও কী ধ্বংস নেমে আসত তা কল্পনাও করা যায় না। বন থেকে রাজস্ব আসে। কিন্তু বন যদি বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাহলে তো রাজস্বও আসবে না। তাই প্রথম অগ্রাধিকার হবে বনকে সংরক্ষণ করা। যাঁরা এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেন, তাঁদের আরও সচেতন হতে হবে। এমন কোনো সিদ্ধান্ত তাঁরা নেবেন না, যা বনের রিরুদ্ধে যায়। বনের পাশে যারা বাস করে তাদের যদি বিকল্প না দেওয়া হয় তারা বনে ঢুকবেই। কোনোভাবেই ঠেকানো যাবে না। তাদের জীবিকার প্রয়োজনে বনের ক্ষতি করবে। বনের পাশের মানুষের জীবিকার দিকটি গুরুত্বের সঙ্গে ভাবতে হবে। এ ক্ষেত্রে গণমাধ্যমের ভূমিকা রয়েছে। গণমাধ্যমকর্মী হিসেবে আমরা বনকে খুবই গুরুত্ব দিই। বিশেষ করে প্রথম আলো বন নিয়ে গোলটেবিল করে। সচেতনতা সৃষ্টির জন্য বনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে লেখে। শ্যালা নদীতে তেলের জাহাজ ডুবলেও গোলটেবিলসহ বিভিন্ন প্রতিবেদন লেখা হয়েছে। এটাই যে যথেষ্ট তা মনে করছি না। বন সংরক্ষণে গণমাধ্যমকে আরও ভূমিকা রাখতে হবে।
সিডরে যখন প্রচণ্ডভাবে বন ক্ষতিগ্রস্ত হলো তখন আমরা লিখেছিলাম বন তার নিজের নিয়মেই বেড়ে উঠবে। বাইরে থেকে বিরক্ত করার প্রয়োজন নেই। আমরা দেখেছি বন ঠিকই তার নিজস্ব নিয়মে ঘুরে দাঁড়িয়েছিল। মোটামুটি কয়েকটি বিষয়ে ভাবতে হবে। যেমন আমাদের গণমাধ্যমগুলোকে আরও ভূমিকা রাখতে হবে। সবাইকে সচেতন করতে হবে। বনের ওপর নির্ভরশীল মানুষের জীবিকার ব্যবস্থা করতে হবে। এসব উদ্যোগ নিশ্চয়ই বনকে সুরক্ষিত করবে।
আকবর হোসেন: আশির দশক পর্যন্ত বন ব্যবস্থাপনার ধ্যানধারণা ছিল পুরোনো। এর পর থেকে এ ক্ষেত্রে পরিবর্তন আসতে থাকে। আমরা দেখলাম বন ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে মানুষকে সম্পৃক্ত করলে বন টিকে থাকে। আশির দশকে উত্তরবঙ্গ থেকে মানুষকে সম্পৃক্তের কাজ শুরু হয়। নব্বইয়ের দশকে সালবন ও ২০০০ সাল থেকে পাহাড়ি ও সরকারি বনভূমিতে সামাজিক বনায়নের কাজ শুরু হয়।
প্রথমে প্রতিজনকে এক হেক্টর ও পরে বেশি মানুষকে সম্পৃক্ত করার জন্য এক একর করে জমি দিয়েছি। এর মাধ্যমে তাদের জীবিকার ব্যবস্থা হয়। সামাজিক বনায়নের আয়ের ৪৫ শতাংশ পাবে বনায়নকারী, ৪৫ শতাংশ সরকার ও ১০ শতাংশ থাকবে সংরক্ষিত তহবিলে। অর্থাৎ গাছ কাটার পর বনায়নের জন্য যেন সরকারের ওপর নির্ভর করতে না হয়। নিজস্ব তহবিলের মাধ্যমে যেন বনায়ন করা যায়।
