‘নতুন মার্কিন প্রশাসনের পররাষ্ট্রনীতিতে পরিবর্তন অবধারিত’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
ফাইল ছবি

যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে জো বাইডেন দায়িত্ব নেওয়ার পর সে দেশের পররাষ্ট্রনীতিতে যে পরিবর্তন আসবে, তা অবধারিত। তবে হোয়াইট হাউসে নীতিগত পরিবর্তনটা হবে যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ চাহিদা ও জনগণের মনোভাবের বিষয়টিকে বিবেচনায় নিয়ে।

রোববার সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ আয়োজিত এক ওয়েবিনারে বিশেষজ্ঞরা এই মত দেন।

ওয়াশিংটনে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের (বিইআই) প্রেসিডেন্ট এম হুমায়ূন কবীর বলেন, নতুন মার্কিন প্রশাসনের কাছে কোভিড–১৯ ব্যবস্থাপনা বিশেষ গুরুত্ব পাবে। তিনি আরও বলেন, দীর্ঘদিন ধরে মার্কিন পররাষ্ট্রনীতিতে প্রতিরক্ষার দিকটি বেশি প্রাধান্য পাচ্ছে। জো বাইডেন এতে পরিবর্তন আনার চেষ্টা করবেন। তবে এটা তাঁর জন্য খুব একটা সহজ হবে না।

সাবেক এই কূটনীতিক মনে করেন, বাংলাদেশের জায়গা থেকে প্রত্যাশা থাকবে নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক সহযোগিতার পাশাপাশি রোহিঙ্গা সংকটে যুক্তরাষ্ট্র জোরালোভাবে এ দেশের পাশে থাকবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজের (সিজিএস) পরিচালক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, বছরের পর বছর ধরে পণ্ডিতরা গণতন্ত্রের প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্রকে নিয়ে একটি মিথ তৈরি করেছেন। অথচ ভিয়েতনামে যে নির্যাতন দেশটি করেছে, সেটাকে নিশ্চয় গণতন্ত্র বলা চলে না। ডোনাল্ড ট্রাম্প এই নির্বাচনে হেরেছেন বটে। নির্বাচনের প্রতি ক্ষুধা যত দিন থাকবে, তত দিন অসংখ্য ট্রাম্পও থাকবেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক লাইলুফার ইয়াসমীন বলেন, বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে যুক্তরাষ্ট্র যে ভূমিকা পালন করত, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশটি সেখান থেকে সরে এসেছিল। মার্কিন জনগণকে তাঁদের ঐতিহাসিক ভূমিকা বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র যে নেতৃত্ব দিতে সক্ষম, এর গুরুত্ব অনুধাবন করতে হবে।

একই বিভাগের অধ্যাপক এ এস এম আলী আশরাফ বলেন, জো বাইডেন দায়িত্ব নেওয়ার পর অভ্যন্তরীণ রাজনীতি আর অর্থনৈতিক বাস্তবতাকে বিবেচনায় নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানটা ঠিক হবে। তিনি আরও বলেন, বাইডেন প্রশাসনের নীতি বা অবস্থানটা ঠিক হবে যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ প্রয়োজনীয়তাকে বিবেচনায় নিয়ে।

ওয়েবিনারের সঞ্চালক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক আমেনা মোহসিন বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জো বাইডেন জিতেছেন। কিন্তু নির্বাচনে নানাভাবে হেরে গেছে যুক্তরাষ্ট্র। গণতন্ত্রের প্রশ্নে সমগ্র বিশ্ব যুক্তরাষ্ট্রকে আদর্শ হিসেবে বিবেচনায় নিত। এবারের নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে পুঁজিবাদ, বর্ণবাদসহ নানা উপাদানের উপস্থিতির কারণে যুক্তরাষ্ট্রের উদার গণতন্ত্র নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। কোন পৃথিবীতে আমরা ছিলাম, সামনের পৃথিবীটা কেমন হবে, এই প্রশ্ন বড় হয়ে দেখা দিয়েছে।’

ওয়েবিনারে আরও আলোচনা করেন যুক্তরাষ্ট্রের কর্নওয়েল ইউনিভার্সিটির সাবেক অধ্যাপক ও আমেরিকান ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ স্টাডিজের (এআইবিএস) সাবেক সভাপতি শেলি ফেল্ডম্যান, টেক্সাস এ অ্যান্ড এম ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সহযোগী অধ্যাপক মেহনাজ মোমেন। আলোচনায় ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ আতিক রহমান।