বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু ফাদার টিম আর নেই

বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু রিচার্ড উইলিয়াম টিম আর নেই। রাজধানীর নটর ডেম ও হলি ক্রস কলেজের অন্যতম এই প্রতিষ্ঠাতা ফাদার টিম নামেই বেশি পরিচিত। যুক্তরাষ্ট্রে স্থানীয় সময় শুক্রবার তিনি শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৯৭ বছর।

ফাদার টিমের মৃত্যুর খবর প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেন ঢাকার তেজগাঁওয়ের সেন্ট জন ভিয়ানী হাসপাতালের নির্বাহী পরিচালক ফাদার কমল কোরাইয়া।
রিচার্ড উইলিয়াম টিম শান্তি ও আন্তর্জাতিক সমঝোতায় অবদানের জন্য ১৯৮৭ সালে ম্যাগসাইসাই পুরস্কার লাভ করেন। যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণকারী এই মানবদরদির জীবনের অনেকটা সময় কেটেছে বাংলাদেশে। ১৯৫২ সালে তিনি বাংলাদেশে আসেন। ঢাকার অর্ডার অব হলি ক্রসে সুপিরিয়র, নটর ডেম কলেজের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা এবং এই কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ তিনি। দেশের প্রাচীনতম নটর ডেম কলেজ ডিবেটিং ক্লাব, নটর ডেম কলেজ সায়েন্স ক্লাব, নটর ডেম কলেজ অ্যাডভেঞ্চার ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতাও তিনি।

বাংলাদেশে সত্তরের প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়ের পর ভোলার মনপুরাসহ আশপাশের অঞ্চলে দুর্গতদের পুনর্বাসনে কাজ করেন ফাদার টিম। তখন তিনি ছিলেন নটর ডেম কলেজের অধ্যক্ষ। সেই সময় তিনি শিক্ষার্থীদের নিয়ে বিধ্বস্ত মনপুরা দ্বীপে যান। দুর্গত মানুষের করুণ অবস্থা দেখে তিনি ফিরে আসেন। তারপর নটর ডেম কলেজ থেকে ছয় মাসের ছুটি নিয়ে মনপুরা দ্বীপে গিয়ে সব হারানো মানুষের জন্য কাজ করেন।

১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধীনতার পক্ষে আন্তর্জাতিক জনমত তৈরিতে ভূমিকা রাখেন ফাদার টিম। পরে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ পুনর্গঠনে বিভিন্ন স্তরে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। ১৯৯৮ সালের ভয়াবহ বন্যা ছাড়াও বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে ফাদার টিম ছিলেন বাংলাদেশের পাশে। বাড়িয়ে দিয়েছেন তাঁর সাহায্যের হাত। মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাঁকে মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননা পদক প্রদান করেছে।

ফাদার টিম আন্তর্জাতিক অঙ্গনে গবেষক হিসেবে সুপরিচিত। তিনি প্রায় ২৫০টি সামুদ্রিক প্রজাতির আবিষ্কারক। তাঁর সম্মানে একটি প্রজাতির নামকরণ হয়েছে ‘টিমিয়া পার্ভা’।
ফাদার টিম ১৯২৩ সালের ২ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রের ইন্ডিয়ানা অঙ্গরাজ্যের মিশিগান সিটিতে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি সেন্ট ম্যারিস গ্রেড স্কুল ও সেন্ট ম্যারিস হাইস্কুলে পড়াশোনা করেন। পরে ক্যাথলিক ইউনিভার্সিটি অব আমেরিকা থেকে জীববিদ্যা ও পরজীবীবিদ্যা বিষয়ে ডিগ্রি অর্জন করেন। ছেলেবেলা থেকেই গির্জার সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন তিনি।