বাংলাদেশে মানুষ আসলে সুস্থ থেকে বাঁচে ৬৪ বছর

বাংলাদেশে একটি শিশু জন্ম নিলে আশা করা যায়, সে ৭৪ বছর বাঁচবে। এটাই তার প্রত্যাশিত আয়ু বা গড় আয়ু।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু ৭৪ বছর ৩ মাস। তবে মানুষের স্বাস্থ্যকর আয়ু ৬৪ বছর ৩ মাস। বিশ্ব স্বাস্থ্য পরিসংখ্যান ২০২২ প্রতিবেদনে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মানুষের সঙ্গে বাংলাদেশের মানুষের আয়ু বিষয়ে এ তথ্য দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশে আজ একটি শিশু জন্ম নিলে আশা করা যায় সে ৭৪ বছর বাঁচবে। এটাই তাঁর প্রত্যাশিত আয়ু বা গড় আয়ু। এটি পুরুষ শিশুর ক্ষেত্রে ৭৩ বছর। আর কন্যাশিশুর ক্ষেত্রে ৭৫ বছর ৬ মাস। কিন্তু এই পুরো সময় সে সুস্থভাবে বেঁচে থাকে না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার স্বাস্থ্যকর আয়ুর হিসাবে অসুস্থতার কারণে অজান্তে জীবন থেকে ১০ বছর হারিয়ে যাচ্ছে।

সারা বিশ্বের মানুষের গড় আয়ু বাড়ছে। অর্থাৎ আগের চেয়ে এখন মানুষ বেশি দিন বেঁচে থাকছে। তবে জনস্বাস্থ্যবিদেরা বলছেন, বেঁচে থাকাই বড় কথা নয়। সুস্থভাবে বেঁচে থাকা দরকার। তাই প্রত্যাশিত স্বাস্থ্যকর আয়ু বা হেলদি লাইফ এক্সপেক্টেন্সিকে স্বাস্থ্যের সুচক হিসেবে ধরা হচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, বাংলাদেশে মানুষের স্বাস্থ্যকর প্রত্যাশিত আয়ু ৬৪ বছর ৩ মাস। এ ক্ষেত্রে পুরুষের স্বাস্থ্যকর গড় আয়ু ৬৪ বছর ২ মাস, নারীর স্বাস্থ্যকর গড় আয়ু ৬৪ বছর ৪ মাস।

রোগ নিয়ে বা প্রতিবন্ধিতা নিয়ে বেঁচে থাকা এবং নীরোগ শরীরে বেঁচে থাকার মধ্যে পার্থক্য আছে। নীতিনির্ধারকদের গুরুত্ব দিতে হবে স্বাস্থ্যকর আয়ুর ওপর।
ডা. মুশতাক হোসেন, পরামর্শক, আইইডিসিআর

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনির্ণয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরামর্শক ডা. মুশতাক হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ ক্ষেত্রে জীবনমানের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। রোগ নিয়ে বা প্রতিবন্ধিতা নিয়ে বেঁচে থাকা এবং নীরোগ শরীরে বেঁচে থাকার মধ্যে পার্থক্য আছে। নীতিনির্ধারকদের গুরুত্ব দিতে হবে স্বাস্থ্যকর আয়ুর ওপর।’

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, জীবনমান নির্ভর করে চারটি বিষয়ের ওপর: শারীরিক স্বাস্থ্য, মনস্তাত্ত্বিক স্বাস্থ্য, সামাজিক সম্পর্ক ও পরিবেশ। ব্যথা বা অস্বস্তি, ওষুধের ওপর নির্ভরতা, ক্লান্তি, চলাচলের ক্ষমতা, ঘুম ও বিশ্রাম, কর্মক্ষমতার মাধ্যমে একজন মানুষের শরীরিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে জানা যায়। চিন্তা, শিখন, স্মৃতি, মনোযোগ, শারীরিক ভাবভঙ্গি—এসব থেকে মনস্তাত্ত্বিক স্বাস্থ্যের অবস্থা জানা যায়।

আবার অন্যের সঙ্গে একজন মানুষের ব্যক্তিগত সম্পর্ক, যৌনজীবন তার সুস্থতার সাক্ষ্য দেয় বলে উল্লেখ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

আরও পড়ুন

অন্যদিকে একজন মানুষের শারীরিক নিরাপত্তা, নির্মল পরিবেশ, আর্থিক সামর্থ্য বা সচ্ছলতা, নতুন তথ্য পাওয়ার সুযোগ ও দক্ষতা, বাড়ির পরিবেশ, সেবা পাওয়ার সুযোগ একজন মানুষকে সুস্থ রাখে। এসব কারণে কত সময় নষ্ট হয়, তার অনুমিত হিসাব বের করার একটি গ্রহণযোগ্য পদ্ধতি আছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার।

তার ভিত্তিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা দেখাতে চেয়েছে, প্রত্যাশিত গড় আয়ু এবং প্রত্যাশিত স্বাস্থ্যকর গড় আয়ুর মধ্যে পার্থক্য আছে। দেখা যাচ্ছে, মানুষ যত দিন বাঁচে, তার পুরো সময়টা সে সুস্থভাবে বাঁচে না। অসুস্থতার কারণে জীবন থেকে কিছু সময় চলে যায়।