মাস্টারশেফ অস্ট্রেলিয়ার এবারের আসরের সেরা তিনে ওঠার লড়াই ‘সার্ভিস চ্যালেঞ্জ’। এ চ্যালেঞ্জে বিচারকদের পাশাপাশি রেস্তোরাঁর গ্রাহকদেরও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে রান্না করে খাওয়াতে হবে প্রতিযোগীদের। সেই চ্যালেঞ্জ শেষে ফলাফলের পালা—সবাই নিস্তব্ধ। বিচারকদের সামনে দাঁড়িয়ে প্রতিযোগী জাস্টিন নারায়ণ, অ্যালিস এবং বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কিশোয়ার চৌধুরী।
এরপর এল সেই ঘোষণা। চূড়ান্ত পর্বের জন্য মনোনীত দুজনের নাম ঘোষণা করা হলো—কিশোয়ার ও নারায়ণ। বাদ পড়লেন অ্যালিস। গতকাল রোববার এই পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। এর আগের পর্বেই পিট ক্যাম্পবেল চূড়ান্ত পর্ব নিশ্চিত করেছেন। এখন শেষ লড়াই হবে কিশোয়ার, নারায়ণ ও ক্যাম্পবেলের মধ্যে।
প্রতিযোগিতায় শেষ ‘সার্ভিস চ্যালেঞ্জ’ মোটেই সহজ ছিল না। চ্যালেঞ্জ ছিল তিনজন প্রতিযোগীকেই রাঁধতে হবে এমন তিনটি পদ, যা তাঁদের নিজস্ব খাবারকে তুলে ধরবে। খাওয়াতে হবে ২৩ জন গ্রাহক, ২০ জন অতিথি আর প্রতিযোগিতার তিন বিচারককে। আর সবকিছুই করতে হবে চার ঘণ্টা সময়ের মধ্যে। জাস্টিন নারায়ণ রান্না করছেন ফুলকপির টাকো, মসলাদার ভেড়ার মাংস আর আইসক্রিম। অ্যালিস রান্না করেছেন ভিন্ন কিছু উপাদান দিয়ে ইতালিয়ান খাবার ও বিটভাজি।
কিশোয়ার চৌধুরীর প্রস্তুতি আরও অনেক বেশি। তাঁর আয়োজনে কিছুটা শঙ্কিত বিচারক অ্যান্ডি ও জক। কারণ, কিশোয়ার এত উপাদান নিয়ে কাজ করছেন যে সময়ের সঙ্গে পাল্লা দেওয়া তাঁর জন্য না কঠিন হয়ে পড়ে। কিশোয়ারের একটি পদ ছিল নেহারি, যার আসল স্বাদ পাওয়া যায় রাতভর রান্না করার পর। এটা তো মাঝখানের খাবারের পদ। এর আগে এবং পরে খাওয়ার জন্য কিশোয়ার রাঁধবেন কিংফিস আর মিষ্টান্নে পান দিয়ে আইসক্রিম—যার নাম ‘আফটার ডিনার মিন্ট’।
ঘড়ির কাঁটার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে খাবার তৈরিতে ব্যস্ত প্রতিযোগীরা। অবশেষে বাজে সময় শেষের ঘণ্টা। একে একে প্রথম পদ যায় বিচারক আর বাকিদের সামনে। নারায়ণের টাকো খেয়ে গভীর হতাশা প্রকাশ করেন বিচারকেরা। একই দশা অ্যালিসের খাবারের, স্বাদ বোঝা যাচ্ছে না! আর কিশোয়ারের মাছের পদ মন কাড়ে সবার, এ খাবার দিয়ে উতরে যান তিনি।
এরপর মূল খাবারের পালা। নারায়ণের ভেড়ার মাংস বিচারকদের খুব পছন্দ হয়। তবে আবারও হতাশ করেন অ্যালিস। কিন্তু অভূতপূর্ব স্বাদে আবারও এগিয়ে যায় কিশোয়ারের রান্না করা নেহারি। এটি তাঁর বাবার শেখানো রেসিপি। নেহারি খেয়ে বিচারকেরা মেকি রাগ প্রকাশ করেন, যেন বলতে চাইছিলেন, ‘এত মজা কেন খাবার’!
সবশেষে মিষ্টান্নের পালা। কিন্তু এখানেও হতাশা অ্যালিসের জন্য। তাঁর অতিরিক্ত চিন্তা আবারও খাবারের উপাদানের স্বাদ নষ্ট করে ফেলে। জাস্টিনের আইসক্রিম পছন্দ করেন বিচারকেরা। কিন্তু পান আইসক্রিমে আবারও বাজিমাত করেন কিশোয়ার। তাঁর পান আইসক্রিম খেয়ে বিচারক মেলিসা বলেন, ‘এটা বাংলাদেশের জন্য কিশোয়ারের প্রেমপত্র’।
অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়া রাজ্যের মেলবোর্নের বাসিন্দা কিশোয়ার চৌধুরীর জন্ম ও বেড়ে ওঠা অস্ট্রেলিয়াতেই। কিশোয়ার পেশায় ‘বিজনেস ডেভেলপার’। দুই সন্তানের মা কিশোয়ার অস্ট্রেলিয়ায় পরিচিত মুখ বাংলাদেশি ব্যবসায়ী কামরুল হোসাইন চৌধুরী এবং লায়লা চৌধুরীর সন্তান।
আগামী সোমবার ও মঙ্গলবার দুই দিনে দুটি পর্বের মধ্য দিয়ে পর্দা নামবে রান্নাবিষয়ক জনপ্রিয় রিয়েলিটি শো মাস্টারশেফ অস্ট্রেলিয়ার এবারের আসরের। সেখানে কিশোয়ার, নারায়ণ ও ক্যাম্পবেলের মধ্যে চ্যাম্পিয়ন-রানারআপ নির্বাচিত হবে।