বারবার আবেদন ফি নিয়ে ক্ষুব্ধ চাকরিপ্রার্থীরা

আগে নিবন্ধনপ্রাপ্তদের আগে চাকরি, এক আবেদনে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোতে চাকরির সুযোগ তৈরি হওয়াসহ বিভিন্ন দাবি নিয়ে ৮ অক্টোবর ঢাকার জাতীয় প্রেসক্লাবে মানববন্ধন করেন বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন পাওয়া এনটিআরসিএর সনদধারী চাকরিপ্রার্থীরা
ছবি: প্রথম আলো

বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) মাধ্যমে বেসরকারি স্কুল ও কলেজে নিয়োগপ্রক্রিয়ায় বড় ধরনের ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে। আগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটিই এই নিয়োগ দিত, তখন এ নিয়োগ নিয়ে ছিল অনিয়মের বিস্তর অভিযোগ। এখন এনটিআরসিএর অধীনে পরীক্ষার মাধ্যমে নিবন্ধন সনদ ছাড়া বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক হওয়ার সুযোগ নেই। ফলে, ঘুষ ছাড়াই অনেকেই চাকরি পাচ্ছেন। তবে এনটিআরসিএর আবেদন ফি, নিয়োগ প্রক্রিয়াসহ কিছু বিষয় নিয়ে এখনো অভিযোগ আছে চাকরিপ্রত্যাশীদের। এসব নিয়ে তাঁদের মধ্যে ক্ষোভও আছে।

সাধারণত, কোনো চাকরিতে একবার আবেদন ফি দিলেই হয়। কিন্তু এনটিআরসিএর ক্ষেত্রে তা ভিন্ন। স্কুলের সহকারী শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার ফি ৩৫০ টাকা ও প্রভাষক পদের জন্য আবার ৩৫০ টাকা দিয়ে আবেদন করতে হয়। প্রিলিমিনারি, লিখিত ও মৌখিক (ভাইভা) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পদ ফাঁকা থাকা সাপেক্ষে উত্তীর্ণ প্রার্থীদের আবার আবেদন করতে হয়। এ জন্য যে কটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আবেদন করা হয়, তার প্রতিটি আবেদনের জন্য প্রার্থীকে ১০০ টাকা করে দিতে হয়।

চাকরিপ্রত্যাশী কুড়িগ্রামের মাহবুব হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘এনটিআরসিএ দফায় দফায় আবেদনের ফাঁদ পেতেছে। এটা লটারির টিকিট কেনার মতো, অনেক টিকিট কিনতে হয়, ভাগ্য লাগলে চাকরি হয়, না হলে নাই।’

বেকারদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ফি নেওয়া উচিত নয়। পরীক্ষার খরচের জন্য আবেদন ফি ১০০ টাকা নিলেই হয়। এসব বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক, সমাজ বিশ্লেষক

চাকরিপ্রার্থীদের অভিযোগ, এভাবে আবেদনের সুযোগ রেখে বেকারদের কাছ অনেক টাকা আদায় করা হচ্ছে। এনটিআরসিএ অসংখ্য আবেদনের সুযোগ রেখে প্রার্থীদের বেশি প্রতিষ্ঠানে আবেদন করতে প্রলুব্ধ করছে বলে অভিযোগ করেন আরেক চাকরিপ্রার্থী আবদুল মালেক।

পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর আবার কেন আবেদন ফি দিতে হবে, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন চাকরিপ্রার্থীরা। তাঁদের দাবি, সব যাচাই-বাছাই শেষে যাঁরা উত্তীর্ণ হন, তাঁদের প্রাপ্ত নম্বর ও মেধাতালিকার ভিত্তিতে পছন্দের ক্রমনুযায়ী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়োগের ব্যবস্থা করা উচিত। এ জন্য আলাদা করে আর কোনো আবেদন ফি নেওয়া যাবে না।

এনটিআরসিএর নিয়োগপ্রক্রিয়ায় অসংখ্য আবেদন করে আলোচিত হয়েছেন নরসিংদীর মনোহরদীর শাহনাজ পারভীন। তিনি স্কুল ও কলেজ মিলিয়ে ১ হাজার ২১৯টি প্রতিষ্ঠানে আবেদন ফি, আনুষঙ্গিক খরচসহ প্রায় দেড় লাখ টাকা ব্যয় করেছেন। কিন্তু কোথাও শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাননি।

আবেদনপ্রক্রিয়ার বিদ্যমান প্রেক্ষাপটে বিসিএসের মতো একটি আবেদনের মাধ্যমেই বেসরকারি শিক্ষকদের নিয়োগ দেওয়া যায় কি না, সে বিষয়ে কাজ করছেন বলে জানিয়েছেন এনটিআরসিএর চেয়ারম্যান এনামুল কাদের খান। তিনি বলেন, এখানে সমস্যা হলো অনেক মামলা আছে। এসব জটিলতার কারণে পারা যায় না। তার পরও চেষ্টা করা হচ্ছে।

বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে চাকরি পাচ্ছেন না নরসিংদীর মনোহরদীর শাহনাজ পারভীন, সম্প্রতি ঢাকায় এসে তিনি শুনিয়েছেন দুর্দশার কথা
ছবি: প্রথম আলো

এনটিআরসিএ সূত্র জানায়, ২০০৫ সালে এই প্রক্রিয়া শুরুর পর মোট ১৬টি বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা হয়েছে। তাতে প্রায় সাড়ে ৬ লাখের বেশি চাকরিপ্রত্যাশী নিবন্ধিত হয়েছেন। তবে তাঁদের মধ্যে কতজনের চাকরি হয়েছে, তার সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই। কারণ, ২০১৫ সাল পর্যন্ত এনটিআরসিএ নিয়োগের জন্য সুপারিশ করত না। তবে ২০১৫ সালের পর থেকে এখন পর্যন্ত ৮৬ হাজার ২৮৯ জনকে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করেছে এনটিআরসিএ। সামনে ১৭তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা অপেক্ষমাণ।

এনটিআরসিএর এমন আবেদনপ্রক্রিয়ার বিষয়ে সমাজ বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক বলেন, যারা যেখানে সুযোগ পাচ্ছে ঠকাচ্ছে। দেশে বেকারত্ব একটি সমস্যা। সবার উচিত বেকারদের সহযোগিতা করা। কিন্তু হচ্ছে তার উল্টোটা। বেকারদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ফি নেওয়া উচিত নয়। পরীক্ষার খরচের জন্য আবেদন ফি ১০০ টাকা নিলেই হয়। এসব বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

আরও পড়ুন