বাল্যবিবাহ আর দেখতে চাই না

মারিয়া মান্দা

মাত্রই কদিন আগে আমরা ঢাকায় মেয়েদের সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন হয়েছি। সেই আনন্দের রেশ এখনো আছে আমাদের মনে। এরই ফাঁকে চলে এল নতুন বছর। আর নতুন বছর মানেই নতুন আশা। যা কিছু ব্যর্থতা বা অপ্রাপ্তি, সেগুলো দূর করে এগিয়ে চলার চেষ্টা করা।

মেয়েদের বয়সভিত্তিক ফুটবলে আমরা আগে থেকেই ভালো করে আসছি। বেশ কিছু সাফল্য পেয়েছি। নতুন বছরে চাইব সেই সাফল্য ধরে রেখে আরও সামনে এগিয়ে যেতে। আমার বিশ্বাস, একটা দল হয়ে খেলতে পারলে দেশের নারী ফুটবলে আরও সাফল্য আসবে। ধারাবাহিকতা ধরে রাখাটা খুব জরুরি।

শুধু ২০২২ কেন, আমি চোখ রাখছি ২০৩০-২০৩১ সালের দিকেও। আগামী ১০ বছরে বাংলাদেশকে কোথায় দেখতে চাই, যদি এমনটা ভাবি, আমার প্রথম চাওয়া হবে বাল্যবিবাহ যেন বন্ধ হয়। বাল্যবিবাহের কারণে অনেক মেয়ের স্বপ্নই অপূর্ণ থেকে যায়। সে হয়তো খেলোয়াড় হতে চেয়েছে বা অন্য কিছু, সেটা আর হয়ে ওঠে না। তাই দেশে বাল্যবিবাহ আর দেখতে চাই না। এটা বন্ধ হলে বিভিন্ন খেলায় আমাদের খেলোয়াড়ের সংখ্যাও বাড়বে। খেলোয়াড় না হলে কেউ শিক্ষক বা অন্য পেশায় যাবে। গোটা বাংলাদেশই তাতে উপকৃত হবে।

ময়মনসিংহ জেলার ধোবাউড়া থেকে আমার মতো অনেক মেয়েই উঠে এসেছে বাংলাদেশের ফুটবলে। আমরা ভালো খেলার পর কলসিন্দুর গ্রামে বিদ্যুৎ এসেছে। কলসিন্দুর গ্রামের মেয়েদের ফুটবলের সাফল্য সবার কাছে পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রথম আলো শুরু থেকে পাশে ছিল। বড়দিন উপলক্ষে গ্রামে এসে খুব ভালো লাগছে। আগামী ১০ বছর পর নিশ্চিতভাবেই প্রযুক্তি অনেক দূর এগিয়ে যাবে। গ্রাম তখন আরও উন্নত হবে, কোনো অভাব–অভিযোগ থাকবে না তখন, এমনটাই আশা। গ্রামের ছেলেমেয়েরা চাকরি পাবে, সবাই ভালো থাকবে, চিকিৎসা পাবে, সবার নিরাপত্তা থাকবে।

অর্থনৈতিক উন্নতিটাও গুরুত্বপূর্ণ। গ্রামেগঞ্জে অনেক মানুষ কষ্টে দিন কাটান। সামাজিকভাবে অবহেলার শিকার হন অনেকে। আগামী ১০ বছরে এসব দূর হবে, এটাও আমার আশার তালিকায় থাকবে। তবে আমি এই সময়ে সবচেয়ে বেশি পরিবর্তন চাইব খেলার মাঠে। আমাদের দেশে মেয়েদের খেলার মাঠে আসতে এখনো কিছু বাধা রয়ে গেছে। সেগুলো দূর করতে হবে। মেয়েদের জন্য বাধাহীন একটা পরিবেশ চাই।

বয়সভিত্তিক ফুটবলে আমরা প্রশংসা পেলেও অনেক সময় জাতীয় দলের জার্সিতে ভালো করতে পারি না। তবে আমাদের চেষ্টা আছে। আগামী ১০ বছরে আমরা যেন দক্ষিণ এশিয়ার নারী ফুটবলে পরাশক্তি হয়ে দাঁড়াতে পারি, সেটাও আমার একটা লক্ষ্য। ভারত, নেপালের ওপরে চলে যেতে চাই আমরা। ইরান, জর্ডানের মতো দলগুলোর সঙ্গে ভালো খেলার সামর্থ্য অর্জনও একটা চ্যালেঞ্জ হবে। এসবের বাইরে আমার আরও একটা সুপ্ত বাসনা আছে—১০ বছর পর বাংলাদেশ মেয়েদের বিশ্বকাপ ফুটবল খেলবে। জানি না স্বপ্নটা পূরণ হবে কি না, কিন্তু আমি সেই স্বপ্ন দেখি।

দেশের জন্য কিছু করতে পারলে সব সময়ই ভালো লাগে। আমার ব্যক্তিগত চাওয়া-পাওয়াও সেটাকে ঘিরেই। আগামী ১০ বছরে আমার স্বপ্নগুলো বাস্তবতার ভিত পাবে, এটাই আশা। (অনুলিখন)

মারিয়া মান্দা, বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ নারী ফুটবল দলের অধিনায়ক