বাংলাদেশের তিন সমুদ্রবন্দর যুক্ত হবে মালের সঙ্গে

শীর্ষবৈঠকের পর দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা বাড়াতে চারটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হয়েছে, যার একটি সই করেন দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
ছবি: পিআইডি

বাংলাদেশ ও মালদ্বীপ নিজেদের মধ্যে সম্পর্ক জোরদারের জন্য আকাশ আর সমুদ্রপথে সরাসরি সংযোগ স্থাপনে রাজি হয়েছে। দুই দেশ মনে করে, নানা মাধ্যমে যোগাযোগ বাড়লে ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়বে। পর্যটন আর শিক্ষার মতো ক্ষেত্রগুলোতে দুই দেশের জনগণের মধ্যে আদান-প্রদান বাড়লে সম্পর্কটা আরও বিকশিত হবে।

আজ বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম মোহাম্মদ সলিহ তাঁদের আনুষ্ঠানিক আলোচনায় সমুদ্র আর আকাশপথে যোগাযোগ বাড়ানো যে জরুরি, তার ওপরই জোর দিয়েছেন। দুই শীর্ষ নেতা মালের সঙ্গে বাংলাদেশের তিনটি সমুদ্রবন্দরের মধ্যে সরাসরি জাহাজ চলাচল প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আর এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য দ্রুত জাহাজ চলাচল চুক্তির জন্য কর্মকর্তাদের উদ্যোগ নিতে বলেছেন।

দুই দিনের বাংলাদেশ সফরের দ্বিতীয় দিনে মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম মোহাম্মদ সলিহ সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তাঁর কার্যালয়ে আনুষ্ঠানিক বৈঠক করেন। এর আগে দুই নেতা একান্তে কথা বলেন। আলোচনার পর দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা বাড়াতে চারটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হয়েছে। সই হওয়া এমওইউগুলো হচ্ছে সমন্বিত সহযোগিতা বাড়াতে যৌথ কমিশন গঠন, দ্বিপক্ষীয় পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠক চালু, মৎস্য ও সামুদ্রিক মৎস্য আহরণে সহযোগিতা এবং সাংস্কৃতিক বিনিময় কার্যক্রম।

দুই শীর্ষ নেতার বৈঠকের পর বিকেলে রাজধানীর একটি হোটেলে দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা যৌথ সংবাদ সম্মেলনে আসেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘ঢাকা ও মালের মধ্যে বাংলাদেশ বিমান খুব শিগগির ফ্লাইট চালু করবে বলে প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছেন। আমরা আরেকটি সুখবরের আশায় রয়েছি। তা হলো আমরা চট্টগ্রামের সঙ্গে মালের মধ্যে খুব শিগগির সরাসরি জাহাজ চলাচল শুরু করতে যাচ্ছি।’

দুই শীর্ষ নেতা দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের সম্ভাবনার সদ্ব্যবহারের ওপর জোর দেন। এ জন্য দুই দেশের আনুষ্ঠানিক কোনো বাণিজ্যিক চুক্তি না থাকার প্রসঙ্গও টেনেছেন তাঁদের আলোচনায়। এই পরিস্থিতিতে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার আলোকে (ডব্লিউটিও) অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি (পিটিএ) সইয়ের জন্য মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম সলিহর কাছে আগ্রহ প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাবে মালদ্বীপের প্রধানমন্ত্রী ইতিবাচক মনোভাব দেখান। দুই দেশ পিটিএ নিয়ে দর-কষাকষিসহ অন্যান্য বাণিজ্যিক বিষয়ে আলোচনার জন্য নিয়মিতভাবে বাণিজ্যসচিব পর্যায়ের বৈঠক করতে রাজি হয়েছে। দুই দেশ প্রস্তাবিত শুল্ক খাতে সহযোগিতা এবং দ্বৈত কর প্রত্যাহারের চুক্তির খসড়া দ্রুত চূড়ান্ত করতে রাজি হয়েছে।