সামাজিক বনায়নের পদ্ধতিটা এমন যে বারবার টাকা আসতে থাকবে এবং বনায়ন হতে থাকবে। এখন আবার নিয়ম করা হয়েছে সরকারি জমিতে যারা সামাজিক বনায়ন করবে, তাদের ৭৫ শতাংশ দেওয়া হবে। নব্বইয়ের দশকের পর থেকে প্রাকৃতিক বনের গাছ কাটা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এ বনকে কীভাবে রক্ষা করব? এ ক্ষেত্রে আমরা সহ–ব্যবস্থাপনার উদ্যোগ নিয়েছি। প্রাকৃতিক বনের পাশের মানুষ ব্যবস্থাপনার সঙ্গে যুক্ত থাকবে। বনের আয়ের একটা অংশ তারা পাবে। এভাবে প্রাকৃতিক বনও রক্ষা করার ব্যবস্থা হয়েছে। সামাজিক বনায়নের মতো প্রাকৃতিক বনকেও একটা আইনি কাঠামোর মধ্যে আনার ব্যবস্থা করতে হবে।
মিহির কান্তি মজুমদার: বাংলাদেশের বন জীববৈচিত্র্য ও ইকোসিস্টেমসমৃদ্ধ। পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে আমাদের জনসংখ্যার ঘনত্ব অনেক বেশি। সমৃদ্ধ ইকোসিস্টেমের জন্য আমরা বেঁচে আছি। আমাদের যেহেতু জনসংখ্যা বেশি সেহেতু বনের ওপর চাপ বেশি। বৈদেশিক মুদ্রা, খাদ্য, পানি—সবকিছুর জন্য বন দরকার। আমাদের উপকূলীয় অঞ্চল ৭১০ কিলোমিটার। সুন্দরবনের উপকূল হলো ১৫০ কিলোমিটার। এই ১৫০ কিলোমিটারে চিংড়ি উৎপাদন হয়। বাকি জায়গায় চিংড়ির পোনার চাষ হয়। আমরা চকরিয়া, নোয়াখালীর ম্যানগ্রোভ বন ধ্বংস করেছি। এখানে ম্যানগ্রোভও নেই, চিংড়িও নেই। ম্যানগ্রোভ না থাকলে চিংড়ি হবে না। কারণ, ম্যানগ্রোভ সুন্দরবন তার গাছের পাতা ও ছাল পচিয়ে চিংড়ির খাদ্য তৈরি করে। আমাদের আরও ৫৬০ কিলোমিটার উপকূলে ম্যানগ্রোভ বন করতে হবে। আমরা চিংড়ি-কাঁকড়া রপ্তানি করে প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছি।
আমাদের দেশে ৬০০ প্রজাতির পাখি আছে। অথচ সারা ইউরোপে হয়তো ৩০০ প্রজাতির বেশি পাখি নেই। আমাদের সামাজিক বনায়নকে ম্যানগ্রোভে রূপান্তর করার কথাও ভাবতে হবে। ১৬ লাখ হেক্টর বন বনবিভাগের হাতে নেই। যে যেভাবে পারছে এটা ব্যবহার করছে। এই ভূমিকে একটা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আনতে হবে।
আমাদের কমন কনজারভেশন অ্যাক্ট করতে হবে। অর্থাৎ নদী, খাল, বন যা যেখানে আছে সেখানে থাকবে। কোনো কারণে এগুলো না থাকলেও তাকে নদী, খাল, বন বলতে হবে। এসব ভরাট হলে খনন করতে হবে। বন না থাকলে বনায়ন করতে হবে। এই আইনটি জরুরিভাবে করতে হবে। আমি পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক থেকে বন সংরক্ষণ শুরু করেছি।
মধুপুর বনে ৭০০ জন গাছ পাহারা দেয়। তাদের নিয়ে কো-অপারেটিভ করেছি। উত্তরাঞ্চলের ৬০টি বার্ড কলোনি সংরক্ষণ করছি। এ পাখি সংরক্ষণের জন্য যারা কাজ করে, তাদের জীবিকার ক্ষেত্রেও সহযোগিতা করছি। আমাদের ২৪ লাখ সদস্য প্রতি সপ্তাহে উঠানবৈঠক করে। প্রতি উঠানবৈঠকে সাতটি প্রতিজ্ঞা করা হয়।
সাতটি প্রতিজ্ঞার মধ্যে একটি প্রতিজ্ঞা হলো ‘আমরা নিয়মিত খাল, বিল, নদী, বন ও বন্য প্রাণী সংরক্ষণ করি।’ এসব ছাড়া পরিবেশ মন্ত্রণালয়ে থাকার সময় পরিবেশবান্ধব নয়, এমন অনেক আইন পরিবর্তন করেছি।
