আমাদের বাহুবলী সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালকেরা

ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

দক্ষিণ ভারতের অন্যতম ব্যয়বহুল ও আয় করা ছবি ‘বাহুবলী’। বাংলাদেশেও ছবির দুটি পার্টই বেশ সাড়া ফেলেছিল। তবে আজ ওই ছবির কথা না; আসলে বাহুর জোর যাঁদের রয়েছে, তাঁদের কথা বলতে চাইছি।

আমার চোখে আমাদের দেশে তাঁরা হলেন আমাদের সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালকেরা। তাঁদের কোনো শক্তি, কোনো আইন দিয়ে ধরে রাখা যাচ্ছে না। দিনকে দিন চরম বেপরোয়া হয়ে যাচ্ছেন তাঁরা।

সম্প্রতি মতিঝিল থেকে কল্যাণপুর যাব। সকাল আটটার দিকে অটোরিকশাচালককে ডাকতেই ভাড়া হাঁকলেন ৪০০ টাকা। এও জানিয়ে দিলেন, ৪০০ টাকার এক পয়সা কমে যেতে পারবেন না। বললাম, মিটারে চলেন। সোজাসাপটা কথা। মিটারে ‘পোষায় না’।

সকাল ৬টা থেকে ৮টা পর্যন্ত তাঁদের পোষায় না, রাস্তা ফাঁকা থাকে বলে। সকাল ৮ থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত পোষায় না রাস্তায় জ্যাম থাকে। দুপুর ১২ থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত পোষায় না লাইন দিয়ে গ্যাস নিতে সময় চলে যায়। বিকেল ৪টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত পোষায় না অফিস ছুটি, রাস্তা জ্যাম, যাত্রী বেশি সে জন্য। রাত ১০টা থেকে আবার সকাল ছয়টা পর্যন্ত পোষায় না যাত্রী পাওয়া যায় না বলে।

তাহলে তাঁদের কখন পোষায়, সেটা কি কেউ বলতে পারবেন?

মতিঝিল থেকে কল্যাণপুর পদচারী–সেতু পৌঁছালাম ১ ঘণ্টা ২৪ মিনিটে। এর মধ্য পাক্কা ৪৬ মিনিট জ্যামে বসে থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশার মিটারে ভাড়া দেখাল ১৮৬ টাকা। অথচ ২১৪ টাকা বেশি দিয়ে গন্তব্য যেতে হলো। এই বাড়তি টাকা কেন আমাদের গুনতে হবে? আর যাঁরা নিয়মিত এই অটোরিকশায় যাতায়াত করেন, তাঁদের অবস্থা একবার চিন্তা করলেই বুঝতে পারি না, কী হওয়া উচিত। যাঁরা নিয়মিত সিএনজিচালিত অটোরিকশার চড়েন, মাস শেষে তাঁদের পকেট থেকে কতটা টাকা খসে।

পুলিশ, প্রশাসন, আইন—কোনো কিছুরই তাঁরা তোয়াক্কা করেন না। তাহলে কেন বলব না যে সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালকেরাই হলেন এ শহরে রাস্তার আসল ‘বাহুবলী’।

আমাদের মতো যাঁরা দিন শেষে টাটকা শাকসবজি পাওয়া দূরে থাক, কোনোভাবে জীবন চালিয়ে নেওয়ার জন্য যারা বাজার ঢুকি, তারাই জানি এ বাড়তি টাকা দেওয়ার যন্ত্রণা কতখানি। বোধ করি এই যন্ত্রণাকাতর যাত্রীর সংখ্যাই বেশি, যাঁদের উপায়ান্ত নেই বলেই অটোরিকশায় উঠতে হয়।

আমাদের মতো মানুষের কথা চিন্তা করেই প্রশাসনের উচিত এসব অটোরিকশাচালকের ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া। অটোরিকশাচালকদের বুঝিয়ে দেওয়া উচিত যে একটি দেশের আইনই হলো আসল বাহুবলী, যা সবার জন্য সমান।

*সাদিক করিম, আর কে মিশন রোড, টিকাটুলী, ঢাকা।