বাতিঘরে আলী যাকের

প্রদীপ জ্বালিয়ে বাতিঘর নামের সংগ্রহশালাটির উদ্বোধন করেন (বাঁ থেকে) জাভেদ আখতার, আরমা দত্ত, সারোয়ার আলী, মাহ্‌ফুজ আনাম ও তারিক আনাম খান। গতকাল রাজধানীর এশিয়াটিক সেন্টারে
ছবি: সংগৃহীত

সারা জীবনে কম করেও ৫০ হাজারের মতো ছবি তুলেছেন আলী যাকের। কিন্তু মর্মান্তিক সত্য হচ্ছে, এই বিপুল ছবির পাঁচ হাজারও এখন আর টিকে নেই। নষ্ট বা হারিয়ে যাওয়া ছবির মধ্যে আছে কামরুল হাসান, বারীণ মজুমদার প্রমুখ কীর্তিমানের অন্তরঙ্গ ছবি। স্বাধীনতার পরের বাংলাদেশের অধিকাংশ মঞ্চনাটকেরই পারফরম্যান্সের ছবি, আফগানিস্তান নিয়ে সিরিজ। এসব ছবির অধিকাংশেরও কোনো হদিস যাকের পরিবারের কাছে নেই।

যা গেছে, তা নিয়ে আর আফসোস করে কী হবে; যা আছে, তাকে টিকিয়ে রাখতে হবে। আর এই টিকিয়ে রাখতেই আলী যাকেরের জীবন ও সৃষ্টিকর্ম নিয়ে চালু করা হলো বাতিঘর। গতকাল আলী যাকেরের ৭৭তম জন্মদিনে তাঁর কর্মস্থল এশিয়াটিক সেন্টারে প্রদীপ জ্বালিয়ে সংগ্রহশালাটির উদ্বোধন করেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টি ড. সারোয়ার আলী, দ্য ডেইলি স্টার-এর সম্পাদক মাহ্‌ফুজ আনাম, সাংসদ আরমা দত্ত, ইউনিলিভারের প্রধান নির্বাহী জাভেদ আখতার এবং অভিনেতা তারিক আনাম খান। শংকর সাঁওজালের সঞ্চালনায় ‘বিরাজ সত্য সুন্দর: স্মৃতিতে-স্মরণে আলী যাকের’ শিরোনামের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মামুনুর রশীদ, নিমা রহমান প্রমুখ। স্বাগত বক্তব্য দেন আলী যাকেরের বন্ধু ও সহকর্মী আসাদুজ্জামান নূর। পরে আলী যাকেরকে নিয়ে তৈরি ওয়েবসাইটের পরিচিতি তুলে ধরেন তাঁর ছেলে ইরেশ যাকের। আলী যাকের অনুদান ঘোষণা দেন তাঁর স্ত্রী সারা যাকের। এই গ্রান্ট থেকে বছরে তিনটা নতুন নাটক এবং নাট্যকলা, বিজ্ঞাপন ও মিডিয়া স্টাডিজের মেধাবী ছাত্রদের অনুদান দেওয়া হবে। সবশেষে বাতিঘরের পরিচিতি তুলে ধরেন আলী যাকেরের কন্যা শ্রিয়া সর্বজয়া।

ছয়তলায় লিফট থেকে নেমেই কাঠের সিঁড়ি। এই সিঁড়ি থেকেই শুরু হয়ে গেছে সংগ্রহশালা। শুরুতেই প্রিয় নিবাস রতনপুর। তাঁর ক্যামেরায় কতবার কতভাবে উঠে এসেছে এই জায়গাটার মানুষ ও প্রকৃতি। তার থেকে বাছাই করা কিছু ছবি নিয়ে এই সেকশন। তারপরই আছে আলী যাকেরের নিকটজনের ছবি। সিঁড়ি লাগোয়া ক্ষুদ্র একটা ঘরের একটা দেয়ালে আছে আলী যাকের সারা জীবনে যত স্বীকৃতি ও সম্মান পেয়েছেন, তার সনদ ও স্মারক, আরেক দিকের দেয়ালজুড়ে আছে যাকেরের তোলা তাঁর দুই সন্তানের ছবি। মূল ঘরের এক দিকের দেয়ালজুড়ে আছে তাঁর অভিনীত ও নির্দেশিত অধিকাংশ নাটকের স্টিল ও পোস্টার।

আছে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে পঠিত তাঁর কথিকা, পরিচয়পত্র, একটি রেডিও। এই কক্ষের বড় আকর্ষণ আলী যাকেরের কালজয়ী তিন চরিত্র নুরলদীন, গ্যালিলিও আর দেওয়ান গাজীর পোশাক ও কিছু প্রপস। এগুলো পরেই বাংলা নাটকের তিনটা চরিত্রকে জীবন্ত করে তুলেছিলেন আলী যাকের। পাশের লাগোয়া দুটো ঘর, যেগুলো আদিতে ছিল অফিস স্পেস, সেগুলোর অন্দরসাজে খুব একটা পরিবর্তন করা হয়নি। আলী যাকেরের নিত্যব্যবহার্য ডেস্ক, সোফা, কলম, ক্যামেরা দিয়ে সাজানো হয়েছে এই দুটো ঘর। এমনকি বয়ামে তাঁর প্রিয় বিস্কুটটা পর্যন্ত রাখা আছে। ছাদের খোলা অংশটা আলী যাকেরের তোলা নিসর্গ ও মানুষের ছবি আর আত্মজীবনীর উল্লেখযোগ্য অংশ দিয়ে সাজানো হয়েছে।

বনানীর এইচ ব্লকের ৭বি সড়কের ৬৩ নম্বর বাড়ির ঢাকা এশিয়াটিক সেন্টারের বাতিঘর। আর কিছুদিনের মধ্যেই এটি সর্বসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হবে।