মো. ইউনুছ আলী: আলোচনায় অনেক বিষয় এসেছে। মনে করি, সবকিছুর মধ্যে একটা সামঞ্জস্য বিধান করতে হবে। জিআইজেড সহযোগিতা করছে। কমন কনজারভেটিভ রিসোর্স আইন করতে হবে। অর্থাৎ বন, নদী, খাল, বিল, ডোবা, হাওর সবকিছুকে সংরক্ষণের আইন করতে হবে। এগুলোকে কোনো অবস্থায় ইজারা দেওয়া যাবে না।
বিভিন্ন কারণে এর কোনোটা ক্ষতিগ্রস্ত হলে তাকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে হবে। সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো বন, নদী, নালা, খাল, বিল বন্দোবস্ত দেওয়া। এটা বন্ধ করতে না পারলে এই প্রাকৃতিক সম্পদগুলো রক্ষা করতে পারব না। আমাদের জাতীয়ভাবে একটি সংরক্ষণ নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে।
কিছু ভূমিদস্যু দেশের অনেক জরুরি সম্পদ গ্রাস করছে। তারা কোথাও না কোথাও থেকে প্রশ্রয় পাচ্ছে। তারা যেন কোনোভাবে প্রশ্রয় না পায় এদিকটি সবাইকে খেয়াল রাখতে হবে। এ ক্ষেত্রে সব ধরনের গণমাধ্যমকে এক হয়ে কাজ করতে হবে।
আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা রয়েছে। নীতি ও আইনি দুর্বলতা রয়েছে। এসব কাটিয়ে উঠতে হবে। বন বিভাগের জন্য বাজেট বাড়াতে হবে। পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার অংশ হতে হবে। আলোচনায় অনেক বিষয় এসেছে। আমার দিক থেকে যা যা করা সম্ভব তার সবটুকু করব।
আব্দুল কাইয়ুম: বন একটি জাতীয় সম্পদ। সংশ্লিষ্ট সবাইকে এটি রক্ষার ব্যাপারে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। বনের সঙ্গে মাটি, পানি, জীবন-জীবিকার গভীর সম্পর্ক। বন টিকে থাকলে প্রাকৃতিক ভারসাম্য টিকে থাকবে।
মধুপুর, পাহাড়ি, ম্যানগ্রোভসহ সব বনকে সম্প্রসারণের উদ্যোগ নিতে হবে। সরকারের দিক থেকে বনকে অগ্রাধিকারের তালিকায় আনতে হবে। বাজেটে বনের জন্য বিশেষ বরাদ্দ রাখতে হবে। প্রথম আলোর পক্ষ থেকে সবাইকে কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ।
যাঁরা অংশ নিলেন
মিহির কান্তি মজুমদার : চেয়ারম্যান, পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক ও সাবেক সচিব
মো. ইউনুছ আলী : প্রধান বন সংরক্ষক, বন বিভাগ
নিয়াজ আহমেদ খান : চেয়ারম্যান, ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
মোস্তফা ফিরোজ : অধ্যাপক, প্রাণিবিদ্যা বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
আকবর হোসেন : উপপ্রধান বন সংরক্ষক, বন বিভাগ
অসিত রঞ্জন পাল : প্রধান সহকারী বন সংরক্ষক, বন বিভাগ
ইশতিয়াক উদ্দিন আহমদ : দেশীয় প্রতিনিধি, আইইউসিএন ও সাবেক প্রধান বন সংরক্ষক
গেরিট কোয়ালিটজ : উপদেষ্টা, জিআইজেড
মাইকেল টমাস রবসন : প্রতিনিধি, এফএও, বাংলাদেশ
আবদুল্লাহ আব্রাহাম হোসেন : সিনিয়র পলিসি অ্যাডভাইজর, বায়োডাইভারসিটি অ্যান্ড ক্লাইমেট চেঞ্জ
কামরুল ইসলাম চৌধুরী : সভাপতি, এফইজেবি
আনিসুল হক : সহযোগী সম্পাদক, প্রথম আলো
সঞ্চালক আব্দুল কাইয়ুম : সহযোগী সম্পাদক, প্রথম আলো