বাস-মিনিবাসে বাড়তি ভাড়া আদায় চলছেই
ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানের মধ্যেই রাজধানী ঢাকায় বাস-মিনিবাসে বাড়তি ভাড়া আদায় অব্যাহত রয়েছে। ‘সিটিং সার্ভিস’ নাম করে কিছু মিনিবাসে ২০০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে।
এদিকে গতকাল মঙ্গলবার থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের কার্যক্রমের সময় মালিক ও শ্রমিকনেতাদের কয়েকটি দল অবস্থান নেয়। মালিক ও শ্রমিকনেতারা বলছেন, ভ্রাম্যমাণ আদালতকে ‘সহায়তা’ করার জন্যই তাঁরা রাস্তায় নেমেছেন। অবশ্য বাড়তি ভাড়া আদায়ের অপরাধে গত দুই দিনে কাউকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়নি। ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করছেন, মালিক-শ্রমিকদের চাপে কারাদণ্ড দেওয়া থেকে পিছিয়ে এসেছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)।
গতকাল বিআরটিএ চারটি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে। জরিমানা করা হয় ৯২ হাজার ৫০০ টাকা। পাঁচটি যানবাহন জব্দ করা হয়েছে। গত রোববার হিমাচল পরিবহনের একজন ভাড়া আদায়কারীকে এক মাসের কারাদণ্ড দেওয়ার পর মিরপুরকেন্দ্রিক পথে প্রায় সাত ঘণ্টা বাস চলাচল বন্ধ রাখেন পরিবহনমালিক ও শ্রমিকেরা।
বাড়তি ভাড়া আদায় ও বাসে তালিকা না টাঙানোর কারণে ১ থেকে ১৮ অক্টোবর পর্যন্ত বিআরটিএ ও ঢাকা জেলা প্রশাসনের ম্যাজিস্ট্রেটরা ভ্রাম্যমাণ আদালতে ২৫ জন পরিবহনশ্রমিককে কারাদণ্ড দেন। এ সময় ২ হাজার ৬০৮টি মামলা করা হয় এবং জরিমানা আদায় করা হয় ২২ লাখ ৭২ হাজার ৫২০ টাকা। ৬৯টি যানবাহন জব্দ করা হয়।
গতকাল বিআরটিএর প্রধান কার্যালয়ে কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, ভ্রাম্যমাণ আদালত অব্যাহত থাকবেন। এখন চারটি আদালত বসেন। ভবিষ্যতে আরও দুটি আদালত বাড়বে। তবে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘সব সময় চালকদের দায়ী করলে হবে না। কাউন্টার থেকে বাড়তি ভাড়া আদায় করলে মালিককে শাস্তি দিতে হবে। আর রাস্তায় বেশি ভাড়া নিলে চালককে দায়ী করতে হবে।’
ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান সত্ত্বেও বাস-মিনিবাসে বাড়তি ভাড়া আদায় চলছেই। সাভার থেকে ঢাকায় ওয়েলকাম ও লাব্বাইক প্লাস নামে দুটি পরিবহন চলে। ওয়েলকামের গন্তব্য মতিঝিল আর লাব্বাইক প্লাসের সায়েদাবাদ। এই দুটি পরিবহনের বেশির ভাগই মিনিবাস, আসন হওয়ার কথা ৩০টি। কিন্তু এই দুটি পরিবহনমালিকেরা গড়ে ১০টি আসন অতিরিক্ত যুক্ত করেছেন। শ্যামলী থেকে ফার্মগেট (দূরত্ব ৩ দশমিক ৬ কিলোমিটার) পর্যন্ত যেকোনো গন্তব্যে এই পরিবহনে ভাড়া আদায় করা হচ্ছে ১৫ টাকা। সরকার মিনিবাসের সর্বনিম্ন ভাড়া নির্ধারণ করে দিয়েছে পাঁচ টাকা। সরকার-নির্ধারিত হারে এই পথের ভাড়া পাঁচ টাকা ৭৫ পয়সা। এখানে পরিবহনশ্রমিকেরা ১৮৫ শতাংশ বাড়তি ভাড়া আদায় করছেন।
এ নিয়ে দুপুরে লাব্বাইক প্লাস পরিবহনের ভাড়া আদায়কারী মো. জুয়েলের সঙ্গে যাত্রীদের বচসা হতে দেখা যায়। জুয়েল বলেন, মালিক অন্তত ছয় স্থানে যাত্রী গণনা করার (ওয়েবিল) জন্য লোক বসিয়েছেন। তাঁরা শুধু যাত্রী গুনে লিখে দেন। আসনের অতিরিক্ত যাত্রী নেওয়া হয় না। ভাড়া মালিক ঠিক করে দিয়েছেন এবং দিন শেষে গণনা করা যাত্রী অনুসারে টাকা নেন। তাঁদের কিছু করার নেই।
অবশ্য মোটরযান আইনে ‘সিটিং সার্ভিস’ বলে কোনো পরিবহনের উল্লেখ নেই। প্রতিটি বাস-মিনিবাসে ২০ শতাংশ আসন খালি যাবে—এটা ধরে নিয়ে ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে।
গতকাল সড়ক পরিবহনমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, সিটিং সার্ভিস কিংবা অন্য যে নামেই হোক, বাড়তি ভাড়া আদায় করা যাবে না। ভ্রাম্যমাণ আদালত পেলেই ব্যবস্থা নেবেন। তিনি বলেন, সরকার যে ভাড়া নির্ধারণ করেছে, সেটি মালিকদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়নি। মালিক ও শ্রমিকনেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেই এই ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে। তারপরও অতিরিক্ত নেওয়া হবে কেন।
মন্ত্রী বলেন, ‘যে নিয়ম করা হয়েছে, সেটির অংশীদার তো মালিক-শ্রমিকেরাও। এ অবস্থায় কেউ বাড়তি ভাড়া আদায় করলে চালক-মালিক কেউই রক্ষা পাবে না। বিআরটিসির বাসে বাড়তি ভাড়া আদায়ের প্রমাণ পাওয়ার পর চেয়ারম্যানকে শোকজ (কারণ দর্শানো নোটিশ) করা হয়েছে। তা হলে বেসরকারি মালিকেরা কেন বিচারের বাইরে থাকবে?’
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতির মহাসচিব খোন্দকার এনায়েত উল্যাহ প্রথম আলোকে বলেন, তিনি নিজে রমনা এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালতকে সহায়তা করেছেন। বাড়তি ভাড়া আদায় করলে চলাচলের অনুমতি বাতিল করা হবে—এমন নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে মালিকদের। নতুন ভাড়া কার্যকর হলে কিছুটা অনিয়ম হয়। সেটা বন্ধে কঠোর অবস্থানে আছে মালিক সমিতিও।
‘ডব্লিউএইচওর দুর্ঘটনার হিসাব আজগুবি’: বিআরটিএর কার্যালয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বাংলাদেশে এক বছরে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানির যে হিসাব দিয়েছে, সেটি ‘আজগুবি, কল্পনাপ্রসূত ও বাংলাদেশকে ছোট করার অপপ্রয়াস’। ডব্লিউএইচও যে হিসাব দিয়েছে, তাতে প্রতিদিন ৫৯ জন মারা যায়। এটা বিশ্বাসযোগ্য কি না, সেই প্রশ্ন তোলেন তিনি।