বাংলাদেশের পোশাকশিল্পের জন্য বার্তা

তৈরি পোশাক কারখানা
ফাইল ছবি

জলবায়ু শীর্ষ সম্মেলনে (কপ ২৬) গতকাল মঙ্গলবার আলোচনায় ছিল নারীদের বাড়তি দুর্ভোগের ঝুঁকির বিষয়টি, যার মূলে আছে নারী-পুরুষের বৈষম্য। বিশ্বের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশ এই নারীদের জীবন-জীবিকা অনেকটাই কৃষির ওপর নির্ভরশীল হওয়ায় জলবায়ু সংকটে তাঁরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন। জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় তাই নারীর ক্ষমতায়নের বিষয়টি আলাদা গুরুত্ব দাবি করে।

অবশ্য সোমবারেই বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের এক সংবাদ সম্মেলনে নারীর বৈষম্যজনিত ঝুঁকি মোকাবিলার কৌশল সম্পর্কিত প্রশ্নটি উঠে আসে। সেদিন বিকেলে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে দলের একজন বিশেষজ্ঞ সদস্য আইনুন নিশাত বলেন, ‘জলবায়ু সংকট মোকাবিলার জাতীয় নীতিকৌশলে বিষয়টির প্রতি নজর দেওয়া হয়েছে এবং আমাদের নীতি হচ্ছে কাউকে পেছনে ফেলে রাখা যাবে না।’

সংবাদ সম্মেলনে ধনী দেশগুলোর প্রতিশ্রুত অর্থসহায়তার বিষয়ে এখনো সমঝোতা না হওয়ায় বাংলাদেশের অবস্থান কী—এমন প্রশ্নের জবাবে সাংসদ সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘বাংলাদেশ আলাদা করে কিছু চাইছে না। বিশ্বের জন্য যা চাওয়া হচ্ছে, সেটাই বাংলাদেশের চাওয়া। আমরা ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর জন্য আগের দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূরণের কথা বলছি। তবে ২০২৪ সালের পর বছরে ১০ হাজার কোটি ডলার যথেষ্ট হবে না, সহায়তার পরিমাণ বাড়াতে হবে। তা ছাড়া সহায়তার ২৫ শতাংশ অভিযোজন এবং বাকিটা প্রশমনের জন্য বলা হচ্ছে। আমরা বলছি এখানে ভারসাম্য থাকতে হবে।’

বাংলাদেশের জন্য আলাদা গুরুত্ব রয়েছে এমন আরও একটি বিষয় সোমবার রাতে সম্মেলনে আলোচিত হয়। ফ্যাশন শিল্পের পক্ষ থেকে ১৩০টি কোম্পানি এবং ৪১টি সহযোগী প্রতিষ্ঠান বৈশ্বিক উষ্ণায়নের মাত্রা দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমিত রাখতে এই শিল্পের কার্বন নিঃসরণ ২০৩০ সালের মধ্যে অর্ধেকে নামিয়ে আনার ঘোষণা দিয়েছে। প্যারিস চুক্তির আলোকে আগে তাদের লক্ষ্য ছিল ২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণ ৩০ শতাংশ কমানো।

সুপরিচিত ব্র্যান্ড বারবেরি, এইচ অ্যান্ড এম, অ্যাডিডাস, নাইকে, শ্যানেল, পুমার মতো প্রতিষ্ঠানগুলো এই অঙ্গীকারে অংশ নিয়েছে। এদের ঘোষণা অনুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্যে তারা শতভাগ নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে পণ্য সংগ্রহ করবে। তাদের সরবরাহ চক্র বা সাপ্লাই চেইনে কয়লানির্ভর জ্বালানির ব্যবহার ২০৩০ সালের মধ্যে সম্পূর্ণ ইতি ঘটানো হবে। এসব ব্র্যান্ডের অনেকেই বাংলাদেশ থেকে পোশাক এবং পরিধান সামগ্রী কিনে থাকে। ফলে বাংলাদেশি রপ্তানিকারকদের জ্বালানি নবায়নযোগ্য উৎস থেকে নিশ্চিত করার চাপ বাড়বে।

ছবি: বিজিএমইএর সৌজন্যে

এদিকে সম্মেলনে দর-কষাকষিতে অগ্রগতির হার খুবই শ্লথ বলে অনেকে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। দাতব্য সংস্থা অক্সফামের একজন মুখপাত্র বলেছেন, শুক্রবারের মধ্যে সমঝোতা সম্ভব হবে বলে মনে হচ্ছে না। তবে কপ ২৬-এর সভাপতি অলোক শর্মা দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, তাঁর লক্ষ্য শুক্রবার সন্ধ্যা ছয়টার মধ্যে সমাপ্তি টানা। মঙ্গলবারেই একটি হালনাগাদ খসড়া প্রকাশ করা হয়েছে, যাতে সরকারপ্রধানদের সম্মতি প্রয়োজন ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা এখন নিজ নিজ রাজধানীতে যোগাযোগ করবেন।