জেল হত্যা মামলার আসামি সাবেক হাইকমিশনার খায়রুজ্জামান মালয়েশিয়ায় আটক

এম খায়রুজ্জামানকে দেওয়া ইউএনএইচসিআরের কার্ড
ছবি: এফআইডিএইচ এশিয়া ডেস্কের পরিচালকের টুইটার

মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন পুলিশ গতকাল বুধবার সকালে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত এম খায়রুজ্জামানকে আটক করেছে। তাঁকে দেশটির সেলাঙ্গর প্রদেশের আমপাং এলাকা থেকে আটক করা হয়।

মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের হাইকমিশনারের দায়িত্ব পালন শেষে এক যুগের বেশি সময় ধরে দেশটিতে শরণার্থী হিসেবে রয়েছেন খায়রুজ্জামান।

মালয়েশিয়ায় বসবাসরত একাধিক প্রবাসী বাংলাদেশির সঙ্গে যোগাযোগ করে এ তথ্য পাওয়া গেছে। তবে ঠিক কী অভিযোগে খায়রুজ্জামানকে আটক করা হয়েছে, তা নিশ্চিতভাবে জানা যায়নি।

প্যারিসভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব হিউম্যান রাইটসের (এফআইডিএইচ) এশিয়া ডেস্কের পরিচালকের টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে গতকাল দুপুরে এ বিষয়ে একটি টুইট করা হয়। টুইটে বলা হয়, মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত ও জাতিসংঘের শরণার্থী হিসেবে স্বীকৃত এম খায়রুজ্জামানকে দেশটির পুলিশ রাজধানী কুয়ালালামপুরের উপকণ্ঠ থেকে গ্রেপ্তার করেছে। তিনি বাংলাদেশে প্রত্যর্পণের ঝুঁকিতে রয়েছেন।

তবে কুয়ালালামপুরে বাংলাদেশ দূতাবাস ও ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় খায়রুজ্জামানের আটকের বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানায়নি।

খায়রুজ্জামান সাবেক সেনা কর্মকর্তা। ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে জাতীয় চার নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, এম মনসুর আলী ও এ এইচ এম কামারুজ্জামান হত্যা মামলার অন্যতম আসামি ছিলেন তিনি। ওই হত্যাকাণ্ডের পর তাঁর চাকরি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত করা হয়।

ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি মিয়ানমার, মিসর ও ফিলিপাইনে বাংলাদেশ মিশনে বিভিন্ন পদে কাজ করেছেন খায়রুজ্জামান।

১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর খায়রুজ্জামানকে অবসরে পাঠানোর পাশাপাশি জেল হত্যা মামলার আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার করা হয়।

বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসার পর খায়রুজ্জামান জামিনে কারাগার থেকে বের হয়ে আসেন। এরপর তিনি চাকরি ফিরে পেয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মহাপরিচালক পদে যোগ দেন।

২০০৪ সালে খায়রুজ্জামান জেল হত্যা মামলা থেকে খালাস পান। ২০০৫ সালে তিনি মিয়ানমারে বাংলাদেশ দূতাবাসে নিয়োগ পান। পরে ২০০৭ সালের আগস্টে তাঁকে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের হাইকমিশনার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর খায়রুজ্জামানকে দেশে ফিরে আসার নির্দেশ দেওয়া হয়। তিনি সেই নির্দেশ অমান্য করে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটিতে থেকে যান।

পরে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) দেওয়া শরণার্থী মর্যাদায় খায়রুজ্জামান মালয়েশিয়ায় অবস্থান করেন।

জানা গেছে, খায়রুজ্জামান এখন শরণার্থী হিসেবে ইউএনএইচসিআরের যে কার্ডটি ব্যবহার করেন, সেটি ২০২০ সালের মার্চে তাঁকে দেওয়া হয়। তাঁকে দেওয়া কার্ডটির মেয়াদ ২০২৪ সাল পর্যন্ত।