বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা দেখে আপ্লুত বিদ্যা দেবী ভান্ডারি

জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে আজ ‘মুজিব চিরন্তন’ অনুষ্ঠানে নেপালের প্রেসিডেন্ট বিদ্যা দেবী ভান্ডারি
ছবি: পিআইডি

স্বাধীনতার ৫০ বছরে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে যে উন্নয়ন ঘটিয়েছে, তার উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করে নেপালের প্রেসিডেন্ট বিদ্যা দেবী ভান্ডারি বলেছেন, এতে মিত্রদেশ হিসেবে নেপালও আনন্দিত।


স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত ‘মুজিব চিরন্তন’ অনুষ্ঠানের ষষ্ঠ দিনের আয়োজনে সোমবার অতিথি হিসেবে যোগ দেন বিদ্যা দেবী ভান্ডারি। অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও ছিলেন।


নেপালের প্রেসিডেন্ট বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক বিকাশ ও উন্নতি ঘটেছে এবং বাংলাদেশ দারিদ্র্যমুক্ত হয়েছে। বাংলাদেশের মানুষের জীবনমানের পরিবর্তন দেখে মিত্ররাষ্ট্র হিসেবে নেপাল অত্যন্ত আনন্দিত।

প্রেসিডেন্ট হিসেবে বাংলাদেশে এটা বিদ্যা দেবী ভান্ডারির প্রথম সফর হলেও ব্যক্তিগত সফরে এর আগেও তিনি এসেছিলেন। কিন্তু এবার বাংলাদেশের অনেক ইতিবাচক পরিবর্তন দৃশ্যমান হয়েছে তাঁর চোখে। এ জন্য শেখ হাসিনার প্রশংসা করেন তিনি। বিদ্যা দেবী বলেন, তিনি বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যাই শুধু নন, তিনি একই সঙ্গে এই অঞ্চলের একজন যোগ্য নারী নেতা হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করেছেন।

জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে আজ ‘মুজিব চিরন্তন’ অনুষ্ঠানে নেপালের প্রেসিডেন্ট বিদ্যা দেবী ভান্ডারির সঙ্গে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
ছবি: পিআইডি


বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলার স্বপ্ন বাস্তবায়নে বাংলাদেশের দ্রুত এগিয়ে চলায় উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে নেপালের প্রেসিডেন্ট বলেন, তিনি ছিলেন একজন ‘ক্যারিশম্যাটিক’ নেতা, দক্ষ সংগঠক। তাঁর অপ্রতিরোধ্য সংগ্রাম, অবিচল নেতৃত্ব এবং ধারাবাহিক কর্মসূচি বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্ম দিয়েছে। এই অবদানের জন্য তিনি হয়ে উঠেছিলেন বঙ্গবন্ধু। তিনি মানুষের হৃদয় জয় করে নিয়েছিলেন এবং নতুন জাতি গঠনের লক্ষ্য পূরণ করেছিলেন।


নেপাল ও বাংলাদেশের মধ্যে মৈত্রীর বন্ধনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ১৯৭২ সালের ৮ এপ্রিল দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার পর থেকে দুই দেশের সম্পর্ক এগিয়ে চলেছে। ভৌগোলিক নৈকট্য, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যগত মিল তা আরও মজবুত করেছে। নেপালের অনেক শিক্ষার্থী বাংলাদেশে বিশেষ করে চিকিৎসা ও প্রকৌশল শিক্ষা নিচ্ছে, অন্যদিকে বাংলাদেশের অনেক শিক্ষার্থী নেপালে বৌদ্ধশাস্ত্র, ফার্মাসি এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে শিক্ষা গ্রহণ করছে। মানসম্পন্ন শিক্ষাব্যবস্থা এই খাতে দুই দেশের পারস্পরিক যোগাযোগ আরও বাড়াবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।


অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি মুজিব চিরন্তন স্মারক তুলে দেন নেপালের প্রেসিডেন্টের হাতে। এই স্মারকের একটি বিশেষত্ব হচ্ছে, এতে টুঙ্গিপাড়ার মাটি ব্যবহার করা হয়েছে।
আলোচনা পর্বের পর আধা ঘণ্টার বিরতি দিয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যন্ত্রসংগীত পরিবেশন করেন শিল্পকলা একাডেমির শিল্পীরা। নেপালের শিল্পীদের পক্ষ থেকে পরিবেশনার সময় বাঁশি এবং যন্ত্রসংগীতের তালে তালে বাংলার লোকসংগীতের মূর্ছনা ভিন্ন আবেশ তৈরি করে। ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর সদস্যদের পরিবেশনা ছাড়াও অনুষ্ঠানে ছিল কাব্য, নৃত্য, সংগীত ও কোরিওগ্রাফির সঙ্গে গণসংগীত ও লোকসংগীত পরিবেশনা।

জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে আজ ‘মুজিব চিরন্তন’ অনুষ্ঠানে সাংস্কৃতিক পরিবেশনা
ছবি: পিআইডি


রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ তাঁর বক্তৃতায় স্বাধীনতার পরপরই বাংলাদেশকে নেপালের স্বীকৃতি দেওয়ার কথাটি কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও তাঁর বক্তব্যে মুক্তিযুদ্ধে নেপালের সহায়তা ও সমর্থনের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্র দিয়েও সহায়তা করেছে বন্ধুরাষ্ট্রটি।


দক্ষিণ এশিয়ার গরিব মানুষদের জন্য দেশগুলোর বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে একত্রে কাজ করার অঙ্গীকার উঠে আসে শেখ হাসিনার বক্তব্যে। তিনি বলেন, একা চলার কথা এখন আর চিন্তা করা যায় না। করোনাভাইরাস সংক্রমণ মোকাবিলায় সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বানও জানান তিনি।

জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে আজ ‘মুজিব চিরন্তন’ অনুষ্ঠানে সাংস্কৃতিক পরিবেশনা
ছবি: পিআইডি


ঢাকায় জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে ষষ্ঠ দিনের এই অনুষ্ঠানের থিম ছিল ‘বাংলার মাটি আমার মাটি’। বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে নেপালের প্রেসিডেন্ট প্যারেড স্কয়ারে পৌঁছালে তাঁকে স্বাগত জানান রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে শেখ রেহানাও এ সময় উপস্থিত ছিলেন।


পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের সঞ্চালনায় এই অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বে ছিল আলোচনা এবং দ্বিতীয় পর্বে ছিল সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। অনুষ্ঠানে ‘বাংলার মাটি আমার মাটি’ প্রতিপাদ্যের ওপর একটি ভিডিও তথ্যচিত্র তুলে ধরা হয়। অনুষ্ঠানে কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন বলেন, দেশভাগের পর ধর্মভিত্তিক রাজনীতি বঙ্গবন্ধু মেনে নিতে পারেননি। বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ। বাংলার মাটিকে ভালোবেসে তিনি একটি স্বাধীন দেশের পতাকার স্বপ্ন দেখেছিলেন। বাঙালি জাতিসত্তার বিশ্বাস তিনি বাঙালিদের মনের ভেতরে ঢুকিয়ে দিতে পেরেছিলেন।