দুই দেশের বাণিজ্য বাড়ানোর জন্য কোন কোন খাতকে বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে, যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এ প্রশ্নের জবাবে মালদ্বীপের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল্লাহ শহীদ বলেন, ‘দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা আর অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদারে ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। কৃষিসহ নানা ক্ষেত্রে বাংলাদেশের বিপুল সম্পদ রয়েছে। মূল বিষয়টি হচ্ছে সংযুক্তি। আমাদের সংযুক্তি আরও ভালো হলে তখন দুই দেশের বেসরকারি খাত আপনাআপনিই ব্যবসা বাড়াতে সচেষ্ট হবে। কোভিডের আগে মালদ্বীপে ১৫ থেকে ২০ লাখ পর্যটক আসত। কাজেই মালদ্বীপে শুধু স্থানীয় জনগোষ্ঠীরই বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে পর্যটকদের কাছে পণ্য বিক্রির সুযোগ রয়েছে। কাজেই আজকে প্রধানমন্ত্রী ঢাকা ও মালের মধ্যে যে সংযুক্তির ঘোষণা দিয়েছেন, তা প্রশংসনীয়। আমরা সমুদ্রপথে সংযুক্তি নিয়েও আজ কথা বলেছি। এটি হলে সমুদ্রপথে দুই দেশের মধ্যে বেশি পণ্য পরিবহন করা যাবে।’

সংযুক্তির ক্ষেত্রে ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরের স্থিতিশীলতার ওপর জোর দিয়ে মালদ্বীপের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ভারত মহাসাগর হবে আগামী শতকের অঞ্চল। কারণ, অর্থনৈতিক অগ্রগতির প্রাণশক্তি এ অঞ্চলের ওপর নির্ভর করবে। তাই ভারত মহাসাগর যাতে শান্তিপূর্ণ হয় এবং বাইরে কেউ এসে জটিলতা সৃষ্টি না করে, সে বিষয়ে উভয়কে সচেষ্ট থাকতে হবে। এই অঞ্চল সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে, যাতে ব্যবসা-বাণিজ্য বিকশিত হয়।

বাংলাদেশের কাছ থেকে প্রতিরক্ষা ও ওষুধশিল্পের অভিজ্ঞতা নিলে মালদ্বীপ উপকৃত হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। এ ছাড়া দুই দেশের মধ্যে উচ্চশিক্ষা, মৎস্যসম্পদ ও পর্যটনে সহযোগিতার অনেক সুযোগ আছে বলে তিনি মত দেন। মালদ্বীপকে কারিগরিসহ শিক্ষা খাতে সহযোগিতার মাধ্যমে মানবসম্পদ উন্নয়নে সহায়তার জন্য বাংলাদেশকে ধন্যবাদ দেন তিনি।

মালদ্বীপে অনিয়মিত হয়ে পড়া বাংলাদেশের কর্মীদের বিষয়ে জানতে চাইলে আবদুল্লাহ শহীদ বলেন, ‘মালদ্বীপের অর্থনীতিতে বাংলাদেশের কর্মীদের অবদান রয়েছে। তাই তাদের অধিকার সুরক্ষায় আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ। দুই দেশের সরকার এটা নিয়ে আলোচনা করেছে। অন্যায় সুযোগ নিয়ে তাদের মালদ্বীপে নেওয়া হবে। আমরা একসঙ্গে কাজ করব, এটা বন্ধের উদ্যোগ নেব, যাতে অভিবাসীর অধিকার সুরক্ষিত হয়।’

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, সে দেশে অবস্থানরত সব প্রবাসীকে বিনা মূল্যে টিকা দেওয়ার বিষয়ে মালদ্বীপের প্রেসিডেন্টের ঘোষণার প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। টিকা প্রদানে সহায়তার জন্য বাংলাদেশের ১৮ সদস্যের চিকিৎসক ও নার্সের একটি দল মালদ্বীপে পাঠানো হয়েছে। চাহিদা মেটানোর জন্য আরও চিকিৎসক ও নার্স পাঠাতে অনুরোধ করেছেন মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট। ৮০ জনের একটি প্রতিনিধিদলকে দেশটিতে পাঠানোর জন্য তৈরি রাখা হয়েছে।